আমাদের দেশের রাষ্ট্র বাহাদুররা স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যে ২০০০ সালের মধ্যে আমাদের দেশে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ ব্যাবস্থা চালু করবেন। অর্থাৎ আমাদের দেশের গরীব, বড়লোক নির্বিশেষে সরকারি ব্যবস্থায় বিনামূল্যে সমস্থ স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবেন। কথাগুলো অনেকের কাছে পাগলের প্রলাপ মনে হলেও এটা ঘটনা এবং বাস্তব যে সবার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আমাদের প্রতিবেশি দেশ শ্রীলঙ্কা কিন্তু করে দেখাতে পারলো আর আমরা ২০১৯ পার করেও স্বাস্থ্যের নায্য অধিকার টুকু আদায় করতে পারলাম না। স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার, স্বাস্থ্য কখনওই ভিক্ষা নয় – এর জন্য সাংবিধানিক ভাবে কোনো সরকারই আজ অবধি পার্লামেন্টে বিল আনতে পারলেন না। কিন্তু মানুষকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্য নিত্যনতুন ফন্দিফিকির করে আইন পাশ করিয়ে নিচ্ছেন।
খুবই অনুতাপের বিষয় রাষ্ট্র মনে করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যেনো একটা ভিক্ষা। দেশের জনগণকে সরকার ভিক্ষা দিচ্ছেন। আচ্ছা বলুনতো ১৯৭৮ সালে আলমা আটায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণাপত্রে এদেশের রাষ্ট বাহাদুররা তবে কেন সনদে স্বাক্ষর করেছিলেন? বিশ্বের কাছে দেশকে মিথ্যেবাদী বানানোর জন্য। ঘোষণাপত্রে তো পরিষ্কার উল্লেখ ছিলো ২০০০ সালের মধ্যে ভারতবর্ষও বিনামূল্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করবেন।
জানি অনেকেই আচ্ছে দিনের নেশায় বেহুঁশ হয়ে বলবেন সরকার তো স্বাস্থ্য বিষয়ে কত পলিসি ও বীমার ব্যবস্থা করেছেন। হ্যাঁ করেছেন, তবে কোনোটাই এদেশের সাধারণ জনগণের সার্বিক ভাবে সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা হবে – এই সুবিধার জন্য নয়। আখেরে লাভবান হচ্ছে বীমা কোম্পানিগুলো। সরকারি ব্যবস্থার মাধ্যমে যতটুকু চিকিৎসা ছিটেফোঁটা পাওয়া যায় সেই চিকিৎসা ব্যবস্থাও সরকারি হাসপাতালের নানান পরিকাঠামোর ঘাটতির জন্য সাধারণ মানুষ আজ নিজের চিকিৎসার জন্য ঘটিবাটি বন্ধক রেখে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। যাদের এই সামর্থ্যটুকুও নেই তারা বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। আর ধার দেনা করে যারা নিরুপায় হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন – এর ফলে যা ঘটছে রোগীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। অদ্ভুত এক ব্যবস্থ্যার শিকার এই সমাজ। চিকিৎসা ব্যবস্থা আজ পন্য অর্থ থাকলে চিকিৎসা কিনতে পারবেন আর না থাকলে, সে কথা উল্লেখ আর না করাই ভালো।
যে সুপারিশ ২০১১ সালে ডা. শ্রীনাথ রেড্ডি কমিটি তৎকালিন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পেশ করেছিলেন, অদ্ভুত ভাবে সরকারের নিযুক্ত যোজনা কমিশনের তৈরি কমিটির রিপোর্ট সরকার মানলেন না। তাতে পরিষ্কার উল্লেখ ছিলো আমাদের দেশে সবার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্ভব, যদি সরকারের একটু সদিচ্ছা থাকে। মানে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়বরাদ্দ একটু বাড়িয়ে দিলেই এটা সম্ভব। দেশের আভ্যন্তরীণ উৎপাদনে স্বাস্থ্যখাতে ২.৫ শতাংশ খরচ করলেই এটা সম্ভব। কিন্তু আমরা কী দেখলাম এবং কি পেলাম তৎকালীন মনমোহন সরকার তা মানেননি এবং মোদী সরকার ৫০০০ কোটি টাকা স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় কমিয়ে দিয়ে বড় বড় কোম্পানিকে দিলেন বছরে ৫ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়। চিকিৎসা ব্যবস্থাটাকে বেসরকারির দিকে নিয়ে যাওয়ার সমস্থ রকম কৌশল বেছে নিলেন মোদী সরকার।
বর্তমান স্বাস্থ্যখাতে সরকার খরচ করে মাত্র এক শতাংশ মানে শতকরা ১ টাকা। কেউই কথা রাখেন নি।
দেশের আপামর জনগণ নিজেদের স্বাস্থ্যের অধিকার কবে বুঝে নেবে জানিনা তবে সবার জন্য স্বাস্থ্যের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন যারা তারা কিন্তু থেমে নেই। তাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে দিয়ে সবার জন্য স্বাস্থ্যের দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি স্বল্প মুল্যে আধুনিক যুক্তিসম্মত চিকিৎসা পরিষেবা প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি এটা কোনো সেবা নয় এটা একটা যুক্তিসম্মত চিকিৎসার মডেল। এবং রাষ্ট্রর কাছে একটা বার্তাও সদিচ্ছা থাকলে রাষ্ট্রর পক্ষেও করা সম্ভব সবার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রচলন করা।
শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি সহ বেশ কিছু সংগঠনের মানবিক প্রয়াসে যে ক্লিনিকগুলো চলে তারমধ্যে থেকে আজ এমনই একটি চিকিৎসা শিবিরের সাথে আপনাদের পরিচয় করাবো।
কলকাতা উপনগরী সল্টলেক এলাকার অন্তর্ভুক্ত হলেও আসলে একটি পিছিয়ে পড়া বস্তি এলাকা দত্তাবাদ। হ্যাঁ ঠিকই অনুমান করেছেন ১১৫ দত্তাবাদ কলকাতা – ৬৪।
গত ২ রা জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বারাসাত মেডিকেল ক্যাম্প সেরে বিকেল ৪ টেতে পৌছে যাই দত্তাবাদ। দেখলাম এই বস্তিতে একটি ছোট্ট ঘরে স্বাস্থ্য শিক্ষা নির্মাণ এবং এনডেফার (প্রচেষ্টা) এই সংগঠন দুটির সমবেত উদ্যোগে চলছে যুক্তিসম্মত চিকিৎসা শিবির। পর্দার আড়ালে একপাশে রোগী দেখা, আর একপাশে রোগীর কেস হিস্ট্রি। আন্তরিক ভাবে রোগী দেখছেন ডা. অনিন্দিতা দাস। এছাড়াও এখানে এসে রোগী দেখেন গণস্বাস্থ্য আন্দোলনের অন্যতম অগ্রণী সৈনিক ডা. পুণ্যব্রত গুণ ও ডা চঞ্চলা সমাজদার।
না এখানে কোনো দামি ব্যান্ডের ওষুধ লেখা বা দেওয়া হয়না। স্বল্প মুল্যে রোগীরা ওষুধ পেয়ে থাকেন এবং ডাক্তার দেখানোর জন্য রোগীকে দিতে হয় মাত্র কুড়ি টাকা। কী ভাবছেন এতে সত্যিই কি রোগীরা ভালো হচ্ছেন ? আমি নিজের থেকে আর কিছু লিখছি না কারণ বেশি বড় লেখা হয়তো বন্ধুদের ধৈয্য চ্যুতি ঘটবে। তাই সকলের কাছে আবেদন প্লিজ একটিবার নয় স্বচক্ষে দেখেই আসুন।
A good endeavour!