ন্যাশনাল হাইওয়ে দিয়ে স্টেট বাসটা স্পিডে বেরিয়ে যাচ্ছে, চারপাশে ধানের ক্ষেত,হালকা কুয়াশা। কোলকাতাতে শীত পড়ে নি এখনও সেভাবে কিন্তু একটু এইদিকে এলে বর্ধমান থেকেই হালকা কুয়াশা। জায়গায় জায়গায় মাঠে ছোট ছোট আগুন,মাফলার গলায় একটা ছোট ব্যাগ সাইকেলে ঝুলিয়ে কেউ একটা যাচ্ছে। সদ্য খোলা মোমোর দোকানে ভীড়,চায়ের দোকানে আড্ডা। চায়ের দোকানও এখন দুধরনের। একটাতে কাঁচের ছোট গ্লাসে চা পাওয়া যায় আর অন্য একটাকে ক্যাফে বলে, যার বাইরে প্রচুর বাইক দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানে মোটা মাটির ভাঁড়ে চা। সন্ধ্যেতে রাস্তার হলুদ আলোতে চিকচিক করছে কালো পিচের রাস্তা। সব ছোট শহরেই মনে হয় এভাবেই শীত পড়ে। শীত কালের সন্ধ্যের মত। ঝুপ করে। বোঝা যায় না। শীত পড়ছে বাঁকুড়ায়। বছরের অন্যান্য দিন রাত ১০-১১ টা অব্ধি ভীড় থাকলেও এখন ৮-৯ টার দিকেই শান্ত পথ ঘাট। সবাই নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত। কিন্তু ঠিক এই কদিন আগে এই আমরাই যারা ছোট শহরে থেকেও পাড়ার লোকজনকে চিনি না তারা সবাই একসাথে রাত ১২ টাতে ভীড় করে হাঁটছিলাম, কথা বলছিলাম চেনা,অচেনা সবার সাথে,স্লোগান দিচ্ছিলাম। নেটিজেন ছেড়ে আমরা সত্যিই সিটিজেন হয়ে উঠেছিলাম এই কদিন আগেই। রোজকার ধামাধরা জীবন ছেড়ে হঠাৎ করে ওই ক্যাফে আর কাঁচের গ্লাসের চায়ের দোকানে একই আলোচনা হচ্ছিলো। অভয়া। এখন নাকি অনেকেই ফেসবুকও করে না, সবাই এখন ইন্সটাগ্রামে থাকে। সেই গ্রামে আঙুল তুললেই মেসির গোল থেকে দেবের গান, অফুরান রিল। কয়েক মিলি সেকেন্ডের অ্যাটেনশন স্প্যান আমাদের নাকি। অথচ এই আমরাই প্রায় ৭০-৮০ দিন একই কথা বলে গেছি সমানে। অভয়ার কথা। ওই ৭০-৮০ দিন আমরা যেন হঠাৎ করে আমাদের ছোট ছোট চারপাশটাকে নতুন করে গড়ে তোলার ইচ্ছে পেয়ে গিয়েছিলাম; আমরা প্রত্যেকে। এটাই বা কম কী!
১০০ দিন হতে এলো,কী পেলাম আমরা জানি না। অভয়ার জন্যে আমরা কতটা করতে পারলাম তাও জানি না। তবুও আমাদের প্রত্যেকের মনে অভয়ার ঘটনা যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল তার কিছু শিখা বুকে জ্বলতে থাকুক। শীত পড়ছে এখানে,আগুন চাই একটু, আমাদের সবার একটু আগুন চাই!