সাধারণত মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরু হয় ১২ বছর বয়সে। তবে কারো কারো তার আগে এমনকী ৮ বছর বয়সেও শুরু হতে পারে। এ সম্পর্কে বাবা মায়েদের উচিত সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে বিশেষ দিনের জন্য তৈরি করা।
ঋতুস্রাব সম্পর্কে মেয়েরা যখন থেকে একটু করে বড় হতে থাকে তখন থেকেই অল্প করে জানানো দরকার। যেমন টিভির বিজ্ঞাপনে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেখানোর সময় কেন এর দরকার হয়, সে বিষয়ে জানানো যেতে পারে। তাকে বোঝানো দরকার মেয়েদের এই স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় ঘটনা সম্পর্কে। একই সঙ্গে জানানো দরকার পিরিয়ড হল এমন একটা লক্ষণ যা জানান দেয় শরীর এখন বাচ্চা ধারণের জন্য তৈরি। পাশাপাশি কেন সন্তান আসে ও কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়েও প্রাথমিক ধারণা দেওয়া দরকার। তবে কখনোই এ সম্পর্কে কোনো কুসংস্কার মেয়ের মনে ঢোকানো উচিত নয়।
অনেক মায়ের প্রশ্ন, মেয়ের পিরিয়ড কবে শুরু হবে কী করে বুঝবো? একথা খুব সত্যি, আগে থেকে নির্দিষ্ট দিন বোঝা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। কিন্তু যখন থেকে শরীরে নানারকম বদল আসতে থাকে, তখন থেকে ওই বিশেষ দিনের জন্য তৈরি করতে হবে। মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হওয়ার গড় বয়স ১২ বছর। তবে তার এদিক ওদিক হতেই পারে। ঋতুস্রাব শুরুর বয়স অনেক সময়েই পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, জীবনযাত্রা ও ভৌগোলিক অবস্থানের উপরেও কিছুটা নির্ভর করে। আসলে শরীর পিরিয়ডের জন্য তৈরি হলে তখনই শুরু হয়। ১৪ বছরেও শরীরে কোনো মেয়েলি লক্ষণ ফুটে না উঠলে ১৬ বছরেও পিরিয়ড শুরু না হলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার। এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে অপুষ্টি জনিত কারণে ওজন কম থাকা, প্রচুর শরীরচর্চা করা বা হরমোনের তারতম্য হলেও এমন হতে পারে।
প্রথমবার পিরিয়ড শুরু হওয়ার পর নিয়মিত হতে একটু সময় লাগতে পারে। একবার ঠিক হয়ে গেলে ২৮-৩০ দিন অন্তর হতে পারে। সাধারণত ৩-৭ দিন স্থায়ী হয়। রক্তপাতের পরিমাণ অনেক বেশি মনে হলেও আসলে ৩-৫ টেবিলচামচ রক্ত বেরোয়।
এমন কোনো কথা নেই যে বাড়িতেই শুরু হবে। স্কুলে, টিউশনে বা খেলার মাঠে যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময়ে শুরু হতে পারে। সেজন্য মেয়েকে প্রস্তুত রাখতে হবে। ব্যাগে কোনো পাউচে স্যানিটারি ন্যাপকিন দিয়ে রাখতে হবে। পিরিয়ড হওয়া অবস্থায় অনেক সময় জামা পোশাকে দাগ লাগতে পারে। কাজেই এ সময় খুব আটোসাটো ও হালকা রঙের পোশাক পরা উচিত নয়। আর ব্যাগে একটা অতিরিক্ত পোশাক রাখা ভালো। যাতে দরকার মতো বদলে নেওয়া যায়। সে কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সামনে না পড়ে। তবে এই বিষয় নিয়ে রাখঢাক করা বা ভুল তথ্য দেওয়া কখনোই উচিত নয়।
পিরিয়ড মেয়েদের একটি নিয়মিত ব্যাপার হলেও, এখনও তা নিয়ে কুসংস্কার কাটিয়ে উঠতে পারেননি অনেকেই। প্যাডম্যান বা পিরিয়ড এন্ড অফ সেন্টেন্স এর মতো ছবিও এই সম্পর্কে কুসংস্কার দূর করতে পারেনি। আর এ বিষয়ে ঠিকঠাক ধারণার অভাবে বিশেষত, কিশোরী অবস্থায় নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এক সমীক্ষায় জানা গেছে, ঋতুস্রাব নিয়ে লজ্জার জন্য আমাদের দেশে গ্রামের দিকে বসবাস করা ২৩ শতাংশ মেয়ে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছনোর পরেই স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়। এই মেয়েদের ২৮ শতাংশই পিরিয়ডের সময় যথাযথ সুরক্ষার অভাবে স্কুলে যেতে অসুবিধা বোধ করে পড়া ছাড়ে। আবার অনেকে পড়া বন্ধ না করলেও এ রাজ্যের গ্রামের ৫০ শতাংশেরও কম মেয়ে যথাযথ সুরক্ষার সুযোগ পায়। ফলে ওই সব দিনে তারা স্কুলে যায় না। কাজেই সব চেয়ে আগে দরকার এই বিষয়ে সচেতন থাকা। যদিও একটু করে সচেতনতা বাড়ছে। এখন অনেক স্কুলে স্যানি্টারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনও বসেছে। আরো সচেতনতা দরকার।