শুরু হয়েছিল থালা, বাসন বাজিয়ে। কিন্তু তাঁরা মহান লোক, ভবিষ্যৎ দেখতে পান। তাই আগাম মোমবাতি জ্বালিয়ে ছিলেন, করেছিলেন পুষ্পবৃষ্টি। যদিও সেসবের তোয়াক্কা না করেই স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের দায়িত্বে তাঁদের কাজ করে গেছেন,অনেকেই একেবারে হাতিয়ার ছাড়া।
যতই তাঁদের ‘কসাই’ বা ‘চশমখোর’ বলা হোক না কেন, তাঁরা কিন্তু পিপিইর বদলে পাওয়া রেনকোট পরেই ঝাঁপিয়েছেন রোগীদের সুস্থ করার কাজে, মহামারীর আকার নেওয়া এই রোগের বিরূদ্ধে রাতদিন এক করে লড়াই করে চলেছেন। আর তা করতে গিয়ে একটা একটা প্রদীপ নিভছে।
১৫৫,১৫৬,১৫৭… দেশজুড়ে সংখ্যাটা বাড়ছে । যদিও এসব কাজে পাকা হিসেব সব সময় পাওয়া যায়, এমন ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। কিন্তু এই সংখ্যাটাই বা কম কী? চিকিৎসা করতে করতে কোনও অসতর্ক মুহূর্তে নিজেরা সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের জন্য ভাববার কেউ নেই। উপরন্তু অনেকের মুখে এও শোনা যায়, ডাক্তাররা এত অসাবধান হয়ে কাজ করে কী করে, যে তাঁদেরও করোনা হচ্ছে? করোনা ছড়াবে এই ভয়ে পাড়া ছাড়াও করা হয়েছে। তারা অসুস্থ হলে একটা বেডের জন্য তাদেরও ঘুরে বেড়াতে হয় এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল। কিন্তু কোনও এক অভিনেতার কোভিডের খবরে তার আরোগ্য কামনায় যজ্ঞ, পুজার্চনা কত কিছু হল। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যাপারে এর সামান্য কিছুও কি নজরে এসেছে?
দাঁত আর ডাক্তার, থাকলে কোনো মর্যাদা নেই। তাদের টেবিলে রাখা ছবি দেওয়ালে ঝুলবে, ফেসবুকে ছবি পোস্ট হলে ভীত সহকর্মীরা লিখবে RIP শ্রদ্ধা, প্রণাম। শুধু কোনো বাবা মা হারাবে তার সন্তানকে, কোন সন্তান হারাবে তার বাবা মাকে।
যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করতে গিয়ে কেউ মারা গেলে তিনি ‘শহীদ’ আখ্যা পান। আর কোনও ডাক্তার মারা গেলে খবর হয়, ‘আজ দেশে করোনার জন্য এত জন মারা গেছে তার মধ্যে দুজন ডাক্তারও আছে।‘
হয়ত কোনো মহান লোক স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য স্মৃতিসৌধ বানাবেন, তাতে লেখা থাকবে যিনি ভিত্তিপ্রস্তর লাগিয়েছেন বা উদ্বোধন করেছেন তাঁর নাম আর শহীদ দেবদূতেরা কৃতজ্ঞতায় পুষ্পবৃষ্টি করবে।