ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫
ঘটনার এত দিন পরেও অভয়া আন্দোলন থামছে না–এই বিষয়ে রাজ্য সরকার ও তার প্রশাসন খুব বিরক্ত। মনে থাকতে পারে ২০২৪-এর ৯ আগষ্ট অভয়ার মৃতদেহ পাওয়া যায় আর জি কর মেডিকাল কলেজ হাসপাতালের সেই জায়গায় যেখানে অভয়া সরকারি চিকিৎসা পরিষেবায় নিযুক্ত ছিল। সেখানেই তাকে ধর্ষণ-খুন করা হয়েছিল। যেখানে অভয়ার মৃতদেহ পাওয়া গেছিল তার আশেপাশের ঘর ভাঙার অনুমতি দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য সচিব, হয়তো বা প্রমাণ লোপাটের কাজে সাহায্য করতে। ১৪ আগষ্ট ঐ হাসপাতালের ঐ বাড়িতেই ব্যাপক ভাঙচুর করে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছিল। সেই হাসপাতালে চত্বরে পুলিশের শীর্ষ কর্তা বলেছিলেন তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তার দলবল নিয়ে ঐ ঘটনার “প্রতিবাদ” জানাতে মিছিল করেছিলেন।
সেই সব ঘটনার সমগ্র বিচার প্রক্রিয়া এখনো অসমাপ্ত। এবং আন্দোলন চলছে। অভয়া আন্দোলনের শুরু থেকে সরকার ও সরকারি প্রশাসন আন্দোলনরত চিকিৎসকদের নানা উপায়ে হেনস্তা করার চেষ্টা করে গেছে। জুনিয়র ডাক্তারদের মুখ্যমন্ত্রীর দুয়ারে সেই “মধুমাখা, আকুল আকুতি” চায়ের আমন্ত্রণ তো ভোলার নয়। ভোলার নয় নবান্নের সেই কথোপকথন যেখানে অভিযুক্তর নতুন সংজ্ঞা মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করে দিলেন। জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষে অনিকেত মাহাতো প্রশ্ন তুলল। সেইদিন এবং তার আগে, পরে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন তিনি যা বলবেন সেটিই শেষ কথা। এটা কেবল তার দল, মন্ত্রীদের মানতে হবে তাই নয়, এ রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক কর্তা, পুলিশ, সরকারী কর্মীদের, এমনকি সকল রাজ্যবাসীর জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।
প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই সর্বভারতীয় ক্যাডারের, এঁরা কেন অনিয়ম বেনিয়মের যে কাজ তাঁদের দিয়ে করানো হয় তার কোন সম্মিলিত প্রতিবাদ করেন না তা বোধগম্য নয়! আরও বিস্ময়ের চিকিৎসক আমলা ও প্রশাসকদের ভূমিকা। একই পেশার সহকর্মীদের নৈতিক কর্মের প্রতি তাঁদের বিরূপতা, তাদের উপর অন্যায় আক্রমণে সার্বিক সমর্থন, সহযোগিতা।
গতকাল জুনিয়ার ডাক্তাররা যখন প্রশাসকদের সঙ্গে কথা বলতে স্বাস্থ্য ভবন গেলেন তখন সে অঞ্চলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ নম্বর ধারা লাগানো হলো অর্থাৎ চার জনের বেশি একসাথে জড়ো হতে পারবেন না। চারজনের কম, মাত্র তিনজন জুনিয়র ডাক্তার প্রতিনিধিকেও স্বাস্থ্য ভবনে ঢুকতে দিলেন না দায়িত্বে থাকা পুলিশ আধিকারিকরা। বন্ড পোস্টিং এ থাকা চিকিৎসকদের দায়িত্ব ডিএইচএস-এর, তিনি বল ঠেলে দিলেন ডিএমই-র কোর্টে। চিকিৎসা প্রশাসনের দুই কর্তা ডিএম ই এবং ডিএইচএস কেউ অনিকেত ও তার দুই সঙ্গীর মুখোমুখি বসে তাদের কথা শোনার শিষ্টাচারটুকুও দেখাতে পারেননি। আমরা জানি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনে অনিকেতকে আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোষ্টিং দেওয়ার চুড়ান্ত ক্ষমতা তাঁদের নেই। সেই কথাটা ওদের তিনজনের সামনে বলার মত সাহস এবং ন্যূনতম নৈতিক চরিত্রের সততাটুকুও তারা কার পদতলে বিসর্জন দিয়ে এসেছেন এই পদে থাকার লালসায়!
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশকে হেলায় উড়িয়ে দিয়ে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করার যে নজির স্থাপন করলো স্বাস্থ্য দপ্তর তা ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত।
দেশের আদালত ছাড়াও রাজ্যের মানুষের আদালতে সেই বিচারের আহ্বান জানাচ্ছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স।









