করোনা পরবর্তী সময়ে মাস্ক আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিককালে কোন একটি বেসরকারি নিউজ চ্যানেলে মাস্কের অপকারিতা নিয়ে প্রচার করে। আর সেটারই সুযোগ নিয়ে একদল মাস্কবিরোধী মানুষ, যাঁরা বিশ্বাস করেন, করোনা অতিমারী নয়, পুরোটাই ভাঁওতা, তাঁরা প্রচারে নামেন। এবার দেখে নেওয়া যাক, নিউজ চ্যানেলে বর্ণিত মাস্কের অপকারিতাগুলো কী কী, ও আদৌ বিষয়গুলো সত্যি কিনা, কিংবা একে অন্যকোনভাবে প্রতিরোধ করা যায় কিনা।
অপকারিতা ১
মাস্কের জন্য চামড়ায় ফুসকুড়ি /অ্যালার্জি হতে পারে – সেটা যেকোন জামাকাপড় থেকেও হতে পারে। তাবলে কি মানুষ নগ্ন হয়ে ঘোরে? না, মাস্ক কেনার আগে দেখে নিন, মাস্ক যে কাপড়ে তৈরী, তার প্রতি আপনার চামড়া সংবেদনশীল কিনা। প্রয়োজনে একটানা মাস্ক পরে থাকতে হয়, এমন পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। অ্যালার্জি হলে ডাক্তারবাবুকে দেখান।
অপকারিতা ২
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক থেকে ইনফেকশন হয়ে নিউমোনিয়ার ভয় – ঠিক এই কারণেই মাস্ক পুনর্ব্যবহার করতে মানা করা হয়। আর করলেও একমাত্র পুনর্ব্যবহারযোগ্য মাস্ক ডিসইনফেকট্যান্ট দিয়ে ভাল করে পরিষ্কার করে/ ফুটন্ত গরম জলে ৩-৪মিনিট রেখে শুকিয়ে নিয়ে তারপর পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে। কতবার wash করা যাবে, সেটাও মাস্কের প্যাকেটে লেখা থাকে। তবে যতবারই লেখা থাক না কেন, ব্যবহারের সংখ্যা তার থেকে কম হলেই ভাল।
অপকারিতা ৩
শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব এবং তার ফলে ইমিউনিটির সমস্যা, হাঁপানি ও ব্রঙ্কাইটিস রোগীদের শ্বাস নিতে অসুবিধা, দুর্বল হার্টের রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা, হার্টে কম অক্সিজেন পৌঁছানো ইত্যাদি – মাস্ক এতটা এয়ারটাইট হয় না, যে তার মধ্যে দিয়ে একদমই হাওয়া চলাচল করবে না। বরং দেখা গেছে, মাস্কের মাধ্যমে অপরিশোধিত বাতাস অনেকাংশেই পরিশোধিত হয়ে ফুসফুসে যাচ্ছে মাস্কে থাকা ফিল্টারের কারণে। একদিকে হাঁপানির রোগীরা যেমন বেশিক্ষণ মাস্ক পরলে হাঁপের সমস্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি সামান্য কিছু সময়ের জন্য মাস্ক পরলে কম অ্যালার্জেন যুক্ত বাতাস ফুসফুসে যাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে। তাই এই পয়েন্টে দুইতরফেই যুক্তি আছে। অন্যদিকে এই রোগের রোগীদের করোনা দ্বারা আক্রান্ত হলে জটিলতার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। অতএব, এটা থেকে একমাত্র সিদ্ধান্ত এটাই হতে পারে যে, এইসব রোগের রোগীদের একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরনো, আর বেরলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা এবং যত শীঘ্র সম্ভব বাড়িতে ফিরে আসা, যাতে আবার মাস্ক ছাড়া থাকতে পারেন।
ব্যক্তিগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বলতে পারি, শরীরে অক্সিজেন কম গেলে ফুসফুস ছাড়াও মস্তিষ্ক তার অভাব সবার আগে বুঝতে পারে। এর ফলে restlessness, confusion বাড়ে। একে Hypoxia বলে। যদি দীর্ঘক্ষণ মাস্ক পরে থাকলেই Hypoxia হত, তাহলে প্রত্যেক সার্জন Hypoxiaয় ভুগতেন ও তাদের কোন সার্জারিই সঠিকভাবে করা সম্ভব হত না।
তাই আবারও বলব, যতদিন না নিশ্চিতভাবে করোনা যাচ্ছে বা মানবজাতি করোনার বিরুদ্ধে ইমিউনড হচ্ছে, মাস্ক হচ্ছে বাঁচার একমাত্র অস্ত্র। সঠিকভাবে মাস্ক পরুন। নাক ও মুখ ঢেকে রাখুন।
জনস্বার্থে প্রচারিত।