“তোমার শরীর ছুঁয়ে তবেই রোগটা বুঝি,
বস্তুত, এই জ্ঞানটা আমার পেশার পুঁজি।
এমনভাবেই রোগ ধরতে শিখেছি তাই,
সুখ খুঁজিনা শরীরে তোমার, অসুখ খুঁজি।”
আর্যতীর্থ
১৭ সেপ্টেম্বর
প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর ডাক্তারি করছি এই শহরেই।হাউসস্টাফশীপ, এমডি পড়ার সময়টা আর বিলেতের বছর গুলো যোগ করলে সব মিলিয়ে পঞ্চাশ পেরিয়ে যাবে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়ি নি।
মেয়েটি এসেছিলো জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে, সঙ্গে দুই মহিলা, ওর মা-মাসি হবেন। প্রথামতো, পরীক্ষা করে তেমন কিছুই পেলাম না। অথচ বলছে জ্বর। স্টেথো বসিয়ে ভালো করে শোনার চেষ্টা করছিলাম
ওর মা-মাসি বসে আছেন। হঠাৎ ওদের মুখের ভাব, আচরণ বদলে গেলো। কঠিন মুখে মেয়েটি বলল- আপনি এই ভাবে দেখছেন কেন?
-মানে?
-আপনি আমাকে এই ভাবে টাচ করলেন কেন?
-আমি তো তোমাকে পরীক্ষা করছিলাম মা, তোমার কি হয়েছে সেটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম
-না আমরা দেখেছি, আপনি আমার মেয়ের বুকে হাত দিয়েছেন!
এবার পাশের মহিলা বললেন।
আমার মাথায় যেন বজ্রাঘাত হলো, চোখে অন্ধকার দেখলাম, আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম, সাতাত্তর বছর বয়সে পৌঁছে, আমার নাতনির বয়েসী কোনো মেয়ে যে এমন কথা বলতে পারে, আমি দু:স্বপ্নেও ভাবি নি।
শান্ত থাকার চেষ্টা করছিলাম, চোখের সামনে ভেসে আসছিলো, আমার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, নাতি নাতনি , মাস্টার মশাইদের মুখ, আমার অজস্র ছাত্র-ছাত্রীদের চেহারা!
মৃত্যুর আগে শুনেছি সারাজীবনের স্মৃতি জলছবির মতো চোখের সামনে ভেসে ওঠে, আমি কি মরে যাচ্ছি তবে? এই কি মৃত্যু?
তার পরের ঘটনাপ্রবাহ আমার কাছে স্পষ্ট নয়, মেয়েটি আর ওই দুই মহিলা আমার চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলেন আর কিছুক্ষণের মধ্যে এলেন, স্থানীয় থানা থেকে এক অফিসার, তিনি এবং তাঁর পরিবার আমার পেশেন্ট।
-ডাক্তারবাবু, আপনাকে একটু থানায় আসতে হবে আমাদের সঙ্গে, একটা কম্প্লেন হয়েছে, সেই ব্যাপারে।
-আমি পেশেন্ট গুলি দেখে ….
-না স্যার ব্যাপারটা আর্জেন্ট, একটা নন-বেইলেবল ওয়ারেন্ট আছে..
-ওয়ারেন্ট? আপনারা আমাকে এরেস্ট করবেন নাকি?
-মানে স্যার, এক মহিলা…আপনি থানায় চলুন না সব বুঝিয়ে বলবেন বড়োবাবু। অফিস্যার অত্যন্ত ভদ্র ভাবে বললেন
-একটা ফোন করতে পারি?
-হ্যাঁ স্যার, অবশ্যই
ফোনের দিকে তাকিয়ে মাথাটা ফাঁকা হয়ে গেলো। কাকে ফোন করব? এই রকম পরিস্থিতিতে কাকে ফোন করা উচিৎ? আমার স্ত্রী? ওর তো বয়েস হয়েছে! মেয়ে কে? না ছেলেকে? কি বলবো? আমাকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে?
হা, ঈশ্বর!