১ম পর্বের পর…….
পরের দিন সকাল দশটায় সেক্টর ফাইভের ফুটপাতের একটা খাবারের দোকানে চা-কচুরি ধ্বংসের পরে একটা সিগারেট ধরালো প্রবীর। সঙ্গে প্রাইমাস বিল্ডিংয়ের একজন সিকিউরিটি। ছেলেটা প্রবীরেরই বয়সী। তবে প্রায় দু’বছর এই বিল্ডিংয়ে কাজ করছে। প্রাইমাস বিল্ডিংয়েই পল্লবের কোম্পানী ওরিয়ন গ্লোবালের অফিস। প্রবীরকে এখন চেনা যাবে না। ছোট্ট গোটি দাড়ি, গলায় টাই, চকচকে জুতো, কাঁধে ল্যাপটপ ব্যাগ – আইটি কর্মীর মত চেহারা। ওরিয়ন গ্লোবাল কোম্পানী ও তার কর্মীদের বিষয়ে সিকিউরিটি-র সাথে কথা বলতে বলতে তনভীরের ফোনটা এল।
‘আমি তোমাকে একটু পরে ফোন করছি।’ বলে তখনকার মত কেটে দিল সে।
পরে তনভীরের সঙ্গে যা কথা হল তা হল এই, অমৃতা ব্যানার্জী-র ফোনের টাওয়ার লোকেশন দেখাচ্ছে যে সে রোজ সন্ধ্যা ছটা থেকে সাতটার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসে। তারপর আর বাড়ি থেকে বেরোয় না। প্রবীর খুব অবাক হয়ে অমৃতাকে ফোনে ধরল।
‘আমি সাইবার ক্রাইম সেকশন থেকে প্রবীর দত্ত বলছি।’
‘বলুন।’
‘সাতই জুলাই আপনি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা কেটে নেওয়ার মেসেজটা কখন দেখেছিলেন?
‘সকাল ন’টায়’
‘কিন্তু টাকাটা তো কেটেছে ছ’ তারিখ রাত দশটা উনপঞ্চাশ মিনিটে।
‘আমি আসলে এত ব্যস্ত ছিলাম যে মেসেজটা তখন লক্ষ্য করিনি।’
‘ও। তখন কোথায় ছিলেন আপনি?’
‘একটা পার্টিতে।’
‘আপনার দ্বিতীয় ফোনের নম্বরটা আমাকে দিতে হবে।’
‘আমি তো একটাই ফোন ব্যবহার করি।’
‘দ্বিতীয় সিম স্লটে যে সিমকার্ডটা থাকে তার কথা বলছি।’
‘আমার আই ফোনে তো একটাই সিমস্লট আছে।’
‘ঠিক আছে আপনার ফোনটা নিয়ে কালকে আমার অফিসে আসবেন।’
পরদিন অমৃতা দৃশতঃ ক্ষুব্ধ হয়ে সাইবার ক্রাইম সেকশনে এল।
‘ব্যাঙ্ক বলছে, আমি নাকি কার্ড নম্বর, ওটিপি শেয়ার করেছি। তাই তারা কিছু করতে পারবে না। পুলিশই যা করার করবে। অথচ আপনারা কাজের কাজ না করে উল্টে আমার ফোন নিয়ে পড়ে আছেন।’
‘উত্তেজিত হবেন না, আমাদের কাজ করতে দিন। আপনার কেসের তদন্তের স্বার্থেই আপনার ফোনটা আমাদের দরকার।’
মোবাইল ফোনটা ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠালো প্রবীর।
বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে অমৃতা বলল,
‘কবে ফেরত পাওয়া যাবে? আর ততক্ষণ আমার চলবে কি করে? আমার যা কাজ তাতে ফোন ছাড়া থাকা যায়?’
‘সময় লাগবে। ফোনের পাসওয়ার্ডটা দিয়ে যান আর দুদিন কাজ চালানোর জন্য আমাদের এই ফোনটা ব্যবহার করুন।’
বিকেলে তনভীরের ফোন পেয়ে গাড়ি বের করতে বলল প্রবীর।
‘কোথায় স্যার?’
‘সিনট্র্যাক্স আবাসন, রাজারহাট।’
চিনার পার্ক মোড় থেকে মোটামুটি এক কিলোমিটার দূরে সিনট্র্যাক্স একটা বড় আবাসন। আটটা ব্লক, ক্লাব, সুইমিং পুল নিয়ে এক এলাহি বন্দোবস্ত। প্রায় শ’পাঁচেক ফ্ল্যাট। অর্ধেকের বেশী ফাঁকা। কেউ কারো খোঁজখবর রাখে বলে মনে হয় না।
প্রবীর নিজের পরিচয়পত্র দেখাতেই গেটের নিরাপত্তা রক্ষী দুজন সোজা হয়ে সেলাম দিল।
পকেট থেকে একটা ছবি বের করে প্রবীর বলল,
‘এই মহিলাকে এখানে দেখেছ কখনো?’
রোগামত লোকটা বলল, ‘হ্যাঁ স্যার। ছ’নম্বর ব্লকের ৯০৩ এর ম্যাডাম। উনি তো প্রায়ই এখানে আসেন। কখনো কখনো থাকেনও।’
‘ও আচ্ছা, কার ফ্ল্যাটে?’
‘সলিল সাহেবের। অবশ্য সলিল সাহেব এখন এখানে থাকেন না।’
‘সলিল সাহেব কি করেন?’
‘উনি শুনেছি বিজনেসম্যান। সিঙ্গাপুরে থাকেন।’
‘তাহলে এই ফ্ল্যাটে কে থাকে?’
‘আমি আর কিছু জানি না স্যার। ভালো হয় আপনি যদি ফেসিলিটি ম্যানেজারের সাথে কথা বলেন।’
ফেসিলিটি ম্যানেজার মাসুদ আলম খুব বুদ্ধিমান ও করিৎকর্মা লোক। সে কম্পিউটার থেকে ৯০৩ নম্বর ফ্ল্যাটের মালিক সলিলের ছবি, মেন্টেন্যান্স বিলের কপি ও অন্যান্য ডকুমেন্ট বের করে দিল। শুধু তাই নয়, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এখনকার বাসিন্দা সলিলের ভাই রবির ছবিও দেখালো। বিদিশার পাঠানো ছবিটার সাথে মিলিয়ে নিল প্রবীর- একই লোক।
মাসুদ জানাল, ‘রবিবাবু ফিল্মে ফটোগ্রাফারের কাজ করেন। ওনার অনেক টাকা আর যোগাযোগ। মাঝ মাঝেই ওনার ফ্ল্যাটে বেশ কয়েকজন নেতা এবং পুলিশের আগমন হয়। মহিলারাও থাকে। পার্টি, খানাপিনা হয়।’
‘অনেক টাকা বললেন কেন? একজন ফটোগ্রাফারের কত টাকা হতে পারে?’
‘ওনার দাদার তো সিঙ্গাপুরে হোটেল আছে। দুজনেই প্রচুর খরচ করেন এখানে। গত জানুয়ারিতে পুরো পিকনিক উনি স্পনসর করেছিলেন। দেওয়ালিতে পুরো আবাসন আলো দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলেন।’
‘উনি কখন বাড়ি ফেরেন?’
‘সন্ধ্যা সাতটা-আটটা হয়।’
‘আচ্ছা।’…..
(চলবে)