এর আগে ধরা পড়েছিল জালি N95 মাস্ক, জালি স্যানিটাইজার, জালি রেমডিসিভির ওষুধ আর এবার জালি ভ্যাক্সিন। বৃত্ত সম্পূর্ণ হলো!!
সত্যি এর পর থেকে কোনো শিশুকে চেম্বারে ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় যদি সেই শিশুর বাবা মা জিজ্ঞেস করেন যে “ডাক্তারবাবু ভ্যাক্সিন টা ঠিকঠাক তো??” তাতে আমি অন্তত কোনো অপরাধ দেখবনা!!
এ দেশে, এ রাজ্যে, এ শহরে সবই সম্ভব। আমার ছবি দিয়ে যদি জালি ফেসবুক প্রোফাইল খোলা যায় তাহলে আমার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নিয়ে জালি ডাক্তারিও করা যায়।
এই যে আমরা চেম্বারে কিংবা হাসপাতালে বসে এত এত ওষুধ লিখি, রোগীরা কিনে খায়, তার মধ্যে কোনগুলো ঠিক আর কোনগুলো রদ্দি সেটা কি আমরা জানি?? পিকুতে মরণাপন্ন বাচ্চাকে যে জীবনদায়ী ইনজেকশনটা পুশ করি তাতে ওষুধ আছে নাকি নরমাল স্যালাইন সেটাও কি আমরা জানি?? সত্যি জানি না। অনেকবার দেখেছি, খুব সঠিক সময় সঠিক antibiotic দেওয়ার পরেও রুগী সুস্থ হলো না। নাও হতে পারে। সব সময় যে হবে এমন কোনো কথা নেই। অনেক জটিল কিছু হিসেব নিকেশ আছে। তবুও কেন জানি না মাঝে মাঝে মনে হয় যে antibiotic টা দিলাম তার গুণগত মান কিরকম?? আমাদের দেশে quality কন্ট্রোল কি মাত্রাতে হয়?? কত বার random sample নিয়ে টেস্ট করা হয়?? এগুলো কি নিয়ম ধরে হয়?? এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর একজন চিকিৎসক হয়েও কিন্তু জানা নেই। আমার বন্ধুমহলে কেউ এ বিষয়ে জানলে প্লিজ আলোকপাত করুন।
অন্যতম শক্তিশালী antibiotic meropenem-এর একটি 1 gram ভায়েলের একটি কোম্পানির দাম প্রায় 3000 টাকা। আর একটির দাম 300. এত তফাত কি করে হয়?? 3000 টাকার কোয়ালিটি কি 300 টাকাতে দেওয়া যায়?? যদি যায় তবে 3000 কেন?? সবারই দাম 300 না কেন?? 300 আর 3000 দুটোই কি এক রকম কোয়ালিটি কন্ট্রোল পরীক্ষা পাশ করে?? জানি না। যখনই এসব ভাবার চেষ্টা করি মাথাটা কেমন যেন গুলিয়ে যায়। মনে পরে সত্যজিতের সেই অমর সৃষ্টি যত কান্ড কাঠমান্ডুর গল্প?? জালি টিটেনাস নিয়ে মৃত্যু আর সেই থেকে রহস্যের দানা বাঁধা আর হত্যাকান্ড। সেই মগনলাল মেঘরাজরা আজও আছেন। হ্যাঁ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো কোনো শাসক রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়াতে।
প্রত্যেকটা ওষুধের প্রত্যেকটা ব্যাচ নাম্বারের থেকে random sample নিয়ে কি ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করা হয়?? করা হলে সেটা কত frequently?? সত্যি জানা নেই!!
এযুগের অস্বিনীকুমাররা জানেনা তাদের হাতের সঞ্জীবনী আদৌ কাজ করে কিনা !! কিন্তু পাপের দায়ভার তাদেরই নিতে হয়!!!
নকল হইতে সাবধান….কিন্তু নকলে টইটুম্বুর হয়ে থাকা এই সমাজে আসল খুঁজে মেলাই কষ্টকর। তা সে মানুষই হোক কিংবা ভ্যাকসিন অথবা ওষুধ!!
আর সব শেষে ফেলুদার কথা ধার করে ” যারা জাল ওষুধের কারবার করে মানুষ খুন করে, তাদের নিস্তার নেই”….