কয়েকদিন আগে অভয়া মঞ্চে জোর শোরগোল অকাদেমীতে একটা নাটক চলাকালীন একজন দর্শকের প্রতিক্রিয়ার প্রতিবাদ স্বরূপ স্থির হল, আমরা ছয় তারিখ সেই অকাদেমীতেই স্বাহা নাটকটি দেখতে যাব। আমার সঙ্গে নাটকের অনেককাল হয়েছে, বিচ্ছেদ হয়েছে। তাই আমিও ভাবলাম, এই সুযোগে পুরাতন প্রেমকে একবার দেখে আসা যাবে। মন্দ কী!?
স্বাহা নাটকের গল্প আমি বলব না। কারণ একজন লেখক অনেক খেটে গল্প লেখেন। তারপর তা দৃশ্যায়িত করা হয়। তবে নিবিড়ভাবে দেখতে দেখতে কেন জানি শরৎচন্দ্রর ষোড়শী উপন্যাস ও প্রবন্ধ নারীর মূল্যের কথা মনে পড়ছিল।
যাহোক, সবাই মিলে টানটান উত্তেজনায় নাটক দেখলাম, আমরা। আর সেই সঙ্গে, আবার উপলব্ধি করলাম, এখনও নারীরা ধর্ম নামক ক্ষেতের হাল জোতার গরু, যাকে সমাজের পুরুষ নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে গেল, বা এখনও করে যাচ্ছে।
এই নাটকের গল্প না বললেও, কিছু ধরতাই দিচ্ছি, বক্তব্যের সমর্থনে। যেমন মেয়ের চুলে জটা তৈরী করে, দেবী বানাবার চেষ্টা, শুধুমাত্র নিজের কায়েমী স্বার্থের জন্য, আবার প্রেমিক আদরে ভুলিয়ে রাখা দিনগুলো ভুলে, দেবী বানিয়ে মা ডাকছে। ভালবাসা রক্ষায় যে প্রতিবাদের দরকার পড়ে, তাতে সে অক্ষম। আবার দেখা যায়, সব জেনে বুঝেও সব সরকারী উচ্চ স্তরের আমলা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এখানে আবার প্রমাণিত হয়েছে, নারীই নারীর একমাত্র বন্ধু। সর্বস্তরে।
সেই সঙ্গে দেখা যায়, এই মন্দিরের পুজোর কেন্দ্রবিন্দু শুধু টাকা, মানে অর্থ। কে কত টাকা দিয়ে কাকে সেটিং করছেন। তার উপরেই সব নির্ভর করছে। অবশ্য নিজেদের জ্ঞান কম নেই, তারাও জানেন কত সালে কোন আবিষ্কারের ফলে, কোনটা ধর্মে পরের দিকে প্রোথিত করা হয়েছে। কিন্তু নিজের সুবিধার্থে কিছুই জানেন না। এই নাটকে খুব সুন্দর ভাবে, মাথামোটা দাম্ভিক ধার্মিকদেরও সুচারু ভাবে দেখানো হয়েছে।
সবমিলিয়ে বলতেই হবে, বেশ মনোগ্ৰাহী একটি নারীকেন্দ্রিক নাটক।
নাটক শেষ হলে, অভিনেত্রী সীমা মুখোপাধ্যায় জানালেন, যে আগের দিন মানে পনেরো তারিখে একজন দর্শক সনাতনী ধর্মের জয়গান গেয়ে টিকিট ছিঁড়ে নাটকের মাঝেই প্রেক্ষাগৃহ ত্যাগ করেছেন। এই শহরের বুকে একাডেমি অফ ফাইন আর্টসের এই প্রেক্ষাগৃহেই। তাই অভয়া মঞ্চের তরফ থেকে ডঃ পুণ্যব্রত গুণ বক্তব্য রাখলেন। এবং নাট্যকর্মীদের ডাক্তারদিদির বিচার চেয়ে অভয়া মঞ্চের সঙ্গে পথে নামতে অনুরোধ জানিয়ে, বক্তৃতা শেষ করলেন। তারপর সীমাদির আহ্বানে প্রেক্ষাগৃহ কাঁপিয়ে আমরা বিচার চাই, ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিলাম।