কোভিড – নন কোভিড, দুটোই? নাকী সেটা পসিবল নয়? নন কোভিডকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে কী আমরা কোভিডকে কোন ভাবে কম গুরুত্ব দিচ্ছি? সব প্রশ্নের উত্তর। পড়ে দেখার অনুরোধ রইলো।
এই প্যানডেমিকের মাঝেও মেডিকেল কলেজের এই আন্দোলন আসলে জনস্বাস্থ্যের দাবীতে। কোভিড উইথ কোমোর্বিডিটি। সেটা কী? মানে ধরুন আপনার হাই প্রেশার বা সুগার বা আপনি কোন কিডনির সমস্যায় ভুগছেন বা আপনি লিভারের সমস্যায় ভুগছেন,কারোর হার্টের সমস্যা অনেক আগের থেকে,কেউ ফুসফুসের সমস্যাতে ভুগছেন আজ অনেকদিন হল এরকম পেশেন্টদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে করোনাতে মৃত্যুর হার অনেকটা বেশি। তারা মেডিকেল কলেজে এসে ভর্তি হচ্ছেন, তখন চিকিৎসার সময় পেশেন্টের হার্ট, লিভার, কিডনি, ফুসফুস এইগুলো যাতে বিকল না হয়ে যায় তার চিকিৎসাতে এটাই প্রায়োরিটি আমাদের কাছে।
তার মানে নন কোভিড এইসব বিভিন্ন রোগের রোগীদের যদি অবহেলা করা হয়, যদি ক্যান্সার পেশেন্ট, COPD র পেশেন্ট থেকে শুরু করে হাই ব্লাড প্রেশারের রোগীদের আমরা সঠিক চিকিৎসা দিয়ে কন্ট্রোলে না রাখতে পারি সেক্ষেত্রে কোভিডের মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
কোভিডে মৃত্যুহার কমানোর জন্যেই আমাদের এই ব্যবস্থায় নন কোভিডকে গুরুত্ব বেশি দিতে হবে।
এবার আসি স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রসঙ্গে। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ত্রিস্তরীয়। একেবারে নিচে থাকে প্রাইমারি হেলথ সেন্টার, তাও ওপরে সেকেন্ডারি হেলথ সেন্টার যেমন জেলা হাসপাতাল আর সবার ওপরে টার্শিয়ারি সেন্টার যেমন মেডিকেল কলেজ। এবার কোন একটা ইনফেকশাস রোগের চিকিৎসা করার সময় আইডিয়ালি কী হয়? পেশেন্ট প্রাইমারি সেন্টারে আসেন, সেখানে চিকিৎসা সম্ভব হলে ভালো, না হলে পেশেন্ট যাবেন সেকেন্ডারি সেট আপে, সেখানেও পসিবল না হলে, পেশেন্ট খুব ক্রিটিকাল হলে পেশেন্ট আসবে টার্শিয়ারি সেন্টারে। না হলে কী হবে? না হলে টার্শিয়ারি সেন্টারে স্টেবল পেশেন্টের চাপ বাড়বে।
এক্সাক্টলি যেটা সরকারের রিসেন্ট মডেলে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীই বলেছেন কোভিড আমাদের সাথে থাকব, আর ৫ টা রোগের মতই এবার সেটাকে ১-২ টো টার্শিয়ারি সেন্টারে এক্সক্লুসিভ করে দিলে কী হবে? তাহলে এখানে স্টেবল পেশেন্ট যাদের তেমন কিছু হচ্ছে না তারাও টার্শিয়ারি সেন্টারে চলে এলে এখানে বেড শেষ হয়ে যাবে, ইনফ্রাস্ট্রাকচার অকুপায়েড হয়ে থাকলে খারাপ পেশেন্টের জন্যে জায়গা শেষ হয়ে যাবে।
এই আন্দোলন কোভিড চিকিৎসা বিরোধী নয়, আমাদের বক্তব্য মেডিকেল কলেজ বা সাগর দত্ত বা বাঙুড় হাসপাতাল শুধু কেন? যে কোন টার্শিয়ারি সেন্টারেই কোভিডের চিকিৎসা করতে হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এতোদিন ধরে চলে আসা মডেলেই সেটা করতে হবে তবেই এটার সুষ্ঠু চিকিৎসা সম্ভব। তার মানে সমস্ত সেন্টারে কোভিডের জন্যে আলাদা একটা ব্লক, আলাদা এন্ট্রি, এক্সিট করে বাকি ইনফেকশাস রোগের মত করেই প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, টার্শিয়ারি হেলথ কেয়ার সিস্টেমের রেফারেল সিস্টেমের মাধ্যমেই কোভিড চিকিৎসা করা শুরু করতে হবে।
প্রাথমিক পর্যায় শেষ, এখন পিক ওঠার অপেক্ষা। আমাদেরকে কোভিডের জন্যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার বানাতে হবে, মেডিক্যাল, বাঙুর বা সাগর দত্ত-এর মতন দুটো তিনটে কলেজে হাসপাতালে নয়, বরং গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থাই কোভিড এবং নন কোভিডের জন্যেই গড়ে তুলতে হবে এবং তার সাথে নন কোভিড পেশেন্টকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে, কোভিডের মৃত্যুহার কমানোর জন্যেই।
এই মডেল যেটা আসলে প্রিএক্সিস্টিং সেটাই সঠিক সেগরিগেশন মেনে কোভিডেও লাগু করে পেশেন্টদের হয়রানি কমানো ,কোভিডের মৃত্যুহার কমানো, নন কোভিড পেশেন্টদের সঠিক চিকিৎসা দেওয়া, এই মডেল ইম্পলিমেন্ট করার উদ্দেশ্যেই এই আন্দোলোন, এই অবস্থান।
মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা কোভিড চিকিৎসা করছেন প্রত্যেক দিন প্রাণপাত করে, আগামী দিনেও করতে চান। পাশাপাশিই তাঁরা আন্দোলনে বসেছেন, অবস্থানে বসে আছেন এই স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে কোভিড মহামারির পর্যায়ে আরো উন্নততর করে তোলার জন্যে।
সহনাগরিকদের কাছে আমাদের আবেদন এগিয়ে আসুন। এই লড়াই আসলে মেডিক্যাল বা সাগর দত্তের জুনিয়ার ডাক্তারদের নয়। এই আন্দোলন আপনার, আমার, পাশের বাড়ির কাকুর, সামনের বাড়ির কাকিমার সবার। এই আন্দোলন প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের, যিনি মনে করেন শ্রেণী বর্ণ ধর্ম লিঙ্গ জাতপাত নির্বিশেষে আমাদের দেশের প্রত্যেক মানুষের রাষ্ট্রের তরফ থেকে উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পাওয়ার অধিকার আছে। সুস্থ থাকুন,লড়াইয়ে থাকুন।