আজবগড়ের রাজার ছিলো নামকরনের বাতিক,
কবের থেকে ধরলো এ রোগ, জানিনা ভাই তা ঠিক।
ঘুমের মাঝে নামের পোকা মগজে কামড়াতো,
কার নাম যে কখন বদল বোঝাই যেতো না তো।
আজকে বদল রাস্তা অমুক, কালকে তমুক গ্রামটি,
গুগল করে জানতে হতো কখন কিসের নাম কী।
হোক না সে নাম প্রচলিত, যতই শতক পুরোনো
রাজামশাইয়ের সখ ধরে তার নটেগাছ পুরো মুড়োনো,
দুর্জনে কয় নাম বদলায়, উন্নতি থাকে থমকে,
গুঞ্জন সেটা, প্রকাশ্যে বলে কে ডাকবে বলো যমকে,
গররাজী হলে রাজার সঙ্গে, বিরোধী বলতো তাকে,
রাজার হুকুমে সে নাম বদলে আজ দ্রোহী বলে ডাকে,
কটাদিন আগে দল বেঁধে কিছু কৃষক বসলো ধর্ণায়
রাজামশাইয়ের সহ্য হয়নি সেই বিভীষণ অন্যায়,
হুকুম দিলেন আমার বিরোধী যারা হরতালে বর্বর,
আজ থেকে তার নাম বদলিয়ে হবে ‘বিদেশীর চর।’
এই তো সেদিন, দেখতে পেয়ে একটা খেলার মাঠকে,
রথ থামিয়ে রাজামশাই পথেই গেলেন আটকে।
‘কী নাম এই মাঠের ও ভাই’, সওয়াল শুনে তাঁর,
দৌড়ে এলো কাজ থামিয়ে যতেক চৌকিদার।
হাত কচলে বললো ‘হুজুর, ওই যে দেখুন মূর্তি,
বীর পালোয়ান দেশের হয়ে লড়তে যেতেন কুস্তি।
বিক্রমে তার কাঁপতো ভয়ে সব রেসলার ইংরেজ,
রিংয়ের বাইরে দিতেন ফেলে, এমনি ছিলো তার তেজ।
আয়রনম্যান বলতো সবাই , সেই নামে এই মাঠটি’।
বলেন রাজা, ‘তার পরে তো দশক গেছে আটটি।
ভজলে ও নাম জুটবে এখন সেরেফ আটটি কদলী
আধুনিক কোনো নায়কের নামে জরুরি এটার বদলই।’
ইচ্ছে শুনেই পাত্র লাফান, নাচেন সেনাপতি
তাঁদের তুমুল উৎসাহ এই নামকরণের প্রতি।
মন্ত্রীমশাই সমান খুশী , চুমড়ে দাড়ি তার,
বলেন ‘হুজুর আপনার এই চিন্তা চমৎকার।
বদলে দিলেন শহর, সেতু সড়ক হাসপাতাল,
এই মাঠটার নামবদলেও ফিরবে দেশের হাল,
আর্জি আছে , হে মহারাজ, করছি নিবেদন,
রাজা হয়েও ফকিরমাফিক করেন আচরণ,
এই মাঠটা বদলে না হয় আপনারই নাম রাখি
রাঙা হয়ে বলেন রাজা ‘যাহ , সেটা হয় নাকি?’
হতেই হবে , বললো সবাই, সেটাই দাবী দেশে
রাজা উদাস হয়ে বলেন , ‘দিচ্ছো ভালবেসে,
না করি আর কেমন করে, আহা বালাই ষাট,
বদল তবে কাল থেকে হোক নাহয় পত্রপাঠ’
সেই থেকে সেই মাঠ হয়েছে আজবরাজার মাঠ।