বিকেল সাড়ে তিনটে। উপুড় হয়ে শুয়ে একটা ওয়েব সিরিজ দেখছিলাম। মেয়ে ডাকলো, — বাবা তোমাকে ডাকছে।
—আমাকে!! আমাকে আবার কে ডাকবে? দুনিয়াশুদ্ধু জানে আমরা কোয়ারেন্টাইনে। মাস্কের উপরও নাক টিপে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের ভাড়াবাড়ির সামনেটা পেরিয়ে যায় লোকজন। কোনও সেলসম্যান হতে পারে। খানিকটা বিরক্তি নিয়ে খালি গায়ে বাইরে এলাম। দেখি গেটের ওপারে একটা বাইক দাঁড়িয়ে। হেলমেট পরা। —-কাকে চাই? কত নম্বরে যাবেন?
—আরে আসুন না মশাই। আপনাকেই চাই। বলতে বলতে হেলমেট খুললেন বাইক চালক।
মনোজ!!!! আমার সিটি কলেজের বন্ধু। —–ফেসবুকে তোর মেয়ের ছবি দেখলাম। দেখা করতে চলে এলাম। এই নে একটু চকলেট আর ফ্রুট জুস। এই বুড়ি শোন। কেমন আছিস?
—আরে দাঁড়া দাঁড়া চাবি খুলি। ও আচ্ছা আচ্ছা। তাইতো। ঠিক আছে তুই বাইরেই দাঁড়া। মাম মাম এদিকে এসো। এদিকে এসো। তোমার মনোজ কাকু। আমরা একসঙ্গে কলেজে পড়তাম। মোমো বাইরে এসো। দেখো। এ হচ্ছে মনোজ। আমার বন্ধু। আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।
—তুই এলি কি করে মনোজ? কুড়ি বছর আগে একবার এসেছিলি। উত্তর কলকাতার এই এঁদো গলি তোর মনে ছিল?
—পুলিশ চাইলে সব পারে গুরু। শহরের যেকোনোও প্রান্তে আমরা পৌঁছে যেতে পারি। যে কোন সময়।
—ও হ্যাঁ তাইতো তুই তো কলকাতা পুলিশে আছিস। তা কি করলি? গিরিশ পার্ক থানায় জিজ্ঞেস করলি নিশ্চয়ই? উত্তরে পুলিশ সুলভ রহস্যময় হাসি। মেয়ের সঙ্গে, মোমোর সঙ্গে আরও কিছুক্ষণ কাটিয়ে বাইকে স্টার্ট দিল মনোজ।
আমাদের পাড়ার বিমলদা, গদাদার বৌদি, পার্থদা, প্রসেনজিৎদা, পাল্লু, সনু-সহ অনেকেই গেটের বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে গল্প করে। খোঁজ নেয়। তারা জানে, দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে কোন অসুবিধা নেই। সবচেয়ে বৈপ্লবিক কাজ করছে কাল্টুদা। প্রদীপ শ্রীমানি। আমাদের প্রত্যেক দিনের দুধ আর বাজার ওই এনে দেয়। তবে শুরুটা করেছিলেন আমার বস। সৃঞ্জয় বোস। স্বাস্থ্য ভবন থেকে যেদিন ফোনটা এলো। প্রথম ফোনটা করেছিলাম টুম্পাইদাকে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বিরাট এক জাম্বো ব্যাগে বাপ্পাদার হাত দিয়ে অন্তত ১৫ দিনের সবজি চলে এল। কি না ছিল তাতে। আলু, পিঁয়াজ, দুধ, ডিম, পটল, ঝিঙে, কাঁচালঙ্কা, টমেটো, পাতিলেবু, স্যানিটাইজার, মাস্ক। ওরে ব্বাবা এত! আমার মত চুনোপুটি এক সাধারণ কর্মীর জন্য বস এত কিছু পাঠিয়েছে!
অবিশ্বাস্য! ভালোবাসায় এবং শ্রদ্ধায় আমার আর মোমোর চোখের কোণে আনন্দের জল।
#চলবে