১৯৭১ সাল। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এর মিলিটারি বন্দীশালায় আটক বন্দীরা হঠাৎ তাদের রুদ্ধদ্বার কুঠুরি গুলো থেকে শুনতে পেলেন গানের আওয়াজ। খালি গলায় গান নয়, রীতিমত যন্ত্র অনুষঙ্গে। গলার আওয়াজ শুনে অনেকেই ধরে ফেললেন যে গায়ক আর কেউ নয়, তাদের প্রিয় তরুণ গায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি এর ছাত্র ইকবাল আহমেদ। তারই গান হচ্ছে স্পিকারে, লাইভ।
এই ঘটনার আগে ইকবাল আহমেদ চার মাস ধরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দী। রোজ সইতে হচ্ছে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন ( স্বাধীনতা লাভের পর দেশ ও বিদেশে বহু চিকিৎসা অস্ত্রোপচারের পরেও কোনো দিন আর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন নি ইকবাল)। সেই অবস্থায় ওপর মহল থেকে আদেশ আসে যে ইকবালের কীর্তি কলাপ ডকুমেন্ট করতে হবে। পাক সর্বোচ্চ কর্তারা জানতে চান যে পূর্ব পাকিস্থানের মুক্তিযুদ্ধে গান কি ভাবে কাজ করছে আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে। তাই জেলের মধ্যে ডকুমেন্টেশন সেন্টারে ডেকে নিয়ে গিয়ে ওই গানের আয়োজন যেগুলো রেকর্ড করে ওপর মহলে পাঠাতে হবে। অত্যাচারে দীর্ণ শরীর চলছে না ইকবালের তবুও গাইতে হবেই নইলে হয় বুটের ঠোক্কর অথবা রাইফেলের বাট এর বাড়ি। সনজীদা খাতুনের প্রিয় ছাত্র, ছায়ানট এর সদস্য ইকবাল আহমেদ গাইলেন জীবনের শেষ গান মনে করে। বন্দীশালা ভরে উঠলো তাঁর জাদুকণ্ঠে সুরের মূর্ছনায়, “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।”
কয়েকদিন আগে ইসলামী মৌলবাদীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিল সাংস্কৃতিক সংস্থা ছায়ানট। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বহু বাদ্যযন্ত্র, ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের ছবি। ওই তৌহিদী জনতা জানে না রবীন্দ্রনাথের গান আসলে কতটা শক্তিশালী, তাদের প্রতিপক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের কাছে রবি ঠাকুরের গান কতবড় হাতিয়ার। কারণ তারা নিজের দেশের ইতিহাস পড়েনি, তাই বোঝনি। তাদের পৃষ্ঠপোষক ৭১ এর সেই ঘাতক খানসেনা দের নেতৃত্ব কিন্তু বুঝেছিল আর বুখেছিল বলেই গায়ক ইকবাল এর ওপর সেদিন চলেছিল অকথ্য অত্যাচার।
মৌলবাদীরা আজ আরেকবার বাংলাদেশের রাজপথে চোখ রাখুক, কান পেতে শুনে নিক হাজার লক্ষ কন্ঠে ইকবালের গানের প্রতিধ্বনি। প্রতিবাদ। ভয়ের কাছে নতি স্বীকার না করে ছায়ানট এর শিল্পীরা রাস্তায় এসে গাইছেন রবি ঠাকুরের গান। মৌলবাদ এর বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে শুব্বুদ্ধি সম্পন্ন বাংলাদেশীদের এই কাতারের সবচেয়ে বড় অস্ত্র তাঁর গান। হতে পরে আমাদের আর আপনাদের মধ্যে কাঁটাতার এর ব্যবধান আছে, আছে সশস্ত্র সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বুটের দাপাদাপি। তবুও আমাদের মাতৃভাষা তো এক। তাই আপনাদের পড়শী দেশ থেকে আপনাদের, এই নিরস্ত্র সাহসী যোদ্ধাদের সেলাম। ঘুরে দাঁড়নোর আশা জাগিয়েও তোলার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা নেবেন ছায়ানট সহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মীরা।










অসম্ভব ভালো হয়েছে লেখাটা। “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি “!
ঠিক, একদম্ ঠিক।রবি ঠাকুরের গান খুব খুব শক্তিশালী।এর ওজন যে বোঝে সে বোঝে
যে ,রবীন্দ্রনাথের গান কত বড়ো হাতিয়ার।আর যে বোঝে না সে ভয় পায় আর গুঁড়িয়ে দিতে চায় এতো বড়ো মহা মানব কে। মুগ্ধতা। উষ্ণীশ
নিলাম।🙏💕🙏