সোমবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি আগে যোগ্যদের দেখবেন (সম্ভবত দেখে নেবেন অর্থে), তারপর অযোগ্যদের ব্যাপারটা দেখবেন (তাঁদের নিরাপত্তা বিধানের অর্থে সম্ভবত)। তিনি জানিয়েছিলেন, ব্যবস্থা নেবেন। কী ব্যবস্থা, তা স্পষ্ট করে বলেননি। বলেছিলেন প্ল্যান এ, বি, সি, ডি, ই তৈরি আছে৷
প্ল্যান ‘এ’ আমরা আজকে দেখলাম। ‘যোগ্য’ (পরীক্ষার নাম্বারের সংকীর্ণ অর্থে) শিক্ষকদের দেখে নেওয়া শুরু হল। হকের চাকরি ফেরত চাইতে গিয়ে মার খেলেন তাঁরা। এই রাজ্যের পুলিশ ওপরতলার নির্দেশ ছাড়া বাথরুমেও যায় না। মাতাল পরিচালক জনসমক্ষে কয়েকজনকে গাড়ি চাপা দিলে রা কাড়ে না৷ তারাই আজ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিনে দুপুরে সবার চোখের সামনে লাঠি এবং লাথি মারল পরাধীন ভারতে ইংরেজ পুলিশের স্মৃতি উস্কে দিয়ে। (ইংরেজরাও বোধহয় নেটিভ শিক্ষকদের লাথানোর আগে দুবার ভাবত।) ওপরতলার অনুমতি ছাড়াই এতকিছু হয়ে গেল কি? সত্যিই?
এই তথাকথিত ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের ওপর রাগের কারণ আছে। এঁরা পড়াশোনা করে পরীক্ষা দেবার ফলে ২৬০০০ চাকরির সবকটা একই দামে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। যদি চাকরি প্রতি পনেরো লাখ দর হয়ে থাকে আর আনুমানিক দশ হাজার চাকরির বিক্রি এদের কারণে আটকে গিয়ে থাকে, তাহলে ক্ষতির অংকটা ভেবে দেখেছেন? পনেরোশ’ কোটি। এই বিপুল ক্ষতির পর আপনার রাগ হত না? অকারণে সরকারকে দোষ দেবার সময় ভেবে দেখেছেন?
তার ওপর আবার এঁরা ভিক্ষে করতে বা সিভিক টিচার হতে রাজি নন। চুরি যাওয়া চাকরি ফেরত চান। আস্পর্ধা কত! যারা ঘুষ দিয়েছে, তাদের নাম নাকি বলে দিতে হবে! মামার বাড়ির আবদার? যাদের টাকা খেলেন, তাদের নাম ফাঁস করে দেওয়াকে নেমকহারামি বলে। জানেন সেটা? সরকারের কি ওটুকুই বিবেকবুদ্ধি নেই ভাবছেন? এসব ভাবলে তো ক্যালানিই বরাদ্দ।
আগে শুনেছিলাম উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, বিহারে নাকি প্রতিবাদ করতে গিয়ে ‘ফ্যাসিস্ট’ পুলিশের হাতে মার খেয়েছেন মানুষ। আজ পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীর বুকে লাঠি এবং লাথি খেলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। জনসমক্ষে প্রায় নগ্ন হয়ে মোলায়েম বলপ্রয়োগের দাগ দেখালেন তাঁরা। সেই ছবিও দেখলাম। আজ আবার প্রমাণিত হল, এগিয়ে বাঙলা। প্রথমে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের, তারপর শিক্ষকদের লাথি মেরে কপু আজ মারাদোনা (ঈশ্বর)।
এরপর প্ল্যান বি, সি ইত্যাদির অপেক্ষা। পরের ধাপে থ্রি নট থ্রির বুলেট, আন্দাজ করছি। প্ল্যান সি-তে সম্ভবত বফর্স কামান বেরোবে। আমরা ঝুলে থাকব বিশ্ব বাঙলার মহান ‘ব’-এর মতো। আমরা আসলেই ‘ব’।