আজকাল চিকিৎসকরা হামেশাই রক্তের লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করেন। এই লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষার মধ্যে মূলত যে গুলি দেখা হয় সেগুলি হল; টোটাল কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন(LDL), হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (HDL) এবং ভেরি লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন(VLDL)।
খারাপ কোলেস্টেরল ও ভালো কোলেস্টেরলঃ
এর মধ্যে LDL ও ট্রাইগ্লিসারাইড খারাপ কোলেস্টেরল নামে পরিচিত। কারণ রক্তে এদের মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন ধমনীর দেওয়ালে কোলেস্টেরল জমা হয়, যাকে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বলে। এর ফলে ধমনী সরু হয়ে যায় এবং তার মধ্যে রক্ত চলাচল হ্রাস পায়। হৃদপিণ্ডের ধমনীকে করোনারি আর্টারি বলে। এই করোনারি আর্টারির অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলে হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমে যায়। যা আমাদের কাছে হার্টের ইশ্চেমিয়া নামে বেশি পরিচিত। হঠাৎ করে এই অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস প্লাগ ফেটে গিয়ে সম্পূর্ণ করোনারি আর্টারি ব্লক হয়ে যেতে পারে। যার ফলে হৃদপিণ্ডের কোনো অংশে রক্তচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একে বলে হার্ট অ্যাটাক। সময়মতো চিকিৎসা না হলে এর থেকে মৃত্যুও হতে পারে।
HDL কোলেস্টেরল কে ভালো কোলেস্টেরল বলা হয়। কারণ এটি দেহের বিভিন্ন স্থান থেকে কোলেস্টেরল কে লিভারে ফিরিয়ে আনে এবং রক্তে LDL এর পরিমাণ কমায়। রক্তে HDL এর মাত্রা বেশি থাকলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে।
ডায়াবেটিসের সাথে ডিসলিপিডেমিয়ার কি সম্পর্কঃ
ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে কোলেস্টেরলের গণ্ডগোল সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক বেশি হয়। এদের মূলত ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকে এবং HDL কম থাকে। ডায়াবেটিসের LDL কোলেস্টেরলের মাত্রার উপর কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে LDL অল্প মাত্রাতেই অনেক বেশি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অ্যামেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের গাইডলাইনঃ
১. LDL কোলেস্টেরল কমানোঃ <১০০ মিগ্রা/ডেসিলি
হৃদপিণ্ডের সমস্যা থাকলে < ৭০ মিগ্রা/ডেসিলি
২. ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোঃ < ১৫০ মিগ্রা/ডেসিলি
৩. HDL কোলেস্টেরল বাড়ানোঃ > ৫০ মিগ্রা/ডেসিলি মহিলাদের ক্ষেত্রে
> ৪০ মিগ্রা/ডেসিলি পুরুষদের ক্ষেত্রে
চিকিৎসাঃ
১) নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটা। প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট।
২) ধূমপান পরিত্যাগ।
৩) খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন-কম ট্রান্স ফ্যাট খাওয়া, অর্থাৎ খাসির মাংস, ভাজাভুজি বা ফাস্ট ফুড কম খাওয়া।
৪) বিভিন্ন খাবার, যেমন-অলিভ অয়েল, মটরশুঁটি, বরবটি ও শিম জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া।
৫) শস্য- গম, ভূট্টা, ছোলা ও বার্লি ইত্যাদি খাওয়া।
৬) বেশী ফাইবার যুক্ত ফল যেমন- আপেল, নাশপাতি, শসা ইত্যাদি খাওয়া।
৭) মাছ বিশেষত সামুদ্রিক মাছ খাওয়া। এগুলিতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে থাকে।
৮) বিভিন্ন ধরণের বাদাম, রসুন ইত্যাদি খারাপ কোলেস্টেরল কমায়।
৯) ওষুধ- মূলত স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ।