স্বাস্থ্যের সত্যি মিথ্যে ১৪
নিয়মিত ভিটামিন সি ট্যাবলেট খেলে কী সর্দি কাশি কম হয়? সাধারণ সর্দি কাশির চিকিৎসায় কি ভিটামিন সি ব্যবহার করা উচিৎ?
উত্তরঃ সর্দি কাশি হলে অনেকেই ভিটামিন সি ট্যাবলেট খান। ভিটামিন সি চুষে খাওয়ার ট্যাবলেট সর্দি কাশির চিকিৎসার জন্য প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার হয়। করোনা মহামারীর সময়ে করোনার হাত থেকে বাঁচার জন্য বহু মানুষ ভিটামিন সি ট্যাবলেট খেতেন।
ভিটামিন সি- সাধারণ সর্দি কাশি ও ফ্লুতে চিকিৎসার কাজে ব্যবহার শুরু হয় ১৯৭০ সাল থেকে। সাধারণ মানুষ তো বটেই বহু চিকিৎসকও এখনো সর্দি কাশি জ্বরে ভিটামিন সি ব্যবহার করেন।
কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন কেস স্টাডিতে দেখা গেছে ভিটামিন সির সর্দি কাশি প্রতিরোধ বা চিকিৎসায় কোনো ভূমিকা নেই।
ভিটামিন সি কী?
উত্তরঃ ভিটামিন সি বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড জলে দ্রবণীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। এটি কোলাজেন টিসু তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় এবং আমাদের হাড়, মাংস পেশি, রক্তনালী ইত্যাদির গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি পরিপাক তন্ত্র থেকে আয়রণ শোষণেও সাহায্য করে। এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়।
এটি উচ্চ তাপে নষ্ট হয়ে যায়। মানব দেহে এর উৎস হলো বিভিন্ন রকম ফল, যেমন লেবু জাতীয় ফল, আমলকি, পেয়ারা ইত্যাদি। কাঁচা লঙ্কাতেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।
সর্দি কাশিতে ভূমিকাঃ
সাধারণ সর্দি-কাশি প্রতিরোধে ভিটামিন সি কোনো কাজ করে কি না, তা নিয়ে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বিতর্ক চলছে। ভিটামিন সি–এর ব্যবহার নিয়ে ৭২টি গবেষণার ফলাফল নতুন করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০টি গবেষণায় ১১ হাজার রোগীর সর্দি-কাশি প্রতিরোধে ভিটামিন সি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি। মাত্র ৩ শতাংশ ক্ষেত্রে কিছু উপকার হয়েছে।
৩১টি গবেষণায় ১০ হাজার রোগীর সর্দি-কাশির স্থায়িত্বকাল নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। দেখা যায়, রোগের সময়কাল কমানোর ক্ষেত্রেও ভিটামিন সি–এর তেমন কোনো ভূমিকা নেই।
সবশেষে বিচার করা হয়েছে উপসর্গের তীব্রতা কমানোর ক্ষেত্রে ভিটামিন সি–এর ভূমিকার। সেখানেও কোনো ভালো ফল পাওয়া যায়নি। দেখা যাচ্ছে, শিশুদের দৈনিক ১ থেকে ২ গ্রাম ভিটামিন সি খাওয়ালে তাদের সর্দি-কাশির তীব্রতা কিছুটা কমে; কিন্তু শিশুদের এত উচ্চমাত্রায় ভিটামিন খাওয়ানো কতটা নিরাপদ, সে প্রশ্নও রয়ে যায়।
তাহলে মোদ্দা কথা কী দাঁড়াল? উপসর্গ কমানোর জন্য কিছু ওষুধ ছাড়া সর্দি-কাশির আসলে তেমন জুতসই ওষুধও নেই। পরিমাণ মতো জল পান করুন, পুষ্টিকর খাবার খান ও বিশ্রাম নিন। এ ছাড়া পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে চেষ্টা করুন। ধৈর্য ধরে থাকলে সর্দি কাশি এমনিতেই সারে।












