প্রতিভাবান এক তরুণ গদ্যকার বিস্মিত হচ্ছিলেন, চুপ থাকব আমরা? এরপরও চুপ থাকব!!
তরুণ কবি স্তম্ভিত হয়ে প্রশ্ন করছেন, রাজ্যে কি এমনই দমবন্ধ পরিস্থিতি যে, কোনও এলোমেলো বাতাস মৃত শিশুদের মাংস পোড়ার গন্ধ কবিতা উৎসবে কবিতা পাঠরত কবিদের নাকে পৌঁছে দিতে পারছে না?
সৎ বিস্ময়। পবিত্র ক্রোধ। অভিমান।
অথচ, এত বিস্ময়ের কী-ই বা আছে!! কেননা, সবাই ভাবছেন। নিজেদের মতো করে, আপন ছন্দে ভাবছেন।
যেমন ধরুন, ইতস্তত বিচলিত বিপ্লবী বসে ভাবছেন, প্রতিবাদ জরুরি অবশ্যই, কিন্তু…
কিন্তু…
ধরুন যদি প্রশ্ন ভাসাই… বাম আমলে হয়নি কি এর’ম কিছুই? কখনোই? অন্তত প্রশ্নটা যদি ছুঁড়ে দেওয়া যায়, ভাসিয়ে রাখা যায়… আর কিছু না হোক, আপাতত প্রতিবাদের চাপটা তো কাটে…
প্লাস, এটুকুও মনে করিয়ে দেওয়া, বিজেপির বিপদ ভুলে যাওয়া অনুচিত… একখানা সিনেমা ঘিরে যে মারাত্মক বিভাজন… প্লাস, একুশের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখানো যে, ওই মাগ্যিগণ্ডার বাজারেও অমুসলমান ভোটের বাহান্ন শতাংশ পেয়েছে ভাজপা… গুছিয়ে মনে করানো যদি যায়, তাহলেও তো…
ভাসানোই যথেষ্ট, কেননা সংখ্যাযুক্ত তথ্য একবার ভাসিয়ে দিতে পারলে তার উৎস আর কেউই জানতে চায় না…
অতএব, হ্যাঁ, আমরা প্রতিবাদ করা উচিত কিনা, সেই নিয়ে গভীরভাবে ভাবছি আর ভাবা কমপ্লিট হওয়া অব্দি চুপই থাকছি…
ফেসবুকে অল্পস্বল্প প্রতিবাদ, আজকের দিনটির জন্য ম্যাক্সিমাম, তাও খুব প্রকট নয়, এটুকুই…
আসলে চুপ থাকা আমাদের অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। মেনে নিই বা না নিই, মুখ না খোলার অভ্যেস, গেঁড়ে বসেছে। মেনে নেওয়ার, মানিয়ে নেওয়ার অভ্যেস। কাউকে না চটিয়ে গাছপালা-ফুল-পাখি-প্রেম নিয়ে কথা বলার অভ্যেসও জলভাত। আর পলিটিক্স খুব খারাপ জিনিস, ওসব নিয়ে কথা বলতে নেই – এ তো অনেকদিনের শিক্ষা।
প্লাস, ক্ষমতায় বসার কয়েকমাসের মধ্যেই তিনি খুব স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বিরুদ্ধে কথা বলার পরিণতি খুব ভালো হবে না। শুধু কথা দিয়ে নয়, উপযুক্ত ও কার্যকরী পদক্ষেপের মধ্যে দিয়েই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ভয় পাওয়ার অভ্যেস আমাদের মজ্জাগত। ছিলই। শোনা ভয় এক জিনিস, কিন্তু ভিজিবল ভয় দেখতে পেলে…
সব মিলিয়ে…
নাহ্, ফেসবুকের বাইরে মুখটুখ কেউ খুলবে বলে মনে হয় না। সেখানেও…
আপাতত সিট সিআইডি ইত্যাদি প্রভৃতি…
কয়েক সপ্তাহ পরে মৃতদের কোনও নিকটাত্মীয় মিডিয়ার কাছে জানাবেন, পুরোটাই দুর্ঘটনা, ভগবান/আল্লা যা চাইবেন তেমনই তো হবে, ভাগ্যের উপর কারও তো হাত নেই ইত্যাদি ইত্যাদি, কিন্তু এই দুঃসময়ে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যেমন করে পাশে এসে দাঁড়ালেন…
এমনটাই নিয়ম হয়ে গিয়েছে।
ইউপি-তে মৃতের আত্মীয় থানা/আদালতে গেলে – সত্যিমিথ্যে জানি না, তবে শুনেছি, অন্তত দুয়েকটি কেসে দেখেওছি – নিখোঁজ হয়ে যান, আর এখানে মৃতের আত্মীয় দুদিন বাদে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে সরকারের জয়গান করতে থাকেন। হ্যাঁ, এটা দেখেছি। দেখছি, নিয়মিতভাবে।
সত্যি বলছি, আজকাল নিজেদের জন্যই ভয় হয়।