WORLD ALZHEIMER’S DAY, 21ST SEPTEMBER
আজকে বিশ্ব অ্যালঝাইমার্স দিবস। অ্যালঝাইমার্স আজ খুব একটা অপরিচিত শব্দ নয়, লোকজন মোটামুটি জানেন সিনেমা-গল্প-মিডিয়ার দৌলতে।
সাইকায়াট্রি সাবজেক্টটার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বা কঠিন রোগ বলতে সাধারণত Schizophrenia বা Psychosis গোত্রীয় রোগগুলোর কথা বলা হয়, এবং সেভাবেই জনসাধারণের কাছেও উপস্থাপিত হয়। একা একা কথা বলা, একা একা হেসে ওঠা, অকারণ সন্দেহ ও রাগ, আক্রমণাত্মক আচরণ — স্বাভাবিকভাবেই লোকে ‘উন্মাদ’ নামক শব্দের সঙ্গে এই রোগকে রিলেট করে, যে শব্দটা আজকের দিনে আর ব্যবহৃত হয় না।
কিন্তু, একজন তরুণ সাইকায়াট্রিস্ট হিসেবে আমার মনে হয়, সাইকায়াট্রিক ডোমেইনের সবচেয়ে কঠিন ও ভয়াবহ রোগ হলো ডিমেনশিয়া। এই ডিমেনশিয়া রোগেরই একটা ধরণ হলো Alzheimer’s Dementia। না, Fearmongering করছি না, অহেতুক ভয় দেখাতে চাইছি না। আমার এমডি ডিগ্রির থিসিস টপিক ছিলো ডিমেনশিয়া ও তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লক্ষণ নিয়ে — সেই সূত্রে অনেক ডিমেনশিয়া রোগীর সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে, তথ্য নিতে হয়েছে। কেন অ্যালঝাইমার্স ডিমেনশিয়া এতোটা গুরুত্বপূর্ণ, অন্যান্য ডিমেনশিয়াগুলোর মধ্যেও?
একটু বলি—
১) অ্যালঝাইমার্স ডিমেনশিয়া সবচেয়ে কমন ডিমেনশিয়া, প্রায় ৯০ শতাংশ ডিমেনশিয়াই অ্যালঝাইমার্স।
২) অ্যালঝাইমার্স ডিমেনশিয়া দুরকমের হতে পারে – early আর late onset। Early Onset AD ৪০-৪৫ বছরেই শুরু হতে পারে, এবং সাধারণত late onset এর থেকেও বেশি তাড়াতাড়ি progress করে। Early onset হবার চান্স তাদের বেশি, যাদের পরিবারে ফ্যামিলি হিস্ট্রি রয়েছে -অর্থাৎ জেনেটিক লোড একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩) অ্যালঝাইমার্স বা যেকোনো ডিমেনশিয়া মানেই লোকে মনে করেন স্মৃতিভ্রংশ। কিন্তু স্মৃতি বলতে আমরা যেমন ভাবি স্কুল কলেজের পুরোনো কথা, সেরকম কিন্তু সবসময় নয়। বেশিরভাগ ডিমেনশিয়াতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় Recent বা Immediate memory, এবং তারপরেই working memory। কাজেই মানুষটা খেয়েছেন কিনা ভুলে যান খেয়ে ওঠার একটু পরেই, কোথাও কিছু রেখে ভুলে যান, হিসেব করতে ভুলে যান, দিন মাস ভুলে যান — এভাবেই দৈনন্দিন জীবনটা বড্ডো কষ্টের হয়ে ওঠে রোগীর জন্যেও, তাঁর আশেপাশের মানুষদের জন্যেও।
৪) অ্যালঝাইমার্সে এরই সঙ্গে spatial memory ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষটি ঘরের রাস্তা ভুল করেন, হারিয়ে যান পাড়ার মধ্যেই – বাইরে বেরোনো প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে ঘরের মধ্যেও কোথায় বাথরুম, কোথায় খাবার জায়গা ভুলে যান, ঘরের মধ্যেই শৌচকর্ম করে ফেলেন। আবার Alzheimer’s এ পরবর্তীকালে long term memory ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পুরোনো স্মৃতিও ভুলে যেতে থাকেন মানুষটি। স্মৃতিই মানুষের অস্তিত্বের বুনিয়াদ — তাকে হারিয়ে ফেলে জীবনের সমুদ্রে পালছেঁড়া জাহাজের মতো ভেসে বেড়ান মানুষটা।
৫) সবশেষে, অন্যতম সমস্যার কথা যেটা, সেটা হলো ট্রিটমেন্ট। যেকোনো ডিমেনশিয়ারই চিকিৎসা এবং সেরে ওঠা (Recovery/Remission) পার্টটা খুব দুর্বল, আমাদের modern medicine এর কাছে। ডিমেনশিয়া এখনো পুরোপুরি সারিয়ে দেবার মতো ওষুধ নেই বিজ্ঞানের কাছে, Prevention ই এখানে বলতে গেলে একমাত্র Cure!
রোগীর ঘরের লোকেদের সহজ ভাষায় বোঝানোর জন্য বলি, উঁচু পাহাড়ের উপর থেকে বোল্ডার গড়িয়ে পড়ার মতো এই রোগ। আমরা বোল্ডারটাকে আটকে রাখতেও পারবো না, উল্টোদিকে ফেরানো তো দূর অস্ত, কিন্তু গড়িয়ে পড়ার স্পিডটা স্লো করতে পারি। তার জন্য প্রয়োজন Early diagnosis, Early treatment, পর্যাপ্ত Psychotherapy (যেটা অনেকেই পান না) এবং প্রচুর Social support!
অ্যালঝাইমার্স ডিমেনশিয়া। প্রতিরোধের উপায়? ডিপ্রেশন আটকানো। একাকীত্ব আটকানো। মস্তিষ্ককে বৃদ্ধ বয়সেও সচল রাখা, কর্মক্ষম রাখা। এক্সারসাইজের মাধ্যমে ব্রেনে এন্ডোরফিন ডোপামিনের সাপ্লাই বজায় রাখা।
কী মনে হয়, এই ফোন-ডিপেন্ডেন্ট আড্ডা-বিবর্জিত রিল-আসক্ত দুনিয়াতে আগামীতে অ্যালঝাইমার্স কমবে, না বাড়বে?