“Research is formalized curiosity. It is poking and prying with a purpose.” কিন্তু বিজ্ঞানের সেই গবেষণায় পর্যন্ত থাবা বসিয়েছে বাণিজ্যিক মুনাফাস্পৃহা। করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে এও এক অসুখ যা ওষুধকে কেন্দ্র করে সামনে আসছে। সাম্প্রতিক উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। ২০২০ সালে দা লানসেট (The Lancet)-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে তৈরি হল বিতর্ক। চারজন গবেষক লিখিত ওই লেখায় উঠে এল যে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নামক ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধটি রোগীর অন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে ও করোনা নিবৃত্তিতে এর বিশেষ কোন ভূমিকা নেই।
সবাই জানেন ল্যান্সেট চিকিৎসা জগতে অত্যন্ত নামি ও বিশ্বাসযোগ্য পত্রিকা। এর ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর খুব উঁচু দরের ও বহুসমাদৃত। তাই এই পত্রিকায় প্রকাশিত পেপারের প্রভাব চিকিৎসা বিজ্ঞান ছাড়িয়ে রাজনীতিতে এসে পড়ে। এর প্রভাবে বিষয় স্বাস্থ্য সংস্থা পর্যন্ত পরামর্শ দিল যে কোভিড১৯ এর চিকিৎসায় যেন ক্লোরোকুইন বা হাইড্রক্সিক্লোরো-কুইন ব্যবহার না করা হয়। কারণ এই ওষুধের কার্যকারিতার থেকে হানিকারক দিক বেশি। ইতিমধ্যেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঙ্কার দিয়ে বসে আছেন যেন ভারতবর্ষ এই ওষুধ তার দেশে পাঠাবার ব্যবস্থা করে। এই রাজনৈতিক চাপান উতোরের মাঝে বিজ্ঞানী চিকিৎসক মহল দ্বিধাগ্রস্ত।
কিন্তু কিছু চিকিৎসক এ গবেষণাপত্রে যে ভাবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের “ব্যর্থতা” বা অকার্যকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্পর্কে সিন্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তাতে অসঙ্গতি লক্ষ করলেন। তারা জার্নাল প্রকাশকের কাছে Raw Data চেয়ে পাঠাতে বিতর্ক সামনে এল। লেখকরা জানালেন Surgidphere নামক একটি সংস্থা এসব তথ্য তাদের গবেষণার জন্য দিয়েছিল। কিন্তু এখন তারা রোগীর ব্যক্তিগত ও গোপনীয় বলে সে তথ্য দিতে অসম্মত। আবার দেখা গেল এই লেখাটির অন্যতম লেখক স্বপন এম দেশাই এর Surgisphere এর অন্যতম পরিচালক। বাকি লেখক যথাক্রমে মনদীপ আর মেহেরা, ফ্রাঙ্ক রুসচিতস্ক ও অমিত এন প্যাটেল। এনারা সবাই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন। কিন্তু মূল তথ্য হাতে না পেয়ে একটি গবেষণা কিভাবে করলেন এই বিতর্ক উঠল। অবশেষে তারা গবেষণাপত্র প্রত্যাহার করলেন বা retract করলেন। এদের বেশ কয়েকজনের আরেকটি গবেষণাপত্র NEJM বা New England Journal Of Medicine এ প্রকাশিত হয়েছিল। এটিও একটি বিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকা যার ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর বিশ্বে অন্যতম। এর বিষয় ছিল ‘Cardiovascular Disease, Drug Therapy And Mortality in covid 19’ । এই পেপারটিও লেখকরা প্রত্যাহার করে নেন।
সম্প্রতি Remdesivir বলে একটি ওষুধ নিয়েও বিতর্ক উপস্থিত। এই ওষুধটি একটি antiviral ড্রাগ হিসাবে হেপাটাইটিস সি ও ইবোলাতে ব্যবহৃত হতো। পরে সার্স ও মার্স-এও এটি পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু আজ সবাই জানল এর নাম করোনাতে ব্যবহার হবার পর। এটি একটি আমেরিকান কোম্পানি গিলেড প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করে। তাদের ব্র্যান্ড নাম Veklury। এটি intravenous বা শিরায় প্রদান করা হয়। শরীরে প্রবেশ করে এর সক্রিয় মেটাবোলাইট ভাইরাসের আরএনএ ডিপেন্ডেন্ট আরএনএ পলিমারেজ নামক উৎসেচকের কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে ভাইরাসের বৃদ্ধি প্রতিহত করে। আমরা জানি ভাইরাস যতক্ষন না কোন জীবন্ত জীবদেহে প্রবেশ করছে ততক্ষণ সে নিষ্ক্রিয়। একমাত্র কোন আশ্রয়দানকারী প্রাণী বা উদ্ভিদ দেহে প্রবেশ করে সেই দেহের জেনেটিক বস্তু ব্যবহার করে নিজের জেনেটিক প্রতিলিপি তৈরি করে বৃদ্ধি ঘটায়। তারপর viral লোড বাড়িয়ে ইনফেকশন ঘটায়। রেমডিসিভির এই দ্রুত প্রতিলিপি তৈরির পদ্ধতিতে ব্যাঘাত ঘটায়। কিন্তু এই ওষুধ ভাইরাসের প্রভাবে শরীরের ইমিউনিটি অতিসক্রিয় হয়ে উঠলে বিশেষ কিছু করতে পারে না। এই ওষুধ ভারত সরকারের কোভিড ১৯ চিকিৎসা প্রটোকলের মধ্যে আসে জুন মাসে।
কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওষুধটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ওষুধটি যকৃৎ রোগাক্রান্ত বা বৃক্ক রোগাক্রান্ত মানুষ বা ১২ বছরের শিশু, সন্তানসম্ভবা মহিলাদের দেওয়া যায় না। এই ওষুধ কিছু যকৃৎ উৎসেচকের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। এসব নিয়ে ও এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে WHO-এর solidarity ট্রায়াল। অথচ আমেরিকার ফুড ও ড্রাগ অথরিটি বা USFDA একে কোভিডের চিকিৎসায় বিশেষ ওষুধের মর্যাদা দিয়েছে। এতে গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসক দ্বিধাগ্রস্ত।
ষাটের দশকে থালডোমাইড বিতর্ক ও বহু শিশুর অঙ্গহানির ভয়াবহ ঘটনা আমাদের অনেক শিক্ষা দিয়েছে।
(চলবে)
তথ্যসূত্র:
1.https://www.wonderslist.com/10-popular-companies-profited-nazis
2. Government’s policies and growth of pharmaceutical industry in India 1947-2018 :A review discussion paper prasanta Kumar Ghosh published by RIS (Research and Information System for developing Countries)
3. Federation of medical and sales representatives’ Associations of India news and conference documents Patna 2019
4. Shyamal Chakroborty ঐতিহ্য উত্তরাধিকার ও বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত
দ্বিতীয় মুদ্রণ 2011 সাল
5. অসুস্থ ওষুধের জগত Association of health service doctors o west bengal medical and sales representatives union
লেখক ডাঃ তাপস সেন শ্রী অমিতাভ গুহ
এপ্রিল 2008
6 পেটেন্ট কাহিনী আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে
লেখক অংশুতোষ খাঁ ও শ্যামল চক্রবর্তী
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ
আগস্ট 2006
7. প্রাচীন ভারতে শল্য চিকিৎসা লেখক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
মৌলবাদ ও বিজ্ঞান পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ
8. সাবধান জীবাণুরা নিকটেই আছে! মৃত্যুঞ্জয়প্রসাদ গুহ জ্ঞান বিচিত্রা প্রকাশনী জানুয়ারি 2006
9. Pharmaceutical industry in India wikipedia
10. বিশ্বায়ন ভাবনা দুর্ভাবনা সম্পাদক অমিয় বাগচী অমিতাভ গুহ 2002 প্রকাশক ন্যাশনাল বুক এজেন্সি
11. The 21 st century pharmaceutical and biotech sector Robin Walsh
12. সবার জন্য নয় ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা dw.com
13. National family health survey 65 (NFHS-4) Ministry of Health and Family Welfare 2015-16
14. What are APIs and how they threaten India’s status of a ‘pharmacy of the world’Himani Chandna The print 26 th February ,2020
15 .The health workforce in India
Human Resources for Health Observer – Issue No. 16 WHO
16. Emergence of pharmaceutical science and industry: 1870-1930 chemical and engineering news vol.83, issue 25
17. The lancet: drug development output; what proportion for tropical diseases? July99)
18. বিজ্ঞান ও অনুসন্ধান – স্বাধীন নির্মোক, পরাধীন গবেষণা জয়ন্ত ভট্টাচার্য
19. Health Approved by US, rejected by WHO — science of remdesivir & why it has turned controversial. Abantika Ghosh The Print 28 th October 20