প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সেই মুহূর্তটিকে স্মরণ না করলে বড়দিন যেন অপূর্ণই থেকে যায়—যে মুহূর্তে মানবতা, ক্ষণিকের জন্য হলেও, যুদ্ধকে পরাভূত করেছিল। ১৯১৪ সালের বড়দিনের যুদ্ধবিরতি আজ এক ধরনের ঋতুচক্রের কিংবদন্তি। এর কোমলতা হৃদয় ছুঁয়ে যায়, আর এর অসম্ভবতা হৃদয় ভেঙে দেয়। ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়েও মানুষ যে আলোর সন্ধান করেছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।
পশ্চিম ফ্রন্টের বরফে জমে যাওয়া পরিখাগুলোতে—যেখানে কাদা ছিল নিত্যসঙ্গী, ভয় ছিল নিশ্বাসের মতো অবিচ্ছেদ্য, আর কামানের গর্জন ছিল সময় মাপার একমাত্র ঘড়ি—সেখানেই জন্ম নিয়েছিল এক বিস্ময়। যে সৈন্যরা কয়েক ঘণ্টা আগেও একে অপরের দিকে মৃত্যুর বার্তা ছুড়ে দিচ্ছিল, তারাই সেই রাতে পরিখার দেয়াল ছুঁয়ে বড়দিনের গান তুলেছিল, ভাঙা কণ্ঠে, দ্বিধা আর আশার মাঝখানে দাঁড়িয়ে।
তারপর ঘটেছিল এমন কিছু, যা আজ প্রায় কল্পকাহিনি বলে মনে হয়। জার্মান ও ব্রিটিশ সৈন্যরা ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসেছিল তাদের গর্তের মত আশ্রয় থেকে—হাত উঁচু করে, হৃদপিণ্ড বুকে ধুকপুক করতে করতে। তারা মিলিত হয়েছিল নো ম্যানস ল্যান্ডে—সে ভূমিতে, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মানুষ হত্যা করা। সেখানেই বিনিময় হয়েছিল সিগারেট, চকোলেট, বোতাম, আর বাড়ির স্মৃতি। কেউ কেউ ফুটবল খেলেছিল, যেন যুদ্ধের মাঝখানে হঠাৎ করে ফিরে এসেছে শৈশব। কেউ কেউ শত্রুর মৃতদেহ কবর দিতে সাহায্য করেছিল, কারণ মৃত্যুর সামনে শত্রু বলে কিছু থাকে না। কয়েকটি মূল্যবান ঘণ্টার জন্য যুদ্ধ থেমে গিয়েছিল—কোনো জেনারেলের আদেশে নয়, বরং সাধারণ মানুষের এক নিঃশব্দ সিদ্ধান্তে: তারা আর গুলি চালাবে না, অন্তত এই রাতে।
এই মুহূর্তের সৌন্দর্যই তার ট্র্যাজেডিকে আরও গভীর করে তোলে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তারা শান্তির যে কোনো অবশিষ্ট চিহ্ন মুছে ফেলতে কামানের গোলাবর্ষণের নির্দেশ দেন এবং ভবিষ্যতে এমন ‘ভ্রান্ত মানবিকতা’র জন্য কোর্ট-মার্শালের হুমকি ঝুলিয়ে দেন। ১৯১৫ সালের বড়দিনে এসে ফ্রন্ট এতটাই যান্ত্রিক, এতটাই নিষ্ঠুর আর ক্ষতবিক্ষত হয়ে উঠেছিল যে, এমন কোনো অলৌকিক ঘটনার আর জায়গা ছিল না। ১৯১৪ সালের সেই বড়দিন রয়ে গেল একমাত্র—যুদ্ধযন্ত্রের বিরুদ্ধে এক ভঙ্গুর বিদ্রোহ, এক রাতের মানবিকতা।
তবুও এই গল্প মরে না। প্রতি ডিসেম্বরে এটি আবার বলা হয়, কারণ এটি যুদ্ধের মানচিত্র বদলায়নি ঠিকই, কিন্তু যুদ্ধের ভেতরে আটকে থাকা মানুষদের সত্যিটা উন্মোচন করেছে। বড়দিনের যুদ্ধবিরতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আদেশ, ভয় আর টিকে থাকার নিয়মে গড়া পৃথিবীতেও মানুষ সহানুভূতি বেছে নিতে পারে। এই গল্প ম্লান হতে চায় না, কারণ এটি সময়কে অতিক্রম করা এক আকাঙ্ক্ষার কথা বলে: “শান্তি ক্ষণস্থায়ী হতে পারে, কিন্তু তার সম্ভাবনা কখনো পুরোপুরি হারায় না।”










এইটাই। শান্তি ক্ষণস্থায়ী হতে পারে । কিন্তু তার সম্ভবনা কখনো পুরোপুরি হারায় না। ভালো লিখলে সমুদ্র। খুবই ভালো লিখলে।💖🎄🌲🎉
আবার বিপ্লবও তাই, পরিবর্তন আনে, উন্নয়ন আনে, চাহিদা প্রাপ্তি অধিকার আদায়ে, আবার তা দীর্ঘ স্হায়ী নাও হতে পারে।যেমন শ্রমকোড বা শ্রমিকদের কাজের ডিউটি র সময় সূচি।মধ্যযুগ বা পিছন দিকে ফিরতে চায় বা ফেরেও, দাসপ্রথা য়। কিন্তু তাতে বিপ্লব কি থামে!থামে না।
এই গড়া আর ভাঙার মধ্যেই বিপ্লব মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার নামই জীবন।।
Good written.কি ভালো লিখলে যে ।
বড়োদিন এ এক আলাদাই আখ্যান।
নিলাম, রাখলাম প্রফাইল সঞ্চয়ে।♥️🌲😌✊