১.
নবজাতকের জন্মের পর পরিষ্কার লিনেন কাপড় দিয়ে বাচ্চার গায়ে লেগে থাকা রক্ত, বাচ্চার কালো পায়খানা, মায়ের অ্যামনিওটিক তরল (বাচ্চা মায়ের জরায়ুতে যে জলে ভেসে থাকে) ইত্যাদি মুছে দিতে হবে।
২.
ত্বকে লেগে থাকা মোমের মত জিনিস জোর করে তোলার দরকার নেই। এগুলো পরিবেশের কম তাপমাত্রায় বাচ্চাকে ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
৩.
বাচ্চা পরিবেশের সাথে একটু সুস্থির অবস্থায় আসার পর হাল্কা গরম জলে আলতো করে মুছে দেওয়া যেতে পারে। এটি জন্মের দ্বিতীয় দিনে করলে ক্ষতি নেই।
৪.
হাল্কা করে তেল মাখানো যেতে পারে। বিশেষত কম ওজনের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারী। রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। স্বাভাবিক ওজনের বাচ্চার ক্ষেত্রেও লাভ বই ক্ষতি নেই।
৫.
সুগন্ধীবিহীন নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল মাখাতে পারেন। তবে সরষের তেল কখনোই নয়।
৬.
সব বাচ্চার রুটিনমাফিক ছত্রাকনাশক পাউডারের প্রয়োজন নেই। অপ্রয়োজনীয় পাউডার লোমকূপ বন্ধ করে দেয়। ঘামাচি হতে পারে। নাকে-মুখে ঢুকলেও ক্ষতি হতে পারে। বিশেষত বোরিক অ্যাসিড মিশ্রিত পাউডার একেবারেই দেবেন না।
৭.
নাভি পড়ে গেলে স্নান করানো শুরু করুন। প্রথম দিকে ২-৩ দিন ছাড়া করালে ক্ষতি নেই। হাল্কা গরম জলে স্নান করান। জলে বাড়তি কিছু মেশানোর দরকার নেই।
৮.
স্নানের জল পায়ের দিক থেকে দেওয়া শুরু করে মাথায় শেষে দিন। মাথা আগে মোছান। পুরো প্রক্রিয়া ৫ মিনিটের মধ্যে শেষ করুন। স্নানের জায়গায় সরাসরি বাইরের বাতাস না এলেই ভালো।
৯.
চামড়ার প্রদাহ কিংবা শুষ্কতা দেখা দিলে (বা রোধের জন্য) ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মতো এমোলিয়েন্ট জাতীয় লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
১০.
ন্যাপি (যথাসম্ভব) না পরানোর চেষ্টা করুন। দীর্ঘক্ষণ পেচ্ছাব-পায়খানার সংস্পর্শে থাকলে চামড়ায় র্যাশ হয়।
১১.
বিশেষত চামড়ার ভাঁজ পরিষ্কারের জন্য কম ক্ষারীয় সাবান বা সিন্ডেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
১২.
জন্মের পর চামড়ায় লালচে র্যাশ, ঘামাচি, মুখের ব্রণ, ছোট্ট পুঁজ ভর্তি গুটি (সংখ্যায় দশের কম) সাধারণত ভয়ের হয় না। এমনিতেই কিছুদিন বাদে চলে যায়।
১৩.
নাভিতে সংক্রমণ হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন। পেচ্ছাব-পায়খানা যাতে না লাগে নজর রাখুন। নাভিতে কিছু লাগাবেন না।
১৪.
চোখে (বা শরীরের কোথাও) কাজল, নাভিতে গোবর, সিঁদুর, তুলসীতলার মাটি, তাবিজ, মাদুলি, ঘুমসী কিচ্ছু দেবেন না।
১৫.
বাচ্চাকে সরাসরি রোদের তলায় রাখবেন না। হাত-পায়ের নখ, মাথার চুল পরিষ্কার রাখুন।
★★★কিছু ছোট্ট টিপস★★★
ক।
মনে রাখুন বাচ্চার চামড়া খুবই সংবেদনশীল। কাজেই এটা-সেটা না বুঝে মাখাবেন না। বাচ্চার ত্বকে যত কম কিছু লাগাবেন ততই ভালো।
খ।
অনেক বাড়িতে (মূলত বাড়ির বয়জ্যেষ্ঠদের পরামর্শে) তাবিজ-মাদুলি না পরালে সাংসারিক কলহ অবশ্যম্ভাবী। সেসব ক্ষেত্রে একটু বুদ্ধি করে অবস্থা সামাল দিতে হবে। তাবিজ-মাদুলি বাচ্চাকে না পরিয়ে বালিশের তলায় রেখে দিন। কাজল বাচ্চার গায়ে না দিয়ে রুমালে লাগিয়ে বাচ্চার পাশে রাখুন। নিজেকে এবং অন্যান্যদের বোঝান এসব দিয়ে ‘নজর’ আটকে গেলে সরকার হাসপাতালের পরিবর্তে তাবিজ-কাজলের কারখানা খুলতো।
গ।
‘উমুকের মা’, ‘তমুকের কাকা’র পরামর্শে বাজারচলতি বিউটি-প্রোডাক্ট মাখিয়ে বাচ্চার চামড়ার বারোটা বাজাবেন না। উপযুক্ত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গাছ-গাছড়ার রস ও অন্যান্য অজানা কিছু বাচ্চার গায়ে লাগাবেন না।
ঘ।
“সরষের তেল মাখালে বাচ্চা গরম থাকে, ঠান্ডা লাগে না।”.. ভুল ধারণা। বরং, সরষের তেল চামড়ায় র্যাশ ও প্রদাহ সৃষ্টি করে।
ঙ।
বাইরের কাউকে হাত না ধুয়ে বাচ্চাকে স্পর্শ করতে দেবেন না। বাড়ির মধ্যেও বাচ্চার দেখভালকারীর সংখ্যা যথাসম্ভব কম রাখুন।