বিগত শতকের ছয় ও সাতের দশকের নকশালবাড়ির কৃষক আন্দোলন ও তারপরে ভারতবর্ষের কম্যুনিস্ট বিপ্লব-প্রচেষ্টা এখন অনেক আগেকার দিনের কথা, সেই আন্দোলনের একদা-যুবক এখন-বয়োবৃদ্ধ নেতাদের কেউ কেউ প্রায় ঊপন্যাসের মতো করে আত্মকথন প্রকাশ করছেন, এমনকি একদা-নকশাল এখন-মন্ত্রীও আত্মকথন লিখছেন। সেই আটের দশকের সমরেশ মজুমদারের কালবেলা ট্রিলজি-র আমল থেকেই মেইনস্ট্রিম সাহিত্যেও এই বিষয়ে গল্প-উপন্যাস-কবিতার বেশ ভালো জায়গা তৈরি হয়েছে। আজ থেকে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগে আমরা শৈশব-বাল্যে যেমন করে বাংলার সশস্ত্র স্বাধীনতা-সংগ্রামীদের নিয়ে গল্প-প্রবন্ধ-উপন্যাস পড়েছি, অনেকটা তেমন করেই এখন নকশাল-বিপ্লবীদের কথা পড়া যায়। ১৯৪৭-এর পট-পরিবর্তনের ফলে সশস্ত্র স্বাধীনতা-সংগ্রামীরা শ্রদ্ধেয় এবং হয়তো-বা খানিক অবান্তরও হয়ে গেছেন, নকশাল-আন্দোলনকারীরা তেমন হননি, হওয়ার কথাও নয়, তথাপি একদা-নকশালেরা কেবলমাত্র ‘একদা’ হয়েই থাকেন এই ঘরানার প্রায় সব বইতেই; আলোচ্য বইটি তাদের চাইতে অন্য গোত্রের।
.“দীপ জ্বেলে যাও” একটি নাতিদীর্ঘ বই। অনেকটা উপন্যাসের ঢঙে লেখা বইটিতে দুটো কাহিনি পাশাপাশি চলেছে—একটা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে, আরেকটা ছত্তিশগড়ে, যে ছত্তিশগড় তখনও আলাদা রাজ্য হয়ে ওঠেনি। মেডিক্যাল কলেজের বুকে তখন ছাত্র-রাজনীতির কেন্দ্রে যে সংগঠনটি, এমসিডিএসএ, তার নেতারা অধিকাংশই তখন খণ্ডবিখণ্ড নকশালপন্থী গ্রুপগুলোর সঙ্গে যুক্ত কিংবা তাদের কাছাকাছি অবস্থানে আছেন। অন্যদিকে ছত্তিশগড়ে মূলত আদিবাসী ও পিছড়ে বর্গের ঠিকা শ্রমিকদের মধ্যে নকশাল আন্দোলনের এক প্রাক্তন কর্মী মানুষের সত্যিকারের হৃদস্পন্দনকে বুঝতে চাইছেন—তাঁর নাম শংকর। শংকর গুহনিয়োগী।
.
একসময় মেডিক্যাল কলেজের এক তরুণ চিকিৎসক চিকিৎসা-রাজনীতি-জীবনকে একসঙ্গে মেলানোর সংকল্প নিয়ে ছত্তিশগড়ে যায়, ও শংকর গুহনিয়োগীর ‘সংঘর্ষ ও নির্মাণ’ কর্মের শরিক হয়ে পড়ে।
বাকিটুকু দীপ জ্বেলে যাবার কাহিনি।
.
দীপ জ্বেলে যাও। রুমঝুম ভট্টাচার্য। প্রণতি প্রকাশনী। পৃষ্ঠাসংখ্যা ১০৪। মুদ্রিত মূল্য ১৫০ টাকা।










