দীর্ঘ এক সপ্তাহ গৃহবন্দী থাকার পর অবশেষে যখন খবর এলো, উহান থেকে আমাদের দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, মনে হয়েছিলো ‘বসন্ত এসে গেছে।’ আমাদের ইউনিভার্সিটিতে আমরা তিন জন ভারতীয় ছিলাম সেই সময়। আমি পশ্চিমবঙ্গীয়, বাকি দু’জন দক্ষিণ ভারতীয়। ওদের মধ্যে একজন ফিরবেনা জানিয়েছে। মেয়েটির রানিং নোজ। সম্ভাব্য রোগের এও নাকি এক সিম্পটম। সংক্রমণের ভয়ে মেয়েটি চীনেই নিজেকে অন্তরীণ রাখবে ঠিক করেছে, বাড়ির চূড়ান্ত অমত থাকা সত্ত্বেও। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হল আমরা দু’জনই দেশে ফিরবো আমাদের ক্যাম্পাস থেকে। তিরিশে জানুয়ারি রাত্রে এম্ব্যাসি থেকে আমাদের জানানো হয়, আগামীকাল সকাল এগারোটার পর যেকোনো সময়ে আমাদের বাসে করে এয়ারপোর্টে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই মত আমরা দুজনেই প্রস্তুতি নিয়েছি। দুপুর পৌনে বারোটা নাগাদ খবর পাই, বাস ইউনিভার্সিটি গেট এ আসছে। আমাদের ফ্ল্যাট থেকে গেট অব্দি হেঁটে যেতে মিনিট পনেরো সময় লাগে। লাগেজ নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বেরোলাম আমি আর গঙ্গারাম (আমার দক্ষিণ ভারতীয় বন্ধু) । একটা কালো বিড়াল হেলতে দুলতে রাস্তা পেরিয়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গারাম ভয়বিহ্বল কণ্ঠে বলে উঠলো “ও মাই গড!!” আমি বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে ওকে আস্বস্ত করলাম। ও সেদিকে খুব একটা ভ্রুক্ষেপ করেছে বলে মনে হলো না। বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছনোর রাস্তাতেই খবর পেলাম, বাস আপাতত আসছেনা। দেরি হবে। গঙ্গারামের মুখে তখন ফাঁড়া কেটে যাওয়ার এক প্রশান্তিময় শান্তি বিরাজ করছে। যে রাস্তা বিড়াল কেটে যায়, সেই যাত্রা যে সফল হল না, সেই প্রাপ্তিটুকুই ওর থেকে খানিক দুশ্চিন্তামগ্ন সময় চুরি করে নিলো।
অবশেষে আমরা যখন এয়ারপোর্টগামী বাসে উঠলাম তখন সন্ধে সাড়ে ছ’টা। এয়ারপোর্টে যখন পৌঁছলাম, দেখলাম আমাদের সাথেই বাংলাদেশ, জাপান এবং আরো দু একটা দেশের লোকও সেদিন চীন ছাড়ছেন। প্রত্যেকের জ্বর আছে কিনা পরীক্ষা করে তবে আমরা ভেতরে ঢোকার অনুমতি পাচ্ছিলাম। অফিশিয়াল ফর্মালিটিজ সেরে যখন টাইম শিডিউল বোর্ডে চোখ পড়লো, দেখলাম দিল্লির ফ্লাইট ছাড়বে রাত্রি দুটোয়।