সারা বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় আটলাখ মানুষ আত্মহত্যা করেন, প্রতি তিন সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে বয়স্কদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা শৈশব ও কৈশোরের তুলনায় বেশী হলেও শিশু ও কিশোরদের মধ্যেও আত্মহননের প্রবণতা নিতান্তই নগণ্য নয়।উন্নয়নশীল দেশ গুলিতে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে WHO সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখকে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।
পরিসংখ্যান বলছে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়স্কদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার ঘটনা সারা বিশ্বের মধ্যে ভারতে সবচেয়ে বেশী।
মানুষ শৈশব থেকে কৈশোরের মধ্যদিয়ে যৌবনে উপনীত হয়। জীবনের এক ধাপ থেকে আর এক ধাপ চলার পথে নতুন নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। কিশোর বয়েসে স্কুল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় নানান নতুন বন্ধু-বান্ধবের সাথে পরিচয় হয়,তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তারা নিজেদেরকে নতুন করে স্বাতন্ত্র ভাবে চিনতে থাকে,গড়ে ওঠে নিজস্ব চিন্তাধারা, দায়িত্বশীলতা। এই স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হলে সেই কিশোর বন্ধুবান্ধবের সাথে মিশতে পারে না, সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে, নিজের ওপর বিশ্বাস ও নিয়ন্ত্রণ হারায়,নানান মানসিক সমস্যা তৈরী হয় ও সে বিপথে চালিত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা নব্বই ভাগ আত্মহত্যার সাথেই কিছু না কিছু মানসিক রোগ যুক্ত থাকে। মন খারাপ বা ডিপ্রেশনের সমস্যা এদের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া বাইপোলার ডিসঅর্ডার,সিজোফ্রেনিয়া, এটেনশন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসঅর্ডার, ইত্যাদি মানসিক রোগ আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
নেশা করলে অনেকসময় মন খারাপ আরো বেড়ে যায়,নিজের ওপর স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায় এবং এই নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে আত্মহত্যার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
যে সব কিশোরদের ব্যক্তিত্ব ঠিকমতো তৈরী হয় না তারা সহজেই আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়ে। ব্যক্তিত্বের সমস্যা বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যেমন কেউ কেউ অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়। তারা আবেগের বশে হঠাৎ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বসে। কেউ কেউ আবার বিশ্বকে একটু অন্য চোখে দেখে। তাদের কাছে মানুষ দুই রকমের- হয় খুব ভালো,না হলে খুব খারাপ। মানুষ যে দোষে-গুণেই সম্পূর্ণ, তা তারা বোঝে না। এরা নিজেদেরকে সবসময় বঞ্চিত মনে করে, সহজেই সব শেষ হয়ে গেছে ভেবে নেয় এবং বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে।
জীবনে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাবা, মা, ভাই, বোন, অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে সব পরিবারে বাবা-মাদের সম্পর্ক ভাল না বা আলাদা থাকেন, সেখানে শিশু ঠিকমত বেড়ে উঠতে পারে না। বাড়ির লোকজনের অতিরিক্ত শাসন, নিজের মনের কথা বাবা মায়ের সাথে আলোচনা না করতে পারা, ইত্যাদিও কৈশোরের অগ্রগতির পথে অন্তরায় হতে পারে। বাড়ির কারো মানসিক সমস্যা থাকলে বা বাড়িতে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকলে তা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে বাচ্চাদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
আবার বাসস্থান বা স্কুলের পরিবর্তন, বাবা-মায়ের আলাদা হয়ে যাওয়া,পরিবারের কারো বা কোনো বন্ধুর রোগ-অসুখ বা মৃত্যু, শারীরিক ও মানসিক উৎপীড়ণ, যৌন নির্যাতন-জীবনের চলার পথে ঘটে যাওয়া এই জাতীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা অনেকসময় আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
যে সমস্ত শিশু বা কিশোরের মানসিক সমস্যা আছে তাদের প্রতি আলাদা গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।এই ব্যাপারে বাবা মা,স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ থাকলে সমস্যা অনেকটাই সমাধান হতে পারে। বাবা-মা ,শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে বাচ্চার সুসম্পর্ক জীবনে এগিয়ে চলার পথে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
শারীরিক-মানসিক বা যৌন উৎপীড়নের ঘটনা ঘটলে বা হঠাৎ করে বাচ্চার ব্যবহারে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
গবেষণায় দেখা গেছে যে আত্মহত্যাকারী প্রায় শতকরা সত্তর ভাগ ক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার ইচ্ছে কারো কাছে প্রকাশ করেন।এই রকম ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষনিক সে ব্যাপারে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে।
যে ব্যক্তি একবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে তার ভবিষ্যতে আত্মহত্যা করার সম্ভাবনা খুব বেশী। তাই এদের সবসময় চোখে চোখে রাখা ভাল।
সমস্যা অল্পমাত্রায় হলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দরকার হতে পারে। সমস্যার গভীরতা বাড়লে ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।
অনেক সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত আত্মহত্যার খবর থেকে অনুকরণ করে শিশু ও কিশোরেরা আত্মহত্যার চেষ্টা করে। গণ-মাধ্যমে আত্মহত্যার বিশদ বিবরণ থাকলে তা এই প্রবণতা বাড়ায়। তাই আত্মহত্যার খবর প্রকাশের সময় গণ মাধ্যম গুলিকে যত্নশীল হতে হবে।
আমার ছেলের বয়স 14+ ও হোস্টেলে থাকে । বাচ্চা থেকেই খুব একটা কারো সাথে মিশতে পারেনা। এখন ও ভীষণ জেদী হয়ে যাচ্ছে। কোনো কিছু বললে শুনতে চায় না। এখন ভীষণ রাগ দেখায়। এই জন্য ওকে বকাবকি ও করি। কী করলে ওর জেদ ও রাগ কমবে? কী করলে ওর বন্ধু হয়ে উঠবো। ও ওর মনের কথা শেয়ার করবে।
খুবইখারাপরোগ এটা,রোগীকখন যে কি মেজাজে থাকবে বোঝা মুশকি। আবার দিনেরবেলা ওষুধ খেলে সারা দিনইঝিমুনিভাব থাকে,কোন কাজ বা পড়াশুনা করতে ভাল লাগে না।আমার ১৭ বছরের কন্যাকে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটা।