গত শুক্রবার ৩রা জুলাই দুপুর ১২টা নাগাদ হাওড়ার বেতড় ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জনৈক ব্যক্তি বাইকে ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পুলিশ ও স্থানীয় কিছু মানুষ কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে হাওড়া হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সাথে সাথে রোগীর পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ায় প্লাস্টার করা হয় আর করোনার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শনিবার পরীক্ষার পর রবিবার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
করোনা পজিটিভ খবরটি চাউর হওয়ায় নিমেষের মধ্যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা মানুষজন সম্পূর্ণ অচেনা হওয়ার সাথে সাথে উধাও হয়ে যায়। এরপর হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্টের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রোগীর সাথে থাকা পরিবারের তিনজনকে অন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু বাকি যারা রোগীর সংস্পর্শে এসেছিল , তাদের খোঁজ করা বা তাদের করোনা পরীক্ষার কোনো রকম চেষ্টা বা ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে সংক্রমণের ভয় রয়েই গেল। আর রোগী ও তার পরিবারের ক্ষেত্রে কাছের একমাত্র বেসরকারি ল্যাবরেটরি উক্ত পরীক্ষা করলেও তাদের নমুনা সংগ্রহের পরিকাঠামো না থাকায় এক নার্সিং হোমের শরণাপন্ন হরে কয়েকগুন মূল্য দিয়ে করোনার পরীক্ষা করাতে হয়েছে ৷ কারণ, পরীক্ষা না করালে তো হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও পাড়ার দাদা ও প্রতিবেশীরা রোগীর পরিবারকে একঘরে করে রাখছে কোথাও কোথাও বাড়ির সামনে ব্যারিকেডও করে দিচ্ছে, যতে কেউ ঢুকতে- বেরাতে না পারে ৷
তাদের সাথে এমন ব্যবহার করা হচ্ছে যেন তারা সবাই জেলফেরত আসামী৷ আর হাসপাতালে যাওযার পথে ফেরার পথে রোগী মারা গেলেও তার দেহ ফ্ল্যাটে বা পাড়ায় ঢুকতে কোনো কারণ ছাড়াই বাধা দেওয়া হচ্ছে। রোগী বা মৃতের পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজের মানুষজন তাদের শত্রু হয়ে যাচ্ছে।
রাতারাতি অদ্ভুতভাবে বদলে গেছে আমাদের সমাজব্যবস্থা। ডাক্তার নার্স- সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রাণপাত করে সেবা করলেও তাদের ওপরেও চলছে অকারণ হামলা। যেখানে ডাক্তার -স্বাস্থ্যকর্মীর এই অবস্থা, সেখানে সাধারণ মানুষের কি হাল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু এই নয়, হাওড়ায় করোনার নমুনা সংগ্রহেও রয়েছে ধোঁয়াশা। যে ল্যাবের নমুনা নেবার কথা তার পরিকাঠামো নেই। ফলে মধ্যস্থতাকারী নার্সিংহোমগুলি একদিকে যেমন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ পয়সা নিচ্ছে, অন্যদিকে অপটু হাতে নমুনা নেবার ফলে অনেক সময় ভুল রিপোর্টের আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে, যার পরিণতিতে রোগলক্ষণহীন মানুষের দুর্দশা আর গোষ্ঠী-সংক্রমণের সম্ভাবনা দুইই বেড়ে চলেছে। এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষের দুর্দশা দূর করতে গোটা প্রশাসনের তরফে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ বিশেষভাবে প্রয়োজন।