★
এই কয়দিন আমি খুব চেষ্টা করলাম, ওঁদের সঙ্গে নিজেকে আইডেন্টিফাই করে আমি হলে কী করতাম তা বুঝতে।
ওঁদের মধ্যে অনেককটা আলাদা শ্রেণী রয়েছে।
১) আমি যদি চাকরি না পাওয়া প্রায় কুড়ি লক্ষের মধ্যে একজন হই।
আমি জানি আমার খাতা দেখা হয়নি। কোনও খাতাই দেখা হয়নি।
আমার ওএমআর প্রকাশ করেনি কোনও এসএসসি। আমি এও জানি, যদি কোনও মিরর ইমেজ দেওয়াও হয়, সেটা সম্ভবত এডিটেবল। যেখানে নয় ছয় করার সম্ভাবনা সমূহ, আর ওরা সেটা করবেই।
২) আমি যদি ওদের কেউ হই?
একেবারে অযোগ্য বলে এসএসসি যাদের নাম জমা দিয়েছে। মানে সাদা খাতা, পরীক্ষা না দেওয়া ইত্যাদি সতেরো রকম পদ্ধতিতে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলাম। সুপ্রিম কোর্ট মাইনেতে পাওয়া টাকা ফেরত দিতে বলেছেন।
আমি এঁদের একজন হলে, কী করতাম? যে দালালকে টাকা দিয়েছিলাম তাকে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে টাকা ফেরাতে বলতাম।
যদিও মাইনে ফেরত কী ভাবে দেব আর না দিলে কী শাস্তি হবে সে ব্যাপারে কিছুই ভেবে উঠতে পারতাম না। মানে পারছি না।
স্বভাবতই যার নির্দেশে পুরো কারচুপির কারবার চলেছিল সেই নাট্যসম্রাজ্ঞীর, আর ধরি মাছ না ছুঁই পানির সেই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডএর সেনাপ্রধানের মুখের দিকে আর লোকাল
চামচাদের করুণাপ্রত্যাশী হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই কি করবার ক্ষমতা আছে আমার?
আমি এদের, এই সব নোংরা ডাকাতদের দলের পাকাপোক্ত কর্মী হতাম, সেটাই শেষ গন্তব্য মেনে নিয়ে।
৩) যদি আমি পরীক্ষাও দিয়েছি, আবার টাকাও দিয়েছি এমন কেউ হতাম? যাকে দালাল বলেছে টাকা দিলেই চাকরি, তেমন কেউ হতাম?
চাকরি পেয়েছিলাম আমি আদৌ নিজে পড়াশুনোয় ভালো না, ক্লাসে ভুলভাল পড়াই।
এসএসসির লিস্টে ধরা পড়ি নি। তাই মাইনের টাকাটা ফেরত দিতে হবে না। কিন্তু যে দশ পনেরো লাখ টাকায় চাকরি কিনেছি সেটার কী হবে? আমি এঁদের একজন হলে, কী করতাম?
যে দালালকে টাকা দিয়েছিলাম তাকে টাকা ফেরাতে বলতাম। কিন্তু ইতিমধ্যে আমার ওপর সংসারের ভার পড়েছে। বাবা মা স্ত্রী সন্তান(যাকে আবার দামি ইংরেজি মিডিয়ায় স্কুলে ভর্তি করেছি) এঁদেরকে কী ভাবে প্রতিপালন করব বুঝে উঠতে না পেরে মাথার চুল ছিঁড়ছি চিন্তায়।
এই “আমার মত”দের টাকা দেওয়াদের সংখ্যাটা কিন্তু বিরাট।
৪) যদি আমি পরীক্ষাও দিয়েছি, আবার টাকাও দিয়েছি এমন কেউ হতাম, যাকে দালাল বলেছে টাকা দিলেই চাকরি, তেমন কেউ হতাম? অথচ আমি পড়াশুনোয় ভালো।
পরীক্ষা ঠিক ভাবে দিয়েছি। কিন্তু চাকরি শিয়োর করার জন্য দালালকে টাকাও দিয়েছি।
এটা আমি অনেক ভেবেছি। হ্যাঁ, আমি দালালকে টাকা দিতাম। যে কোনও কম্পিটিটিভ পরীক্ষা এত অনিশ্চিত, মধ্যবিত্ত এই আমি নিশ্চিত দালালকে টাকা দিয়ে চাকরিটা গ্যারান্টেড করতাম।
ছাত্রদের আমি পড়াই যথাযথ ভাবে।
এই রকম “আমার মত”দের এই সংখ্যাটা আগের মানে দুই নম্বর ক্যাটেগরির মতই বিরাট।
৫) আমি পরীক্ষা আমার মতে খুব ভালো দিয়েছি। আমার ইউনিভার্সিটির রেজাল্ট অ্যাডিশনাল প্রমাণ। টাকা দিইনি কাউকে। চাকরি পেয়েছি। এই সংখ্যাটা বেশ কমই।
চাকরি চলে যাওয়ায় আমার অবস্থা কিন্তু ওই তিন আর চারের মতই।
টাকার পরিমানের ওপর আর প্রভাবশালী যোগের হিসেব করলে হয় তো আরও অনেক স্তর বেরোবে।
এবং
স্বাভাবিক বুদ্ধিতেই বোঝা যাচ্ছে, খাতা(ওএমআর) আদৌ দেখা হয়নি। সেই জন্যেই তা নষ্টের জন্য এত তাড়াহুড়ো ছিল। ওদের কারসাজিতে চান্স পাওয়া যোগ্যরা যোগ্য কিনা বোঝার উপায় নেই।
এতগুলো সম্ভাব্য আমি রয়েছি। সবাই ২০১৬র ক্যান্ডিডেট।
জানি না। সত্যিই জানি না কোন আমিটা কী চাই আর কী করব!
শুধু জানি, মরে যাওয়া মৌমিতাকে মেরে ফেলেছিল রাক্ষসীর বাহিনী। হ্যাঁ, প্রমাণও মুছেছিল।
আমি কি প্রমাণমোছা এই চোরডাকাতদের দয়াভিক্ষুক ক্যাডার হবার অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ বেছে নেব? নাকি রাস্তায় রাস্তায় লাঠি আর লাথি খেয়ে মুছে যাব? নাকি অপরিসীম ঘেন্না আর ক্রোধ বুকে নিয়ে অন্য কোনও ভবিষ্যৎ তৈরি করব?
আমাদের প্রমাণ মুছেছে। কিন্তু বিশ লক্ষকে মেরে ফেলা কঠিন নয় শুধ, অসম্ভব।
আবার বলি,
জানি না। সত্যিই জানি না কোন আমিটা কী চাই আর কী করব!
★