জীবনের এই পাঁচ দশক ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতাই করে চলেছি। অন্যদেরও তাই করতে বলি। কিন্তু পুলিশ যদি নিজেই আইনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে অনাগ্রহী হয়? সংবিধান বা ন্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখায়? তাহলে এই সহযোগিতার দ্বারা আমরা দেশ বা রাজ্যের কী উপকার করতে পারব? প্রশাসন যদি “পরিত্রাণায় দুষ্কৃতাং, বিনাশায়চ সাধুনাং” এক বিচিত্র অবতারে অবতীর্ণ হয়, তাহলে?
অত্যাচারিত নিহত মেয়ের বিচারপ্রার্থী মায়ের মাথায় লাঠির বাড়ি মারা থেকে একে একে সব প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানোর দ্বারা পুলিশের তরফে অপরাধীদের স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে তারা যা ইচ্ছে করতে পারে, তাদের বাঁচানোর জন্য প্রশাসন জান লড়িয়ে দেবে। কৌশিক চাকি-দা সহ অনেককে নানাভাবে ভয় দেখানো হয়েছে বা হচ্ছে৷ সাম্প্রতিকতম টার্গেট ডঃ পুণ্যব্রত গুণ এবং ডঃ তমোনাশ চৌধুরী।
তমোনাশ চৌধুরীর সঙ্গে তেমন ব্যক্তিগত আলাপ নেই কিন্তু পুণ্যদাকে তিন দশক ধরে চিনি। সাধারণ মানুষের স্বার্থে তাঁর সারাজীবনের কাজের সঙ্গে সম্যক পরিচিত৷ রাজনীতিমনস্ক ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে আইন ভাঙতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। শাসকদলের পেটোয়া জনৈক মদ্যপ লেখক ছাড়া আর কাউকে তাঁর বিরুদ্ধে কটুকথা বলতে শুনিনি। এই মানুষটিকে প্রশাসনিকভাবে আক্রমণ করার চেষ্টাকে সহজভাবে নিচ্ছি না। রীতিমতো গায়ে মাখছি ব্যক্তি হিসেবেও৷
সেটা বড় কথা নয়। পুণ্যব্রত গুণ আইনের ঊর্ধ্বে নন। অন্যায় করলে তাঁরও শাস্তি হবে। কিন্ত তাঁর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত অন্যায় করলেও শাস্তি হবে, সে আজ হোক বা কাল। কোলকাতা, বিধাননগর বা রাজ্য পুলিশের ক্যাডারে যদি একজনও সৎ কর্মী থাকেন, তাহলে তিনি স্বীকার করবেন, অভয়া হ ত্যা কাণ্ডের প্রেক্ষিতে এতবড় আন্দোলন যতটা অহিংস, শান্তিপূর্ণ এবং আইনানুগভাবে হয়েছে, তেমনটা সহজে দেখা যায় না। কুলতলি বা পটাশপুরের ঘটনার পরবর্তী ভায়োলেন্স মনে করে দেখুন। অভয়া আন্দোলন সেই পথ ধরলে পরিণতি ভয়াবহ হত। বিভিন্নভাবে যথেষ্ট প্ররোচনা দেওয়া সত্ত্বেও তা কিন্তু হয়নি। যথেষ্ট দায়িত্বের সঙ্গে তেমন হতে দেওয়া হয়নি এবং শান্তিপূর্ণ চরিত্র বজায় রাখা হয়েছে। তার কৃতিত্ব রাজ্যের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের পাশাপাশি আন্দোলনের সংগঠকদেরও প্রাপ্য।
তা সত্ত্বেও সেই আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা মানুষদের পরপর আক্রমণ করে মহান পুলিশ কী অর্জন করতে চাইছেন? কোন পরিণতিকে আহ্বান করছেন? শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে এলোমেলো করে দিয়ে রাজ্যব্যাপী সহিংস গণরোষ চাইছেন? কুলতলির মডেলে তার চেয়ে দশ হাজার গুণ বড় একটা অশান্তি চাইছেন? কেন চাইছেন?
এই দুজন চিকিৎসক এবং দুইজন গাড়ি চালক ঠাকুরপুকুর থানায় হাজিরা দিয়ে এসেছেন ১১ ই আগস্ট। ১৮ ই আগস্ট তাঁরা আলিপুর আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করবেন।
সবচেয়ে সংগঠিত গুণ্ডাবাহিনীর নাম হল পুলিশ।তাই তারা রাষ্ট্রের ,শাসকবাহিনীর স্বার্থেই কাজ করে o করবে।স্মরণ করুন ফাদার স্ট্যান স্বামীর কথা যিনি রাষ্ট্রীয় হিংসার শিকার।সেখানে আইন মান বা না মানা ইহ বাহ্য।