কাল এই বিষয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম। বলেছিলাম আরো কিছু আশার কথা, ভরসার কথা জানাতে পারলে জানাবো।
না, চারপাশের পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগের, সেই অর্থে আশার কথা শোনানোর মত বিশেষ কিছু হয়নি। তাহলে আবার লিখতে বসলাম কেন? হতাশার কথা শোনাতে? সেতো এমনিতেই টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলে, বা ওয়েব নিউজ পোর্টালে নিয়মিত এসেই যাচ্ছে।
তাহলে?
আমি আসলে লিখতে চাইছি, আমাদের এখনকার জীবনটাকে কিভাবে আরেকটু কম উদ্বেগের, কম চিন্তার করা যায় সেই বিষয়ে।
আমাদের দৈনন্দিন বেঁচে থাকা মূলত: তিন ধরনের সময়ের উপাদানের উপর গড়ে ওঠে। সহজ করে বললে, গতকাল, আজ এবং আগামীকাল।
একটা অতীত, যা পরিবর্তনযোগ্য নয়, কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা আমাদের নিরন্তর অনুরণিত করে। এরথেকে আমরা শিক্ষা নিয়ে বর্তমানে বা ভবিষ্যতে চলার চেষ্টা করি। আবার অতীতের খারাপ কিছু ঘটনা, নিজের বা সমাজ-জীবনে, আমাদের আলোড়িত করে, কষ্ট দেয় বা রাগ তৈরী হয়।
যেমন, এখন যে ভাইরাসের সংক্রমণ চলছে সেটার শুরু গত ডিসেম্বর মাসে চীন দেশে, পরে সেটা আস্তে আস্তে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরেছে। আমাদের দেশে এসেছে অনেকটা পরে, কিন্তু সংক্রমণের তীব্রতার কারণে এখানেও এখন “লকড ডাউন” অবস্থা। সেইক্ষেত্রে, কেন এই ভাইরাস এলো, কেন চীন সতর্ক হলনা, কেন ইউরোপের দেশগুলো এত অসতর্ক থাকলো, কেন আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক উড়ান আরো আগেভাগে বন্ধ করা হলনা ইত্যাদি ইত্যাদি, নানা ক্ষোভ অনেকের মধ্যে ফেটে বেরোচ্ছে। এর পাশাপাশি নানা ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও ঘুরে বেড়াচ্ছে, ক্ষোভ বাড়াচ্ছে।
কিন্তু, এগুলো সবটাই নিস্ফলা, মনের যন্ত্রণা অহেতুক বাড়িয়ে দিচ্ছে। কি হলে কি হতে পারতো, বা কি হওয়া উচিৎ ছিল, এইসব অহেতুক চর্চার কোনো প্রয়োজন আছে কি? এইভাবে নিজের আবেগবোধকে অকারণে উদ্দীপ্ত করার দরকারটা কি? তাতে কি অবস্থার বিন্দুমাত্র কোনো পরিবর্তন হবে?
না, প্রয়োজন নেই, দরকার নেই, কোনো পরিবর্তন হবে না। সুতরাং, এগুলো থেকে বিরত থাকাই মনের পক্ষে ভালো।
এইবারে আশা যাক, ভবিষ্যতের কথায়। এটা ভীষণ জরুরী এইসময়ে। কারণ এখন প্রায় সকলেই অনাগত সময়ের আশঙ্কায় কুঁকড়ে আছে। ভবিষ্যতে সংক্রমণের চেহারা কিরকম হবে, কত মানুষ গুরুতর অসুস্থ হবেন বা মারা যাবেন, বা কতজন সেরে উঠবেন, কতদিন ধরে এই সংক্রমনের ধারা চলবে, আমরা এখনো কিছুই জানিনা।
কিছু কিছু সম্ভাব্য হিসেব-নিকেষ আছে, যা নিয়ে সারা পৃথিবীর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কাজ করে চলেছেন, আমাদের দেশেও তাই। এরা কেউই কিন্তু জ্যোতিষ-চর্চা করছেন না, ভবিষ্যতবাণীতেও বিশ্বাস করেন না। জনস্বাস্থ্য-বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন মেনে প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে যাচ্ছেন, সেই অনুযায়ী আমাদের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার পরিকল্পনা তৈরী হচ্ছে। এখনকার “লকড ডাউন” অবস্থা এই পরিকল্পনারই একটি অঙ্গ।
সুতরাং বিশেষজ্ঞরা তাদের কাজ করছেন, আমরা অনেক সময় তাদের কিছু কাজ জানতে পারছি, আবার অনেকটাই জানতে পারছি না। ফলত: আমরা নিজেদের মনের আলোকে নানারকম ভীতির পরিস্থিতি আগাম ভেবে নিয়ে নিজে শঙ্কিত হচ্ছি, সেই শঙ্কা ছড়িয়েও দিচ্ছি অনেকের মধ্যে।
এর বাইরে যোগ হচ্ছে খাবার, ওষুধ ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বিষয়ে নানা অনিশ্চিতির ভাবনা। এগুলো গেঁথে বসছে মনে। আবার বিভিন্ন খবর বা গুজব বা উড়ো খবর, সেই ভীতির মাত্রা দিচ্ছে বাড়িয়ে।
এই জায়গাতেই মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যা হবে, তার আগাম কল্পচিত্রের মধ্যে ডুবে থেকে কোনো লাভ নেই। ভাবতে হবে ঠিক এই সময়ের কথা, আজকের কথা। এখনকার মুহূর্তে আপনি কিভাবে বাঁচবেন, কিভাবে চলবেন, এইটুকুর মধ্যেই চিন্তাভাবনাকে সংকুচিত করার চেষ্টা করতে হবে। নইলে উদ্বেগের বিষবাষ্প ভরিয়ে দেবে মন, আপনি বিচলিত হবেন, একটা থমথমে অবস্থা তৈরী হবে। সব মিলিয়ে রাতের ঘুম উড়ে যাবে, একটা খিঁচখিঁচ ভাব নিয়ে এদিক-ওদিক অন্যকে দাঁত খিঁচিয়ে চলবেন।
আর এভাবে চললে কিন্তু, আপনার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর চাপ পরবে, আপনি কিন্তু ভাইরাস আক্রমণের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবেন!
তার চেয়ে বর্তমানে বাঁচুন, এই মুহূর্তে বাঁচুন, আনন্দে বাঁচুন, অহেতুক চাপ না নিয়ে বাঁচুন।
_____________________________________
জানি, মনের চিড়ে এতেও ভালো ভিজল না। কারণ এটা একটা বহু মাত্রিক বিষয়। আরো অনেক মাত্রার বিষয়ে এখানে উল্লেখ করা যায়নি।
ঠিক আছে, পড়তে থাকুন। আবার আসা যাবে আরো মন ভালো করার টুকিটাকি নিয়ে।