অতঃপর দেশের রাজা-রানী (রূপকার্থে) নির্বিঘ্নে, নিরুত্তাপ এবং নিরুদ্বিগ্ন চিত্তে, প্রসন্ন হৃদয়ে কালাতিপাত করিতে লাগিলেন…। দুষ্ট লোক ধরা পড়িয়াছে। কোটাল উহাকে পাকড়াও করিয়াছে। কারাগারে নিক্ষিপ্ত হইয়াছে। এবার বিচারালয়ে উহার বিচার হইবে। সাজা তো হইবেই।
সবাই হরিদ্ধ্বনি কর। উদ্বাহু হইয়া আনন্দ প্রদর্শন কর। এ ধরা কলুষমুক্ত হইবে। বিচারালয়ের উপরে বিচারালয়। তাহার উপরে সর্বোচ্চ বিচারালয়। সর্বত্র দুষ্ট লোককে চিনিয়া ফেলা হইয়াছে – কোন সন্দেহের অবকাশ নাই।
কিছু মেধাসম্পন্ন, গোঁয়ারগোবিন্দ এবং বিচার-প্রার্থী যুবকযুবতী কিছুদিনের জন্য স্বল্পস্থায়ী জনরোল তৈরি করিয়াছিল বটে, তবে তাহাতে নগর কোটাল, ন্যায়ালয় বা রাজা-রানী কেহই বিচলিত হন নাই। তেল খাওয়া যন্ত্রের মতো মসৃণভাবে সমগ্র বিষয়টি নিতান্ত মসৃণভাবে সুচারুরূপে সম্পন্ন করিয়াছে। রাজা-উজির-মন্ত্রী-সান্ত্রী-কোটাল-ন্যায়ালয় সবাই তাহাদের কাজ সুসম্পন্ন করিয়াছে – পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ ও সুসংবদ্ধ যোগাযোগ রক্ষা করিয়া।
কমলাকান্তের কথা
শ্রীভীষ্মদেব খোশনবীস লিখিয়াছেন – “অনেকে কমলাকান্তকে পাগল বলিত। সে কখন্ কি বলিত, কি করিত, তাহার স্থিরতা ছিল না। লেখাপড়া না জানিত, এমন নহে … কিন্তু সে বিদ্যায় অর্থোপার্জ্জন হইল না … আসল কথা এই, সাহেব সুবোর কাছে যাওয়া আসা চাই।”
কমলাকান্ত একবার বাজারে গিয়াছিল। তাহার মধ্যে “বিচারের বাজার”ও ছিল। কমলাকান্ত উহার দপ্তরে লিখিয়াছে – “বিচারের বাজারে গেলাম – দেখিলাম সেটা কসাইখানা। টুপি মাথায়, শামলা মাথায় – ছোট বড় কসাইসকল, ছুরি হাতে গোরু কাটিতেছে। মহিষাদি বড় বড় পশুসকল শৃঙ্গ নাড়িয়া ছুটিয়া পলাইতেছে; – ছাগ মেষ এবং গোরু প্রভৃতি ক্ষুদ্র পশুসকল ধরা পড়িতেছে … আমি সেলাম করিয়া পলাইলাম।”
কমলাকান্ত বিদায় লইবার আগে জানাইয়াছিল – “তখন আমি একায় এক সহস্র – এখন আমি একায় আধখানা। কিন্তু একার এত বন্ধন কেন? যে পাখীটি পুষিয়াছিলাম – কবে মরিয়া গিয়াছে – তাহার জন্য আজিও কাঁদি; যে ফুলটি ফুটাইয়াছিলাম – কবে শুকাইয়াছে তাহার জন্য আজিও কাঁদি; যে জলবিম্ব, একবার জলস্রোতে সূর্যরষ্মি সম্প্রভাত দেখিয়াছিলাম – তাহার জন্য আজিও কাঁদি।”
আমরাও যে কাঁদি, “অভয়া”! বিচারের বাজারে যে হুলস্থুল কাণ্ড। কিন্তু তোমার বিচার কোথায়?
হ য ব র ল
সজারুটা ভয়ানক কাঁদতে লাগল, ‘হায়, হায়! আমার পয়সাগুলো সব জলে গেল! কোথাকার এক আহাম্মক উকিল দলিল খুঁজে দিলে পায় না।”
ন্যাড়াটা এতক্ষণ আড়ষ্ট হয়ে ছিল, সে হঠাৎ বলে উঠল, ‘কোনটা শুনতে চাও? সি যে – বাদুড় বলে রে ও ভাই সজারু – সেইটে? সজারু ব্যস্ত হয়ে বলল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, সেইটে, সেইটে।”
অমনি শেয়াল আবার তেড়ে উঠল, ‘বাদুড় কি বলে? হুজুর, তাহলে বাদুড়গোপালকে সাক্ষী মানতে আজ্ঞা হোক।’
কোলা ব্যাঙ গাল গলা ফুলিয়ে হেঁকে বলল, ‘বাদুড়গোপাল হাজির?’
সবাই এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখল, কোথাও বাদুড় নেই। তকন শেয়াল বয়ল, ‘তাহলে হুজুর, ওদের সক্কলের ফাঁসির হুকুম হোক।’ কুমির বল, ‘তা কেন? এখন আমরা আপিল করব?’
প্যাঁচা চোখ বুজে বলল, ‘আপিল চলুক, সাক্ষী আনো।’ …
শেয়াল জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি মোকদ্দমার কিছু জান?’ হিজবিজবিজ্ বলল, ‘তা আর জানি নে? একজন নালিশ করে, তার একজন উকিল থাকে, আর একজনকে আসাম থেকে নিয়ে আসে, তাকে বলে আসামী, তারও একজন উকিল থাকে। এক-একদিকে দশজন সাক্ষী থাকে। আর একজন জজ থাকে, সে বসে বসে ঘুমোয়।’ …
তখন সবাই বলল, ‘ঐ যা! আসামী তো কেউ নেই।’ তাড়াতাড়ি ভুলিয়ে-ভালিয়ে ন্যাড়াকে আসামী দাঁড় করান হল। ন্যাড়াটা বোকা, সে ভাবল আসামীরাও বুঝি পয়সা পাবে, তাই সে কোন আপত্তি করল না।
তোতাকাহিনী
সংসারে অন্য অভাব অনেক আছে, কেবল নিন্দুক আছে যথেষ্ট। তারা বলিল, “খাঁচাটার উন্নতি হইতেছে, কিন্তু পাখিটার খবর কেহ রাখে না।”
কথাটা রাজার কানে গেল। তিনি ভাগিনাকে ডাকিয়া বলিলেন, “ভাগিনা, এ কী কথা শুনি।”
ভাগিনা বলিল, “মহারাজ, সত্য কথা যদি শুনিবেন তবে ডাকুন স্যাকরাদের, পণ্ডিতদের, লিপিকরদের, ডাকুন যারা মেরামত করে এবং মেরামত তদারক করিয়া বেড়ায়। নিন্দুকগুলো খাইতে পায় না বলিয়াই মন্দ কথা বলে।”
জবাব শুনিয়া রাজা অবস্থাটা পরিষ্কার বুঝিলেন, আর তখনি ভাগিনার গলায় সোনার হার চড়িল। …
পাখিটা মরিল। কোন্কালে যে, কেউ তা ঠাহর করিতে পারে নাই। নিন্দুক লক্ষ্মীছাড়া রটাইল, “পাখি মরিয়াছে।”
ভাগিনাকে ডাকিয়া রাজা বলিলেন, “ভাগিনা, এ কী কথা শুনি।”
ভাগিনা বলিল, “মহারাজ, পাখিটার শিক্ষা পুরা হইয়াছে।”
রাজা শুধাইলেন, “ও কি আর লাফায়।”
ভাগিনা বলিল, “আরে রাম! ”
“আর কি ওড়ে।”
“না।”
“আর কি গান গায়।”
“না।”
“দানা না পাইলে আর কি চেঁচায়।”
“না।”
রাজা বলিলেন, “একবার পাখিটাকে আনো তো, দেখি।”
পাখি আসিল। সঙ্গে কোতোয়াল আসিল, পাইক আসিল, ঘোড়সওয়ার আসিল। রাজা পাখিটাকে টিপিলেন, সে হাঁ করিল না, হুঁ করিল না। কেবল তার পেটের মধ্যে পুঁথির শুকনো পাতা খস্খস্ গজ্গজ্ করিতে লাগিল।
বাহিরে নববসন্তের দক্ষিণহাওয়ায় কিশলয়গুলি দীর্ঘনিশ্বাসে মুকুলিত বনের আকাশ আকুল করিয়া দিল।
উপসংহার
আমাদেরও পাখীটি তাহার কর্মস্থলে নিরাপদ খাঁচার মধ্যে মরিয়াছে। শুধু মরে নাই, ধর্ষিতা এবং দৃশ্যমানভাবে নির্যাতিতা হইয়াছে। “আমরা বিচার চাই” বলিয়াছিলাম। বলিয়াছিলাম “বিচার দাবী করি”। কাহার কাছে? বধির, দৃষ্টি ও হৃদয়হীন রাষ্ট্র নামক যন্ত্রটির কাছে? সভ্যসমাজে জনতার আদালতে বিচার হয়না। একেবারেই কাম্যও নয়। শুধু জনরোল, জনোচ্ছাসের প্লাবন হয়তো ইহা সম্ভব করিলেও করিতে পারে। সেই সঙ্গীত কী ধ্বনিত হয় আমাদের মনে?
আহ্বান, শোনো আহ্বান আসে মাঠ ঘাট বন পেরিয়ে,
দুস্তর বাধা প্রস্তর ঠেলে বন্যার মতো বেরিয়ে।
যুগসঞ্চিত সুপ্তি দিয়েছে সাড়া
হিমগিরি শুনল কি সূর্যের ইশারা।
যাত্রা শুরু উচ্ছল রোলে, দুর্বার বেগে তটিনী,
উত্তাল তালে উদ্দাম নাচে মুক্ত শত নটিনী।
এ শুধু সুপ্ত যে নবপ্রাণে জেগেছে রণসাজে সেজেছে
অধিকার অর্জনে, আহ্বান ॥
অন্তর্জলী যাত্রা
আলো ক্রমে আসিতেছে। এ নভোমণ্ডল মুক্তাফলের ছায়াবৎ হিম নীলাভ। আর অল্পকাল হইলে রক্তিমতা প্রভাব বিস্তার করিবে, পুনর্বার আমরা, প্রাকৃতজনেরা, পুষ্পের উষ্ণতা চিহ্নিত হইব। ক্রমে আলো আসিতেছে।
“অভয়া”র জন্য বাঁচিয়া থাকিবার এই রসদটুকু যেন আমরা না হারাই। যেন বি
স্মরণে না যায়। তুমি ঘুমোও সাথী, আমরা প্রহর জাগি।
Exceptional, excellent
Appropriate
চুপ উন্নয়ন ও বিকাশ চলছে, রাবড়ি দিয়ে শুরু করকে গাঁও তে কত লোক স্রেফ লটকে ঝড়ে গেল, বন্ডের ভান্ডার থেকে কৃষি খামার রাজপথে শেষ হলো গাগৈ থেকে ফোঁড়া দেবতার থানে মাথা ঠেকালো। এখন ইসকন এপিসোড চলছে সারদা দেবী থেকে নেতাজী সুভাষ এঘাট সে ঘাট হয়ে জয় মা কালী বলে বিলীন হয়ে ২৬ । এতো ঘটনায় অভয়া কোল্যাটারাল ডেমেজ।
মন খারাপ করা লেখা, তবে এক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের কাছেই বিচার প্রার্থনা করা হয়েছে। আমাদের স্বাভাবিক একটি প্রত্যাশা থাকে যে দেশের সরকার অন্তত নিরপেক্ষ থাকবেন বিশেষ করে যেখানে মানুষের জীবন এবং নিরাপত্তার বিষয় জড়িত। সেটা হল না। এ এক অদ্ভুত ধরণের সিস্টেম ফেলিওর।
তবে হাল ছাড়া চলবে না ।
অধিকার অর্জনে আহ্বান।
উপযুক্ত অনবদ্য
Asadharon lekha.
Aaj to dekhchi jei rokhhok sei vokhhok.
Bichar byabostha, sikhha, sastha sob tolanite thekeche.