মুখ্যমন্ত্রী সাঙ্গপাঙ্গ পরিবৃত হয়ে লণ্ডনে দৌড়চ্ছেন বা হাঁটা আর দৌড়নোর মাঝামাঝি কিছু একটা করছেন দেখে হাসাহাসি করার কোনো প্রয়োজন বোধ করছি না। এমনিতে তিনি বেশ জোরে অনেকটা হাঁটতে পারেন, সেটা অস্বীকার করারও কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি ইংল্যান্ডে কোথাও আমন্ত্রিত হয়ে বক্তৃতা করতে গেছেন বলে রেগে যাবার বা আপত্তি করার কোনো কারণ দেখছি না। তিনি যখন বিলেতে গিয়ে ঝালমুড়ি খেতে চেয়েছিলেন, খুশিই হয়েছিলাম। জীবনে যে কয়েকটা ভালো কাজ করেছেন, তার মধ্যে একটা। মুখ্যমন্ত্রীর ছড়া আজগুবি কিনা, ছবিগুলো পাতে দেবার যোগ্য কিনা, গান সুরেলা কিনা, তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। তাঁর বা মোদিবাবুর ইংরেজি উচ্চারণ নিয়ে কোনোদিন হাসাহাসি করিনি। জাপানিদের, পূর্ব ইউরোপীয়দের ইংরেজি উচ্চারণ শুনেছেন? ইংল্যান্ডের অশিক্ষিতরাও ইংরেজি বলে এবং তাতেই প্রমাণ হয় যে ইংরেজি বলতে পারাটা শিক্ষার মাপকাঠি নয়। ব্রিটিশরা আমাদের প্রভু নয় আর। শুদ্ধ ইংরেজি উচ্চারণ কারো করতে ইচ্ছে হলে করবেন, না ইচ্ছে হলে করবেন না৷ ইংরেজিওয়ালাদের প্রয়োজন থাকলে বুঝে নেবে আমাদের দেহাতি ইংরেজি। মুখ্যমন্ত্রীর অসামান্য হিন্দি নিয়েও আমার আপত্তি নেই। এমনিতেই বিশুদ্ধ বাঙলা উচ্চারণে হিন্দি বলে হিন্দি হার্টল্যান্ডে দাপিয়ে বেড়ানোর জন্য প্রয়াত বাপ্পী লাহিড়ী আর প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বিশেষ শ্রদ্ধা করি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরেক কাঠি ওপরে। হিন্দির ভাষিক জমিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেন রীতিমতো। বেশ করেন। তাঁর সঙ্গে হিন্দি ভাষায় কথোপকথন এড়িয়ে যাবার তাগিদে অনেক হিন্দিভাষী হয়ত বাঙলা শিখবেন, যেটা গুচ্ছের বাঙলা ভাষাপ্রেমী অ্যাক্টিভিস্টের বহু আন্দোলনের দ্বারাও অর্জিত হবে না।
এর কোনোটা নিয়েই আমার সমস্যা নেই। মুখ্যমন্ত্রীর শাড়ির রঙ, হাওয়াই চটি, এসব নিয়ে ফালতু কথা খরচ করার প্রবৃত্তি হয় না (যদিও ভাট বকতে আমি খুবই ভালোবাসি)। গায়ক, চিত্রকর, কবি, ভাষাবিদ হিসেবে তিনি যা ইচ্ছে করুন। অন্য সব মানুষের মতো মতো তাঁরও ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকে আমি সম্মান করি।
আমার চিন্তা একটিমাত্র জায়গায়। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে, রাজ্য প্রশাসনের মাথা হিসেবে তিনি আমাদের যা দিচ্ছেন, সেটা আছোলা বাঁশ কিনা, সেটাই একমাত্র বিবেচ্য। শিক্ষা, স্বাস্থ্য যে আধমরা হয়ে গেল, তার কী হবে? চাকরি-বাকরি হবে? সারা জীবনের মাইনে প্রথমেই ঘুষ হিসেবে নেতাদের দিয়ে দিতে হবে? তারপর শুধু চুরির পয়সায় পেটের খিদে মেটাতে বাধ্য থাকবে সবাই? ক্রমাগত অপরাধীদের নিরাপত্তা বিধান আর সাধারণ মানুষকে ফাঁসানোর দায়িত্ব পালন করতে করতে পুলিশ যে নিজের কাজই ভুলে যাবে, সেই কথাটা মাথায় আছে? এবার কি অভয়াকাণ্ডের বিচার হবে? নাকি বিরাট কোহুলিকে ছুঁয়ে দেওয়া ভক্ত তরুণটিকে সাতদিনের মধ্যে ফাঁসি দিয়ে আইন-শৃঙ্খলার আরেকটা মাইলফলক স্থাপন করাই লক্ষ্য?