ইন্ডিয়ান মেডিকাল এসোশিয়েসনের কেন্দ্রীয় কমিটি ৮ডিসেম্বর, ২০২০ নীতি আয়োগ অনুমোদিত ‘মিক্সোপ্যাথি’ তথা আয়ুর্বেদ কাউন্সিল (CCIM) দ্বারা শল্য চিকিৎসার অনুমোদন দেওয়াকে বিরোধিতা করে দেশব্যাপী কোভিড ছাড়া অন্য পরিষেবা ক্ষেত্রে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। রাজ্য আই এম এ-র বক্তব্য জানা নেই।
জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর মতে:
ন্যাশানাল মেডিকাল কমিশন নিয়ে কোন বক্তব্য বা ধারণা আমরা জনসাধারণের কাছে পৌছে দিতে পেরেছি এমনটা নয়। এমনকি রাজ্যের চিকিতসকদেরও এন এম সি সম্পর্কে ধারণা খুব পরিষ্কার নয়। এই রকম এক অতিমারীর পরিস্থিতিতে আউটডোর, শল্যচিকিতসা, ইত্যাদি আরও সংকুচিত করলে মানুষের কাছে অবাঞ্ছিত ভুল বার্তা যাওয়ার সম্ভাবনা।
শুধুমাত্র ক্রসপ্যাথি অর্থাৎ এক সিস্টেমের ডাক্তার দ্বারা অন্য সিস্টেম প্র্যাকটিশ করার বিরোধিতা বা বলা ভালো আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের কয়েকটি শল্য চিকিৎসার অনুমোদন দেওয়ার বিরোধিতা করলে আমরা নিজেদের অজান্তেই প্রকৃত সমস্যা থেকে দূরে গিয়ে এক অবাঞ্ছিত অনুপযোগী লড়াইয়ে সামিল হয়ে পড়ব।
এম সি আই বাতিল করে এন এম সি তৈরির ইতিহাস ও এই নতুন নিয়ামক সংস্থার বিধিনিয়ম বিষয়ে অবহিত না হয়ে এই লড়াই করতে গেলে আমরা নানা ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ব।
এন এম সি-র বিধিনিয়মের মধ্যেই আছেঃ–
১। সরকার অনুমোদিত ও মনোনীত ব্যক্তিরাই এই সংস্থার সদস্য বা পদাধিকারী। কোনরকম নির্বাচিত সদস্য বা পদাধিকারীর এই সংস্থায় থাকার অধিকার নেই। অর্থাৎ কোনরকম স্বায়ত্বশাসন ও স্বাধিকার এই সংস্থার নেই।
২। এন এম সি-র ৫০(১) ধারায় আয়ুর্বেদ হোমিওপ্যাথি কাউন্সিলের সাথে সমন্বয় সাধন করে বিধি তৈরি করার কথা বলা আছে। সেই বিধি অনুযায়ী শল্যচিকিতসার এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর এই বিষয়ে একটা কথা । আয়ুর্বেদ নিয়ামক সংস্থা (CCIM) সম্পূর্ণত পৃথক একটি স্বয়ংশাসিত সংস্থা । আয়ুর্বেদ পঠনপাঠন ও চিকিৎসা বিষয়ে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এই সংস্থাই করতে পারে। অন্য সংস্থা নয়। ঠিক যেমন এম সি আই কিভাবে তার সিলেবাস ঠিক করত তা নিয়ে বলার অধিকার CCIMএর ছিলনা। অর্থাৎ এন এম সি-র অনুমোদন না থাকলেও CCIM এর বিধি অনুসারে আয়ুর্বেদ শল্য চিকিৎসকের বেশ কিছু অপারেশন করার অধিকার বেশ কিছুকাল আগে থেকেই ছিল এবং আছে। এটা নতুন কিছু নয়। মূল চক্রান্ত থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে এই বিষয়টি নতুন করে হাজির করা হয়েছে।
৩। এন এম সি-র বিধি অনুযায়ী প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ খোলার নিয়মকানুন ও নতুন ভর্তির নিয়মকানুন অতি শিথিল করে দিয়ে ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। আর এই সুযোগকে আরও সহজলভ্য করতে আমাদের রাজ্যের সরকার অতিসক্রিয়তা দেখিয়ে সরকারি হাসপাতালকে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের জন্য ব্যবহার করায় আগ্ৰহ দেখিয়ে ঐ ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়েছে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে।
আরও অনেক বিষয় আছে আলোচনা বা অবগতির জন্য।
মোদ্দাকথা চিকিৎসা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের ব্যবসাকে সরকারি মদতে আরও পরিপুষ্ট ও বে- লাগাম করার ক্ষেত্র প্রস্তুত।
চিকিৎসা ব্যবস্থায় অ্যালোপ্যাথি, আয়ুর্বেদ , হোমিওপ্যাথি, ইউনানী, ইত্যাদির সমন্বয়ের নামে জগাখিচুড়ী চিকিৎসা পদ্ধতির আইনি সংস্থান প্রস্তুত।
তাই সামগ্ৰিক বিষয়ে অবহিত হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে প্রচার করে ভবিষ্যত আন্দোলনের পরিকল্পনা করা আশুপ্রয়োজনীয়।
না হলে আমরা বিভ্রান্তির শিকার হয়ে অন্য সিস্টেমের চিকিৎসক ও চিকিৎসা ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসল বিষয়টি এড়িয়ে যাব নিজেদের অজান্তেই। শাসকের দল এটাই চায়।
আমাদের পরিচিত-অপরিচিত অনেক চিকিৎসক ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত ভাবে এই ছায়াযুদ্ধে আমাদের সামিল করার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেই পারেন, একতাবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়ে আসলে মূল বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার জন্য।
অজান্তে শাসকের দলকে মদত দেওয়ার এই অতিকৌশলী ষড়যন্ত্র বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে ৮ই ডিসেম্বর নন-কোভিড পরিষেবা বন্ধ বা ১১ই ডিসেম্বর পেন ডাউন নয়, জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল ১১ই ডিসেম্বর প্রতিবাদ দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানাচ্ছে।
কেবল ক্রসপ্যাথি নয়, ঐ দিন আমরা এন এম সি-র সমস্ত বিজ্ঞানবিরোধী, চিকিতসকবিরোধী ও জনবিরোধী বিষয়গুলি নিয়ে জনসাধারণকে জানানো আরম্ভ করব, সরব ও সোচ্চার হব।
ডা হীরালাল কোঙার
ডা পুণ্যব্রত গুণ
যুগ্ম আহ্বায়ক
জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল
(এসোশিয়েসন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ডক্টরস ফর ডেমোক্রাসি, হেলথ সার্ভিস এসোশিয়েসন, শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ, ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম)