যাদের ভাতা বাড়ানো হলো, সেই জুনিয়র ডাক্তাররা কী বলবেন বা প্রতিক্রিয়া দেবেন জানি না। কিন্তু,জুনিয়র তথা সমগ্র চিকিৎসক সমাজের কী এটাই ‘গ্রিভ্যান্স’ ছিল, এই জন্যই কি তারা দিনের পর দিন ধর্নায় বসেছেন, আর লাগাতার অনশনে সামিল হয়েছেন জীবনকে বাজি রেখে!!? ‘গ্রিভ্যান্স সেল’ কি এই তথ্যই জানিয়েছে যে কিছু ভাতা বাড়িয়ে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে!?
ব্যক্তিগত ভাবে মানুষকে বিশেষতঃ জনপ্রতিনিধির কেনাকাটা করা অনেক দিন যাবত চালু আছে, ইংরেজিতে তার নাম দেওয়া হয়েছিলো ‘হর্স ট্রেডিং’। জানি না এর মধ্যে ঘোড়ার মতো একটা নিরীহ প্রভুভক্ত প্রাণীকে কেন ঢোকানো হলো ! ঘোড়া তো আর নিজেকে বিক্রি করে না, বা তার কোনো লভ্যাংশও পায় না। বিদেশে কি তাহলে কিছু দিন অন্তরই ঘোড়ার মালিক বদলাতো? নাকি, বিক্রির পরে ঘোড়া একই রকম অনুগত থাকতো নতুন মালিকের প্রতিও !!
সে যাই হোক, সেটা তো হতো ‘ইনডিভিজুয়াল’ লেভেলে। কিন্তু, বর্তমানে ব্যক্তিগত পরিসরকে বজায় রেখেও যেটা চালু হয়েছে, সেটা হলো ‘herd trading’ বা ‘গোষ্ঠীগত কেনাবেচা’!! অমুক শ্রী, তমুক শ্রী তো ছিলই, নতুন সংযোজন হলো না চাইতেই ‘ভাতা বৃদ্ধি’, একটা নির্দিষ্ট পেশার বিশেষ অংশের জন্য! অন্য পেশার মানুষেরা হতাশ হবেন না, ধৈর্য্য ধরুন আপনারও পাবেন, কিছু না কিছু। আর, শুধু জুনিয়র ডাক্তার নয়, হেল্থ সার্ভিসের সিনিয়রদের জন্যও আশার কথা আছে, মোটামুটি আরাম করে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের আশ্বাস বাণী।
যাই হোক, টাকা পেলে কার না ভালো লাগবে, আবার অযাচিত ভাবে! তবে, ‘গ্রিভ্যান্স সেল’ কি পুরোপুরি বিস্মৃত হলো যে ‘অভয়া’র জন্য আন্দোলনের মূল দাবি ছিলো একটাই, তা হলো ‘Justice for Abhaya’, nothing more or nothing less than that ; ‘অভয়া হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী সকলের শাস্তি’, তার বিন্দুমাত্র বেশি বা কম কোনোটাই নয়…..
একটু বলবেন কি করে মনে হলো, উৎকোচ দিয়ে সেটাকে ভুলিয়ে দেবেন? ‘অভয়া’র জন্য বিচার সত্যি করে পাওয়া যাবে কিনা জানিনা, কিন্তু তাতে করে তো আর এতো মানুষের আবেগ, অনুভূতি ,আর্তি কোনো কিছুই অস্তিত্বহীন হয়ে যায় না। কি জানি, এটা বুঝতে পারার জন্য যেটুকু সংবেদনশীলতা প্রয়োজন সেটাও কি একান্তই অনুপস্থিত !?
সত্যি করে বলতে গেলে, ডাক্তারদের সম্পর্কে জনগণের ভালো ধারণা বিশেষ ছিল বলে মনে হয় না। তবে, এই আন্দোলনের সময় অন্ততঃ জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি মানুষের একটা অত্যুজ্জ্বল ধারণা তৈরি হয়েছিল, তাদের প্রায় নায়কের আসনে বসিয়েছিল। তাই সেই জায়গাটাতেই আঘাত করতে হবে, যাতে মানুষের মনে হয়, ডাক্তারদের আন্দোলন-টান্দোলন কিছু নয়। এরা আসলে একান্তই লোভী এবং স্বার্থান্বেষী, যা তারা এতদিন ধরে জেনে এসেছিল!! মাঝখানের সময়টা ধরে নিন কল্পনা বা মায়া মাত্র!!
সবই ঠিক আছে, একদম হিসেব করে, অঙ্ক কষে প্রতিটা পদক্ষেপ। শুধু একটা কথা বলবেন, কাদের বাঁচাতে এতো কোটি কোটি টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে? এতো কৌশল, এতো কাণ্ড, এতো আয়োজন!? হয়তো অনেক কিছু ম্যানেজ হয়েও যাবে ‘আল্টিমেটলি’, কিন্তু তাতেও কি শোধ করা সম্ভব হবে ‘অভয়ার রক্তঋণ’???
কি মনে হয় ??