আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশন আসাম, কেরালা, তামিলনাড়ু, পুদ্দুচেরী আর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছে। পশ্চিমবঙ্গে সেই পর্ব চলবে ২৭ শে মার্চ থেকে ২৮শে এপ্রিল অবধি মোট আট দফায়। ফল ঘোষণা ২ মে অর্থাৎ এখন থেকে দু মাস এই প্রক্রিয়া চলবে।
কোভিড অতিমারীর গ্রাস থেকে আমরা এখনও মুক্ত হতে পারিনি। এই সময়ে দেশের পাঁচটা রাজ্যে এই অতিমারীতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। আমেরিকা, ব্রিটেন সহ বহুদেশেই কোভিড ১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ ভয়ঙ্কর হয়েছে। স্প্যানিস ফ্লুতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল কিন্তু এই দ্বিতীয় তরঙ্গেই।
আমাদের পশ্চিমবঙ্গেও গত দু সপ্তাহ ধরে নতুন কেসের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের রাজ্যেও আছড়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।
আমাদের মনে রাখতে হবেঃ ১। সমীক্ষা অনুযায়ী জনসংখ্যা মাত্র এক চতুর্থাংশ থেকে এক তৃতীয়াংশের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। বাকী মানুষেরা এখনো কোভিড থেকে নিরাপদ নন।
২। ১০ কোটি রাজ্যবাসীর মধ্যে টীকা পেয়েছেন মাত্র ১০ লক্ষেরও কিছু কম জন আর পরীক্ষা হয়েছে ৮৫ লক্ষের কিছু কম মানুষের।
৩। ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির দাবী অনুযায়ী কোভিশিল্ড বা কো-ভ্যাক্সিন যেটাই দেওয়া হোক –একমাস অন্তর দুটি ডোজ নেবার পর আরও মাস খানেক বাদে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে। নির্বাচন কর্মীদের প্রথম ডোজ দেওয়া সবে শুরু হয়েছে। তাই তাদের প্রতিরোধ শক্তি গড়ে ওঠার আগেই তাদের কাজ করতে হবে।
৪। রাজনৈতিক কর্মী ও বিশাল সংখ্যক মানুষ যাঁরা ভোটের প্রচারে, প্রস্তুতিতে বা ভোটের দিনে ভোটের লাইনে, বুথের ভেতরে থাকবেন তাঁদের ঝুঁকি থাকবে সবচেয়ে বেশি।
তাই সকলের কাছে আমাদের করজোড়ে অনুরোধঃ
১। রাজনৈতিক দলগুলির মিছিলে, জমায়েতে এই দু মাস স্বাস্থ্যবিধি পালনের কথা ভুলে গেলে চলবে না।
২। মিছিল লম্বা হোক, যাতে অংশগ্রহণকারীরা অন্তত ৩ ফুট ছাড়া ছাড়া থাকবেন।
৩। মিটিং হোক বড় বড় মাঠে, দূরত্ববিধি মেনে চলুন। বড় মাঠ না পেলে খোলা জায়গায়।
৪। নির্বাচনী জমায়েতে এবং পোলিং বুথে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হোক। একটির বদলে দুটি মাস্ক পরে থাকুন সঠিকভাবে, থুতনিতে নামিয়ে, কানে ঝুলিয়ে নয়।
৫। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা ভোট চাওয়ার পাশাপাশি কোভিড প্রতিরোধ বিষয়ে প্রচার করুন। নিজেরা বিধি পালন করে সাধারণ মানুষকে অনুপ্রাণিত করুন, দিশা দেখান, দৃষ্টান্তস্থাপন করুন।
৬। এরই সঙ্গে সরকারি উদ্যোগে কোভিড পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হোক।
৭। নির্বাচন কমিশনের কোভিড প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিধি কঠোর ভাবে মেনে চলা উচিত।
৮। ভোটের দিন নিজের কাছে স্যানিটাইজার, সাবান সঙ্গে রাখুন। রাজনৈতিক দল গুলি তাদের পোলিং ক্যাম্পে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া, স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখুক।
৯। বেসরকারী হাসপাতাল থেকে ২৫০ টাকায় করোনার টীকা নয়, সমস্ত দেশবাসীর সরকারি উদ্যোগে বিনামূল্যে টীকাকরণের সুযোগ থাকুক। কিন্তু টীকাকরণ, যা সরকার কেবল মাত্র সীমিত ক্ষেত্রে ও জরুরী পরিস্থিতিতেই ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, এবং বিশেষত যে টীকা এখনও ক্লিনিকাল ট্রায়ালের তৃতীয় স্তরে, তা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা যাবে না।
সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন।
ডা হীরালাল কোঙার
ডা পুণ্যব্রত গুণ
যুগ্ম আহ্বায়ক
জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল
(এসোশিয়েসন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ডক্টরস ফর ডেমোক্রাসি, হেলথ সার্ভিস এসোশিয়েসন, শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ, ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম)