বয়সে আমার চেয়ে ছিলেন ১০ বছরের বড়।
আমার জ্যাঠামশাই ডা ক্ষিতীন্দ্র মোহন গুণ যখন নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজের গাইনোকোলজি-অবস্টেট্রিক্সের অধ্যাপক তখন তিনি ছিলেন তাঁর হাউস স্টাফ।
আমার গড়ে ওঠা যে আন্দোলন গুলোর মধ্যে দিয়ে তার মধ্যে অন্যতম আশির দশকের শুরুর অল বেঙ্গল জুনিয়র ডাক্তার ফেডারেশনের আন্দোলন। তিনি সে আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন না।
আমার নাম তিনি জানেন শ্রমিক নেতা শংকর গুহ নিয়োগীর উপর ১৯৯২-এ প্রকাশিত আকর গ্রন্থ ‘সংঘর্ষ ও নির্মাণ’-এ। আমার কয়েকটি লেখা ছিল সেই গ্রন্থে।
সামনাসামনি পরিচয় আরও প্রায় কুড়ি বছর পরে যখন তিনি রাজ্যের ডিরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিসেস। শ্রমিক কৃষক মৈত্রী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের রেজিস্ট্রেশনের আবেদন প্রায় তিন বছর পড়েছিল হাওড়ার সি এম ও এইচ অফিসে। তাঁর সহায়তায় রেজিস্ট্রেশন পাই।
ডাক্তার অনিরুদ্ধ কর। আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ২০ আগস্ট রাতে।
প্রশাসনের যে স্তরে যখন থাকুন না কেন, কালোকে কালো আর সাদাকে সাদা বলার হিম্মত রাখতেন এই শিরদাঁড়া সোজা স্বাস্থ্য প্রশাসক।
দমদম বিমানবন্দরে যখন কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি আসেন, তাঁর খাবারে বিষ আছে কিনা খেয়ে দেখার দায়িত্ব ছিল উত্তর চব্বিশ পরগনার সি এম ও এইচ-এর। অনিরুদ্ধদা যখন উত্তর চব্বিশ পরগনার সিএম ও এইচ তখন তিনি বিরোধিতা করে এই মধ্যযুগীয় প্রথার অবসান ঘটান।
হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া মহকুমার চেঙ্গাইলে আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তিনি গেছেন আমাদের কাজকর্ম দেখতে। আমাদের স্বাস্থ্য পত্রিকা ‘স্বাস্থ্যের বৃত্তে’-তে প্রবন্ধ লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে। আমাদের নানান সভায় উপস্থিত থেকেছেন শ্রোতা হিসেবে।
তাঁর সঙ্গে বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকেছি ২০১৮-এ সুতানুটি হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির আলোচনা সভায় ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ নিয়ে।
অকৃতদার ডা কর অবসরের পর খুব বেশি সক্রিয় থাকেন নি। যে রাজনৈতিক দলের প্রতি তার আস্থা ছিল সে আস্থা হয়তো কিছুটা টলে গেছিল। না, এটা আমার আন্দাজ, আমার প্রশ্ন উনি এড়িয়ে যেতেন। ভ্রমণ, অভিনয়, সোশাল মিডিয়ায় কিছুটা লেখালেখি–এসবেই সময় কাটাতেন।
অনিরুদ্ধদার আত্মজীবনী–অনেকটা তাঁর কর্মজীবনের ইতিবৃত্ত ‘অকপটে’ চিকিৎসকদের অবশ্য পাঠ্য হওয়া উচিত।
গত বছর কোভিডে আক্রান্ত হন তিনি। কিডনি কার্যক্ষমতা হারায়, দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। অবশেষে তাঁর অসংখ্য গুণগ্রাহীকে ছেড়ে চলে গেলেন ডা অনিরুদ্ধ কর।
আজ অল্পতেই মাথা নিচু করে দেওয়া, শিরদাঁড়া ঝুঁকিয়ে দেওয়া যখন রীতি তখন মেরুদন্ড সোজা রাখতে শেখান ডাক্তার অনিরুদ্ধ কর–এমনটাই কামনা।