একটি কাল্পনিক অপরাধ কাহিনী
(এই কাহিনীর স্থান, কাল, পাত্র, নামের সঙ্গে যদি কোন ঘটনার মিল পান জানবেন সেটি নেহাতই কাকতালীয়)
” কান্দে শুধু মন কেন কান্দেরে
কান্দে শুধু মন কেন কান্দেরে …
মাইনষের স্বপন, ঘুনে ধরা বৈঠা যেন
দুমড়ায় মুচড়ায় সব বন্ধুরে …”
পূর্ব কথা: শোষণ, অত্যাচার ও লুঠ করে চলা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে সহস্র বীর শহীদের বলিদান এবং ভারতবাসীর ত্যাগকে নস্যাৎ করে ব্রিটিশ সরকার রাজাকার, মুজাহিদ, জেহাদি, আর্যসমাজী, স্বয়ংসেবকদের দিয়ে সম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দিল। এই রক্তবন্যার মধ্যেই সুযোগসন্ধানী কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতৃত্ব, বিড়লা, ইস্পাহানী প্রমুখ বৃহৎ ব্যবসায়ীদের নিয়ে ব্রিটিশ শাসকরা অর্থনীতিক নিয়ন্ত্রণ রেখে দেশটাকে তিনভাগ করে ভারতের দুদিকে দুটি ইসলামিক পাকিস্তান বানিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করল। সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত হল পাঞ্জাব ও বাংলা। বিশেষ করে বাংলা ও বাঙালি হিন্দু যাদের ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে সবচাইতে বেশি অবদান।
এরপর পেয়ে পাওয়া চোদ্দোয়ানা ক্ষমতা পেয়ে গান্ধী টুপি পরা কংগ্রেস নেতারা এবং তাদের হরিহরআত্মা অসাধু ব্যবসায়ী ও অত্যাচারী সামন্তপ্রভুরা ব্রিটিশের মতোই দুহাতে শোষণ ও লুঠ শুরু করলেন। রাষ্ট্র, সমাজ সংস্কৃতি সর্বত্র দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ল। স্বাভাবিকভাবেই স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, স্বেচ্ছাচার ঘটে চলল।
প্রায় ৩০ বছর কংগ্রেসী স্বৈরাচারী শাসনের পর সমস্যাসঙ্কুল এবং পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে আসা হিন্দু উদ্বাস্তু ও রুজি রোজগারের আশায় চলে আসা মুসলমান জনসংখ্যায় ভরা পশ্চিমবঙ্গে গণ আন্দোলন ও গণ রায়ে বামপন্থীরা ক্ষমতায় এলেন। সাধারণ মানুষের থেকে ক্রমশ দূরে সরে তাদের সুবিধাবাদী দাম্ভিক নেতৃত্ব এই দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও স্বেচ্ছাচারকে সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিলেন।
৩৪ বছর রাজত্ব করার পর গণ আন্দোলনে ও গণ রায়ের মাধ্যমে সততার প্রতিমূর্তি লুম্পেন তৃণমুল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বামদের হটিয়ে ক্ষমতায় এলেন এবং এসেই অসততার চূড়ান্ত প্রতিমূর্তি হয়ে উঠলেন। সারদা থেকে আরম্ভ করে প্রতিটি বিষয়ে এত লুঠপাট শুরু করলেন যা কোনদিন বাঙালি কল্পনা করতে পারেনি। পুরো সমাজ ও ব্যবস্থাটাতেই ঘুন ধরিয়ে দিলেন। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হল। নীল সাদা বাড়ি ও ফাঁপানো সংখ্যাতত্ত্বের আড়ালে তোলাবাজি, স্বজনপোষণ ও স্বেচ্ছাচারের উল্লাসক্ষেত্র হয়ে উঠল। স্বাস্থ্য সাথীর ঢক্কানিনাদের নামে বীমা কোম্পানির হাতে, ন্যায্য মূল্যের ওষুধের নামে কমা ওষুধ, স্বাস্থ্য শিক্ষাকে দুরমুশ করা ইত্যাদি চলতে লাগল। নির্মল মাঝি, শান্তনু সেন, সুদীপ্ত রায়ের মত তৃতীয় শ্রেণীর তোলাবাজদের ছাপিয়ে শ্যামাপদ, সুশান্ত, অভিক, বিরূপাক্ষ, সুহৃতা, সন্দীপ, নারায়ণ নিগম, শুভাঞ্জন দাস, দিলীপ মন্ডল প্রমুখ নতুন স্বাস্থ্য মাফিয়াদের জন্ম হল যারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ছিবড়ে করে আরও বেশি করে অবৈধ উপায়ে তোলা অর্থ মমতাকে সরবরাহ করে তার নেক নজরে এল।
আর জি করের দুরবস্থা: প্রাচীন নামী মেডিকেল কলেজ আর জি করে সন্দীপ মাফিয়া জাঁকিয়ে বসে পড়াশোনার পাঠ উঠিয়ে দিয়ে সন্ত্রাস, গুন্ডামি, তোলাবাজি, অসভ্যতা, বিকৃতি আর বেলেল্লাপনার এক রঙ্গমঞ্চ তৈরি করল এবং জালি ওষুধ ও সরঞ্জাম, ব্যবহৃত সরঞ্জাম মৃতদেহ ও বর্জ্য বিক্রি, পাশ ফেল, দোকান, ক্যান্টিন, কার পার্ক সব কিছু থেকে দুহাতে টাকা কামাতে শুরু করল। যারা সামান্য বাধা দিল বা প্রতিবাদ করল তাদের বিপদে ফেলে মমতা ও নিগমের সাহায্যে দূরে বদলি করে দিল। মমতার বিশেষ অনুপ্রেরণাধন্য সন্দীপের অপরাধ সাম্রাজ্যে বাকিরা এমন কি তার চেস্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান, ইউনিট প্রধান ও অন্যান্যরা মাফিয়া ডনের কাছে নতজানু হলেও একটি কর্তব্যপরায়ণ প্রতিবাদী স্নাতকোত্তর চিকিৎসক ছাত্রী যে কিনা শহরতলির অভাবী পশ্চাদপদ জাতির উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দু পরিবার থেকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ শিখে ও লড়াই করে উঠে এসেছে কিছুতেই মাথা নোয়ালো না। ক্রুদ্ধ সন্দীপ ডন ও ঘাতক বাহিনী তাকে চরম শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল যেরকম আগেও কিছু ক্ষেত্রে তারা করেছে এবং তার জন্য পরিকল্পনা শুরু করল।
৯ আগষ্টের কালো রাত্রি: ঐ রাতে টানা দুদিন দুরাত ডিউটি দিয়ে তিলোত্তমা যখন ক্লান্ত তখন কোন কল বুক দেখিয়ে বা অন্য কোনভাবে বুঝিয়ে তার সহকর্মী কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার তাকে চেস্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে উপরে সন্দীপ মাফিয়ার খাস তালুক নির্জন অর্থপেডিকস থিয়েটারে নিয়ে গেল। রেভ পার্টি করা সন্দীপ বাহিনীর উন্মত্ত ঘাতকরা তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একেবারে প্রস্তুত হয়ে ছিল। অনেকে মিলে তার উপর অনেকক্ষণ ধরে ভয়ানক অত্যাচার চালাল। বন্ধ ওটির মোটা দেওয়াল ও ডিজে সাউন্ড ভেদ করে প্রতিবাদী তিলোত্তমার করুণ আর্তনাদ বাইরে পৌঁছল না।
তারপর মৃত বা প্রায় মৃত অবস্থায় তিলোত্তমাকে রোগীদের মত সাজিয়ে কয়েকজন আততায়ী পিছনের লিফট দিয়ে নামিয়ে চেস্ট ডিপার্টমেন্ট এর সেমিনার হলে একটা পাটাতনের উপর রেখে পাশের ঘরের বাথরুমে হাত ধুয়ে সিঁড়ি দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে চলে গেল। প্রসঙ্গত ঐ পুরো এলাকায় সিসি টিভি নেই এবং ওখানকার অন ডিউটি নার্স ও গ্রুপ ডি ও সুইপারদের মুখবন্ধ করার ফরমান জারি করে রাখা হল।
সন্দীপ গভীর রাতে পিছন দিক থেকে এসে মৃতদেহ দেখে গেল এবং প্রমাণ লোপের জন্য পরবর্তী নির্দেশ দিয়ে গেল। তার নির্দেশ মত সন্দীপ বাহিনীর জন্য যৌনকর্মী সরবরাহকারী লুচ্চার মদ্যপ সঞ্জয় রায়কে সামনের দিক থেকে যেখানে সিসি টিভি আছে সেখান দিয়ে ডেকে এনে তিলোত্তমাকে ঐ অবস্থার মধ্যেও ধর্ষণ করানো হল। সন্দীপের নির্দেশেই তার দুষ্কর্মের স্যাঙ্গাত টালা থানার ওসি অভিজিৎ মন্ডল টালা থানা ও আরজিকর ফাঁড়িকে নিষ্ক্রিয় রাখল এবং রাতে প্রিন্সিপাল অফিসে ঢুকে বিতর্কিত সিসি টিভি ফুটেজগুলি নষ্ট করে দিল।
পরেরদিন সকালে সন্দীপের সহযোগী রাজ্য স্তরের ঘাতক নেতা সুশান্ত রায়, অভিক দে, সৌরভ পাল, বিরূপাক্ষ বিশ্বাস প্রমুখরা এসে দ্বিতীয় ক্রাইম সিনটাও তছনছ করে দিল এবং মৃতদেহ লোপাটের পরবর্তী ষড়যন্ত্র করতে লাগল। সেই সময়েই লোপাটের আরও পরামর্শের জন্য সন্দীপের ফরেনসিক পরামর্শদাতা দেবাশীষ সোম, আইনি পরামর্শদাতা শান্তনু দে, ডিজিটাল সহযোগী পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় প্রমুখদের ডেকে আনা হল। তারা দীর্ঘসময় মৃতদেহের ঘরে বৈঠক করলেন। এরপর একে একে এসে পড়লেন নারায়ণ নিগম, কৌস্তুভ নায়েক প্রমুখ মদতদাতারা। ম্যাডাম মক্ষীরানীর কাছ থেকে খবর পেয়ে চলে এলেন তার পদলেহী কামদুনি ধর্ষণ – হত্যা ও ভবানীপুর হত্যা চাপা দেওয়া পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। মক্ষীরানীর নির্দেশে দুবাইয়ের সিম লাগানো একটি সিম থেকে ধামাচাপার বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করছিলেন সারদা কেলেঙ্কারি ধামা চাপা দেওয়া তার একান্ত সহচর রাজীব কুমার। আরেক পরামর্শদাতা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের উপর নানারকম সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন।
মৃতদেহ হ্যাপিশ: পুলিশের সাহায্যে মৃতদেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। পুলিশ মর্গে নিজেদের মত ময়নাতদন্ত করে সাধারণ বাবা – মাকে ডেকে চাপ দিয়ে অন্ত্যেষ্টি করে ফেলা হবে। কিন্তু ততক্ষণে বিষয়টি জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে। ভয়ঙ্কর সন্দীপ বাহিনীর দাপট এবং পুলিশ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তর কর্তৃক তাদের যাবতীয় মদতের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও অনিকেত মাহাতোর নেতৃত্বে জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন শুরু করলেন। পরবর্তী প্রচেষ্টা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়াও ব্যর্থ হলে তিলোত্তমার বাবা – মাকে তিনবার তিনরকম দুঃসংবাদ দিয়ে নিয়ে এসেও কিছুতে দেহ দেখতে দিলনা। তাদের পরিবারকে সন্দীপ বাহিনীর জুনিয়র ডাক্তাররা ও পুলিশ ঘিরে রাখল। অন্যদিকে দ্বিতীয় ক্রাইম সিন ও মৃতদেহ নিজেদের মত সাজিয়ে উত্তর চব্বিশ পরগনার মাফিয়া ডন ও তৃণমূল সভাপতি ও বিধায়ক নির্মল ঘোষ যিনি কয়েকমাস আগে নিজের দলের এক কাউন্সিলর বিরোধিতা করায় খুন করিয়েছেন এবং তার সাকরেদ সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়, সোমনাথ দে প্রমুখ, ডিসি নর্থ অভিষেক গুপ্তার নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং সন্দীপ বাহিনীর ঘেরা টোপে পরিবারের অমতে ও সম্পূর্ণ নিয়ম বিরুদ্ধভাবে নাম কো ওয়াস্তে সুরহতাল করে এবং নিজেদের লোক দিয়ে তড়িঘড়ি অসম্পূর্ণ ময়না তদন্ত করে মৃতদেহ দ্রুত পুড়িয়ে দিয়ে ঘাতক এবং তাদের মদদদাতাদের সরকারি প্রহরায় সমস্ত বায়োলজিক্যাল প্রমাণ নষ্ট করে দেওয়া হল।
ভিসেরা ঠিকমত সংরক্ষণ করা হল না, তার রিপোর্টও নাকি এখন অবধি পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত হাসপাতাল, স্বাস্থ্য ও পুলিশ প্রশাসন হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় মৃত একমাত্র কন্যার শোকে বিধ্বস্ত বাবা – মায়ের পাশে না দাঁড়িয়ে তাদের যতটা পারে হয়রানি করল। এমনকি প্রাথমিক এফআইআর টুকুও করল না।
হাপিশের আরও খেলা: সুশান্তপুত্র সৌত্রীক সহ আততায়ীদের পুলিশ প্রশাসন পালিয়ে যাওয়ার এমনকি বিদেশে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিল। সন্দীপ বাহিনী আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের উপর চড়াও হল। সন্দীপের নির্দেশে হাত ধোয়ার বাথরুমটা ভেঙ্গে ফেলা হল। পুলিশ কোন তদন্ত না করেই সঞ্জয় রায় কে ধরে একমাত্র দোষী সাব্যস্ত করল। মমতা তার সহচর – সহচরীদের নিয়ে মিছিল ও সভা করে তার ফাঁসি চাইলেন। উত্তরসূরী ভাইপোও তাতে সুর মেলালেন। জনরোষকে সামাল দিতে দালাল কুনালদের নামালেন, কড়া বিলের কথা ঘোষণা করলেন। নিগম – কৌস্তুভ নায়েকরা নর্থ বেঙ্গল লবির ঘাতক নেতাদের উপস্থিতির ন্যায্যতা প্রমাণ করতে ব্যাকডেটেড জালি অর্ডার বের করলেন। ডিসি সেন্ট্রাল অভিক দে কে ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞ আখ্যা দিলেন। ১৪ তারিখ রাতে পরিকল্পনামাফিক বেলগাছিয়া, কামারহাটি প্রভৃতি জায়গা থেকে তৃণমূলের দুর্বৃত্তদের জড়ো করে আন্দোলনকারীদের আক্রমণ ও বাদবাকি প্রমাণ লোপের ব্যবস্থা হল। পুলিশ তাদের পথ সুগম করে রেখেছিল। প্রথমে পুলিশ অফিসারদের দিয়ে পরে নিজে তিলোত্তমার বাবা – মাকে টাকার টোপ দিয়ে মমতা চুপ করাতে চাইলেও তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেন। সন্দীপকে পুরস্কার হিসাবে শহরের অন্য একটি বড় মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ করলেন। আজও তার বিরুদ্ধে ঠিকভাবে সাসপেনশন অর্ডার হয়নি বা তার বিরুদ্ধে চার্জ শিট পেশের অনুমতি দেওয়া হয় নি। আরজিকরে বসানো হল আরেক স্বাস্থ্য মাফিয়া সুহৃতা পালকে।
আন্দোলনের জোয়ার, তদন্তের ভাটা: এরপর তিলোত্তমাকে পৈশাচিক অত্যাচার ও ধর্ষণ করে হত্যার প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের শুরু করা আন্দোলন রাজ্য, দেশ ও পৃথিবী জুড়ে শক্তিশালী নাগরিক আন্দোলনে পরিণত হল এবং আছড়ে পড়তে লাগল। প্রমাদ গুনলেন মমতা।
তিনি (১) হাইকোর্টের কড়া পদক্ষেপের শুরুতেই রাজ্যবাসীর করের টাকায় চুবিয়ে রাখা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি চন্দ্রচূড়, আইনজীবী মনু সিঙ্গভি, কপিল সিব্বলদের বিষয়টিকে ধামা চাপার নির্দেশ দিলেন এবং সেই মোতাবেক তারা মামলাটিকে ছো মেরে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে গিয়ে তার শ্রাদ্ধশান্তির ব্যবস্থা করলেন। (২) আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা তার অনুকম্পায় থাকা লোকজনদের মাধ্যমে আন্দোলনকে তার ও সরকার বিরোধী না করে এক শ্লোগানধর্মী রামধনু সাংস্কৃতিক আন্দোলনের চেহারা দিলেন এবং কিছুতেই তাতে বিরোধী দলগুলিকে ঘেঁষতে দিলেন না। (৩) জুনিয়র ডাক্তারদের আলোচনার টেবিলে এনে, সময় নষ্ট করে, আলোচনার অভিমুখ ঘুরিয়ে দিয়ে আন্দোলনকে দুর্বল করে দিলেন। (৪) শহুরে মধ্য ও উচ্চবিত্তের নিরীহ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে থিতিয়ে যাওয়ার সময় দিলেন এবং আন্দোলন তিন মাসের মধ্যে থিতিয়ে গেল।
ইতিমধ্যে সিবিআই তদন্ত শুরু করল। বায়োলজিকাল প্রমাণ না পেলেও পারিপার্শ্বিক ও ডিজিটাল (মোবাইল তথ্য) বহু সূত্র তারা পেয়ে গেল এবং সন্দীপ, অভিজিৎ ও আশীষ পান্ডেকে গ্রেফতার করল। তাদের প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট দেখে বিচারপতিরা শিউরে উঠলেন। সেই রিপোর্ট চন্দ্রচূড়দের মাধ্যমে মমতার কাছে পৌঁছল। তিনি আবার প্রমাদ গুনলেন। এবার ধরলেন দাদা মোদি ও তার বড় চ্যালা অমিত শাহকে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের করের টাকার এক বড়সড় অঙ্কে আবার রফা হল। তার সঙ্গে এক দেশ এক ভোট পরিকল্পনায় বিরোধিতা না করা এবং ইণ্ডিয়া জোটকে ভেঙ্গে দেওয়া।
তাই হল। কেন্দ্র সিবিআই ও সুপ্রিম কোর্টকে চেপে দিল। সিবিআই কার্যত তদন্ত বন্ধ করে চার মাস সময় নষ্ট করে কলকাতা পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট অর্থাৎ সঞ্চয় রায়ই একমাত্র দোষীর চার্জ শিট পেশ করল। সন্দীপ ও অভিজিতের বিরূদ্ধে চার্জ শিট পেশ করতে অক্ষম হয়ে তাদের ছাড়ার ব্যবস্থা করে দিল। অন্যদিকে চন্দ্রচূড় ও অন্য বিচারকরা সুপ্রিম কোর্টে চার মাস সময় নষ্ট করিয়ে মামলাটার দফারফা করে আরও চার মাস পরে শুনানির তারিখ দিলেন। এভাবেই মমতা নিজের কুর্শি এবং তার নেতৃত্বাধীন মাফিয়া – অপরাধতন্ত্রকে অটুট রাখতে সক্ষম হলেন এবং ঘর গুছিয়ে উপ নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়লাভ করে ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন।
সাজানো বিচার: সকলেই জানেন রাজ্যের নিম্ন আদালতগুলি এখন মমতার নিয়ন্ত্রণে। সেখানে বিচারকদের কিছু করা মুশকিল। তার উপর সিবিআই কোন তদন্ত না করে কলকাতা পুলিশের চার্জশিটই পেশ করে বিচারের পরিধি সাজানো একটি ছোট বৃত্তের মধ্যে নিয়ে গেল। তারমধ্যেও সরকার পক্ষের ও নাগরিক সমাজের একটি অংশের প্রবল চাপের মধ্যেও শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেও প্রাণদণ্ড না দিয়ে মামলাটি বাঁচিয়ে রাখার একটি পথ রেখে দিলেন। সেই সঙ্গে সমাপ্ত হল তথাকথিত তদন্ত ও বিচারের প্রথম পর্ব।
বিরুদ্ধমতে প্রভাবশালী অভিযুক্তদের পরিবর্ত আসামী (Proxy Convict) সঞ্জয়কে মুখ না খোলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে প্রচুর অর্থ ও কিছুদিন পরে ছড়িয়ে আনার প্রতিশ্রুতিতে এবং সেইমতই রায়।
সোনালী রূপোলী আলোর খোঁজে: কিন্তু কিছু জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র চিকিৎসক, সৎ সাংবাদিক ও আইনজীবী এবং অজস্র সাধারণ নাগরিক এবং অবশ্যই শহীদ তিলোত্তমার সংগ্রামী পিতা – মাতা এখনও হাল ছাড়েননি। সমস্ত প্রতিকূলতা, ষড়যন্ত্র ও দমনের মধ্যেও রাস্তায় নেমে এবং কোর্টের মধ্যে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন প্রকৃত সত্যের উন্মোচনের জন্য। তাদের এই সমবেত প্রচেষ্টায় সত্য প্রকাশ পাবেই, অপরাধীরা ধরা পড়বে এবং তাদের শাস্তি হবে – এই আশায় আমরা আবার বুক বাঁধি।
” … ঢেউয়ের তালে নাচে ডিঙ্গা
ঝিলমিল নদীর কূলে আসিরে। …
যখন সোনালী রূপোলী আলো,
নদীর বুকে বাসা খোঁজে।
কান্দে না মন আর কান্দে না রে – ।”