গত বছরের লকডাউন এর এক বছর পেরিয়ে আবার কোভিড প্যানডেমিক এর দ্বিতীয় ঢেউ এর মুখোমুখি আমরা। এবং আবার একটা অদ্ভুত এবং অন্যায্য সরকারি বালখিল্যপনার সামনে মেডিকেল কলেজ কলকাতা।
‘উপরমহল’ থেকে নাকি নির্দেশ আসছে কলকাতা মেডিকাল কলেজ কে আবার ‘কোভিড এক্সক্লুসিভ’ বানানো হবে। গত বছর কোভিড এক্সক্লুসিভ করার পর জুনিয়র ডাক্তার দের আন্দোলন ও নন কোভিড রোগীদের বাড়তে থাকা চাপে মেডিকেল কলেজে শুরু হয় নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা। প্রায় সাত আট মাস বন্ধ থাকার পর আস্তে আস্তে নর্ম্যালাইজ হচ্ছে মেডিক্যাল। আউটডোরে, ফার্মাসি তে উপচে পড়া ভিড়, রোজকার ইলেক্টিভ ও ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচার, ক্যানসার রোগীদের কেমোথেরাপি দেখাচ্ছে যে আবার চেনা ছন্দে ফিরেছে মেডিক্যাল। কিন্তু হঠাৎ আবার সেকেন্ড ওয়েভের প্রাক্কালে সব বন্ধ করে কোভিড হাসপাতাল বানাতে চাইছে কর্তৃপক্ষ।
আমাদের স্পষ্ট বক্তব্যঃ
কোভিড প্যানডেমিক মোকাবিলার জন্য মেডিকেল কলেজের স্বাভাবিক নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা ও জুনিয়র ডাক্তারদের একাডেমিক্স কোনোভাবেই একটুও ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।
গত বছর একটা বড় সময় কোভিড এক্সক্লুসিভ করে রাখার ফলে হাজার হাজার নন কোভিড রোগীর চিকিৎসা ব্যাহত হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররা যারা বিভিন্ন স্পেশালিটির এম ডি/ এম এস তাদের হাতে কলমে শিক্ষা, ক্লিনিক্যাল ট্রেনিং ব্যাহত হয়েছে মারাত্মক ভাবে। তার মধ্যেও জুনিয়র ডাক্তারেরা গত এক বছর ধরে কোভিড ডিউটি দিয়ে এসেছেন এবং এখনো দিচ্ছেন। কিন্তু যে বিল্ডিং গুলিতে নন কোভিড রোগীদের পরিষেবা শুরু হয়েছে সেগুলো কোনো ভাবেই কোভিড সেকেন্ড ওয়েভের অজুহাতে বন্ধ করা যাবে না। আমাদের প্রথম থেকেই বক্তব্য ছিল, কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র গুলিকে ডিসেন্ট্রালাইজ করতে হবে। প্রতিটি বড় হাসপাতালের একটা করে বিল্ডিং এ কোভিড রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কলকাতা মেডিকেল কলেজ, সেখানকার ডাক্তারি পড়ুয়া, জুনিয়র ডাক্তার ও সেখানের অসংখ্য রোগীদের কোনো সামান্যতম ক্ষতি ও আর বরদাস্ত করা হবেনা। যে সুপারস্পেশালিটি বিল্ডিং এ কোভিড রোগীদের চিকিৎসা চলছে (এবং এই মূহুর্তে সেখানে উপরের তিনটি ফ্লোর বাদে বাকি জায়গায় কোভিড শয্যা আছে) সেই বিল্ডিং এই কোভিড উইং সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। আর শেষত আবার, এক বছর ধরে কমিউনিটি স্প্রেড ও ভ্যাক্সিনেশন হয়ে যাওয়ার পর এই ‘এক্সক্লুসিভ’ মডেল যে আরো অর্থহীন তা এই মহাজ্ঞানী ‘উপরমহল’ এর বুঝতে এত অনীহা কেন কে জানে!
আমাদের দাবিঃ
১) প্রতিটি বড় হাসপাতালে কোভিড উইং অতি দ্রুত তৈরি প্রস্তুত রাখতে হবে সেকেন্ড ওয়েভের জন্য। কোনো এক বা দুটি টার্সিয়ারি টিচিং হাসপাতাল এর উপর কোভিড এর সমস্ত বোঝা চাপানো যাবেনা।
২) কোনো অবস্থাতেই জুনিয়র ডাক্তারদের পঠনপাঠন ও ক্লিনিক্যাল ট্রেনিং (যা বিভিন্ন রোগীদের চিকিৎসা করার মাধ্যমেই হয়) এর আর কোনো ক্ষতি হতে দেওয়া যাবে না। ইতিমধ্যে একটা বড় সময় কোভিড এক্সক্লুসিভ করে রাখার ফলে তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রেনিং ব্যাহত হয়েছে।
৩) নন কোভিড আই সি ইউ কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না৷ ক্রিটিকাল রোগীদের চিকিৎসা, জটিল অস্ত্রোপচার এর পর রোগীদের শিফট করার জন্য নন কোভিড ICU/ CCU অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সেটা কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না। বরং নন কোভিড CCU/ ICU এর শয্যাসংখ্যা বাড়াতে হবে।
৪) কোনোভাবেই ইমার্জেন্সি পরিষেবা বিন্দুমাত্র ব্যাহত করা যাবে না।
৫) কোনো ফাংশনাল অপারেশন থিয়েটার, ওয়ার্ড, ইন্ডোর কোনো ভাবেই বন্ধ করা যাবে না। জোর করে বন্ধ করাও ভর্তি রোগীদের ছুটি দিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা হলে তা সর্বতোভাবে প্রতিরোধ করা হবে। এবং রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হলে রোগী অসন্তোষ এর দায় কর্তৃপক্ষ কে নিতে হবে।
ইতিমধ্যে আমরা প্রিন্সিপাল ও MSVP কে ডেপুটেশন দিয়ে আমাদের বক্তব্য জানিয়েছি। তারাও বলেছেন আমাদের দাবি যুক্তিযুক্ত। কিন্তু ‘উপরমহল’ থেকে আদেশ আসলে নাকি সব ‘অর্ডার’ ই মানতে হবে, তা যত অযৌক্তিক ই হোক না কেন, তাতে রোগী আর জুনিয়র ডাক্তার দের যতই ক্ষতি হোক না কেন।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ কে মনে করিয়ে দিতে চাইছি, যে মেডিকেল শক্ত ঘাঁটি। যে কোনো মূল্যে এই অপচেষ্টা আমরা রুখবই।
Medical College Kolkata Resident Doctors’ Association
#SaveMCK
#InclusiveNotExclusive
#NoCovidExclusiveMCK