ইহুদিরা তাদের নিজের দেশ ইসরায়েল পেয়ে গিয়েছে বহুদিন। কিন্তু প্যলেস্টাইনে তাদের দাদাগিরি অব্যাহত। বহু বছর ধরেই গাজা একটা মুক্ত কারাগার, যার চারপাশ দখল করে রেখেছে ইজরায়েল। ওখানে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ভূখন্ডে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। ফলত সেখানে উগ্রপন্থী ইজরায়েল-বিরোধিতা মাথা চাড়া দেবেই। যেমন হামাস, যারা আমেরিকার আনুকুল্যে প্রবল শক্তিধর ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অক্ষম কিন্তু চোরাগোপ্তা নানান আক্রমণে তাকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে।
গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ শে হামাস প্রায় ২৫০ জন ইজরায়েলী ও অন্য দেশের নাগরিকদের অপহরণ ও পণবন্দী করে। হামাস নিধনের নামে ইজরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে দেয়।
এই সুযোগে ইজরায়েল স্রেফ গায়ের জোরে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের মুছে দিতে চাইছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার, কোনো কোনো মতে ৮০ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা। ২০ হাজারের ওপর শিশু খুন করেছে। রোগীসহ হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দিচ্ছে! দেখলে অন্তরাত্মা হু হু করে ওঠে। এরপর মাসের পর মাস গাজাকে অবরুদ্ধ রেখে অবিশ্রান্ত বোমাবর্ষণ করে চলেছে। খাবার, ওষুধ, পানীয় ইত্যাদি নিয়ে আসা আন্তর্জাতিক সাহায্যটুকুও তাঁরা ঢুকতে দিতে নারাজ, যাতে বোমার হাত এড়িয়ে যদি কিছু মানুষ বেঁচেও থাকেন তাঁরা যেন অনাহারে বা বিনা চিকিৎসায় মরে যায়। এই হিটলারীয় গণহত্যাকারীদের রক্ষকের ভূমিকায় আছে আমেরিকা।
আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় অধিকাংশ রাষ্ট্রনেতারা ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থান নিয়ে দু একটি শান্তি বিবৃতি গোছের বক্তব্য দিয়ে চেপে গেলেও বিভিন্ন দেশের সাধারণ মানুষ পথে নেমেছেন বিপুল পরিমানে। অবশেষে ২২ বছর বয়সী সুইডিশ পরিবেশ কর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ ৪৪ টি দেশের প্রায় ৫০০ জন সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী, মানবাধিকারকর্মী ইত্যাদি স্বেচ্ছাসেবকরা ৪০ টি বেসরকারী জাহাজ ও নৌযান নিয়ে ফ্লোটিলা নামে গাজায় মানবতার অভিযান শুরু করছেন। আগস্টের শেষ সপ্তাহে ইতালি, স্পেন, গ্রীস, তিউনিসিয়া ইত্যাদি দেশ থেকে এই ফ্লোটিলার অভিযান শুরু হয়। উদ্দেশ্য ইজরায়েলের অবরোধ ভেঙে দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। ইজরায়েল ফ্লোটিলাকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছিল যে কোনো মূল্যে তারা এই অভিযান রুখবে। ফ্লোটিলা অনড় থেকেছে অভিযানে। গাজা উপকূলের কাছাকাছি আসতেই বিগত দুদিন ইজরায়েল হামলা চালিয়ে আটক করেছে অধিকাংশ জাহাজকে। জাহাজের যোগাযোগ ব্যবস্হাকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। মিকেনো নামে একটি জাহাজ ইজরায়েলে অবোরোধ এড়িয়ে গাজার উপকূলে পৌঁছে যাওয়ার দাবি করেছে কিন্তু এই মুহূর্তে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
রাষ্টনেতারা ইজরায়েলকে সবক শেখানোর জন্য কোনো কড়া ব্যবস্থার ঘোষণা করেননি যথারীতি। তবে ইয়োরোপে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ, যুবসমাজ ফ্লোটিলার সমর্থনে যেভাবে পথে পথে গর্জে উঠছেন তা অভূতপূর্ব। এই দেশগুলির শাসকের পক্ষে এই গর্জন উপেক্ষা করা খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না!
এসব দেখে মনে হয় মমতালাঞ্ছিত এই দুনিয়ায় এখনও ভালো কিছু বেঁচে আছে। এই ধান্দাবাজ, আকণ্ঠ দুর্নীতিগ্রস্থ, স্বার্থপর, হিংস্র ভোটসর্বস্ব রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার বিপরীতে মানবতা এখনও বেঁচে আছে। এখনও মানুষ এমন গান বাঁধে যা অগনিত পীড়িত মানুষের আলো হয়।
তবে আমার দেশের মিডিয়া আর রাজনৈতিক যুবসমাজের (কিছু হাতেগোণা ব্যতিক্রমী ছাড়া) এসবে কিছু যায় আসে না। তারা কেবল দাদা দিদি আর বড় জোর পাকিস্তান বাংলাদেশ জানে!