তিন-বছরের ডিপ্লোমা ডাক্তার প্রসঙ্গে বারেবারে যে কথাটা উঠে আসছে, সেটা হলো “অপ্রয়োজনীয়” অংশ বাদ দিয়ে দিন। আমার প্রশ্ন ঠিক কোন জায়গাটা এক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়?? ডাক্তারি মানে ভালো করে blood টানতে শেখা, আর ভালো করে channel করতে শেখা, injection দিতে শেখা?? কে বোঝাচ্ছে এসব আমাদের?? ডাক্তার মানে ওই জ্বর হলে প্যারাসিটামল, gas হলে pantoprazole… এটুকু শিখিতে তিন বছর কি তিন মাস-ও তো লাগে না!
ডাক্তারিতে কি কি পড়তে হয়?
প্রথম বছর –
Anatomy – শরীরের প্রতিটা অস্থি-মজ্জা, মাংসপেশী, শিরা-ধমনী-স্নায়ু – এদের গঠন!
Physiology – শরীরের এই যে এতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এদের function
Biochemistry – আরো সূক্ষ্ণ ভাবে শরীরের প্রতিটা কোষ, তার ভিতরের অ্ণু-পরমাণু, বিভিন্ন ক্রিয়া-বিক্রিয়া ইত্যাদি!
দ্বিতীয় বছর –
Pathology – এখানে জানতে হয় বিভিন্ন অসুখ সম্পর্কে, সেসব অসুখ কিভাবে আমাদের শরীরে কি কি ধরণের পরিবর্তন আনে, সেসব বিষয়ে!
Pharmacology – এই যে এতো ওষুধ, এদের শ্রেণী বিন্যাস, এরা শরীরে কিভাবে কাজ করে, এদের উপরে শরীরের কি প্রভাব, কোন ওষুদের সাথে কোন ওষুধ-এর কি ক্রিয়া-বিক্রিয়া হয়। কোন ওষুধের কি side effect!
Microbiology – বিভিন্ন অণুজীব সম্পর্কে পড়াশোনা। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, fungus, protozoa ইত্যাদি!
Forensic Medicine – ডাক্তার হতে গেলে একটু আইন-ও জানতে হয়। ডাক্তারির সাথে জড়িয়ে থাকা আইন, ethics সাথে অপরাধ জগৎ-এর কিছু অংশ, মৃত্যু, মৃতদেহ পরীক্ষা ইত্যাদি
এর পরের বছর আসে –
Community Medicine – সমাজ-পরিবার এবং অসুখের সম্পর্ক, communicable, non-communicable অসুখ, সে অসুখের প্রতিরোধ ব্যবস্থা epidemic – pandemic ইত্যাদির প্রতিরোধ।
Eye – চোখ
ENT – কান-নাক-গলা
এরপরের এবং শেষ বছরের subject গুলো আমরা সবাই মোটামুটি জানি –
Medicine, Surgery, Gynae, আর paediatrics (শিশু )
কিন্তু এরপরেও বাদ পড়ে থাকে Psychiatry, Radiology, Oncology, Skin, Anaesthesia -এসব মেডিসিন এর মধ্যে একটু করে ঢোকানো থাকে ঠিকই, কিন্তু এসব বিষয়ে জ্ঞান তৈরি হওয়ার আগেই দেখতে দেখতে সাড়ে চার বছর কেটে যায়! তারপরে internship এ হাতে কলমে রোগী দেখার অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা হয়…
তা এর ঠিক কোন জায়গাটা অপ্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে?? Injection দিতে গেলে শিরা ধমনী আর মাংসপেশীকে জানতে হয়, channel করতে গেলেও… নইলে ওই “নার্ভ এর ভিতর দিয়ে channel” হয়ে যেতে পারে… আবার একটা ওষুধ লিখতে গেলে সেটা শুধু লিখে দিলে হয়না… জানতে হয় সেই ওষুধ আমাদের liver বা kidney তে ঠিক কিভাবে effect করে, জানতে হয় সেই ওষুধ শরীরে কতক্ষণ থাকে, সেই ওষুধের সাথে অন্য কি ওষুধ খাওয়া যায় আর কি ওষুধ খাওয়া যায়না…. একটা surgery করতে গেলেও anatomy-physiology জানতে হয় আবার একটা ওষুধ লিখতে গিয়েও microbiology, pharmacology র জ্ঞান কাজে আসে!
আমাদের সমাজে এখন একটা বার্তা পৌঁছেছে… পড়াশোনা জিনিসটা খুব “অপ্রয়োজনীয় “… এটা শুধু ডাক্তারির ক্ষেত্রে নয়, সর্বত্র… উচ্চশিক্ষা দিয়ে কি হবে? গবেষণা করে কি হবে? Degree দিয়ে কি হবে??
টাকা রোজগার করতে আর কাজ চালাতে যেটুকু “practical knowledge” থাকে সেটুকু দিয়ে চালিয়ে দিলেই হয়… এই trend টাই ভয়ঙ্কর! Theory বিহীন practical খুব ভয়ঙ্কর!!
গাড়ি চালাতে গেলেও গাড়ির পার্টসগুলো চিনতে হয়, ট্রাফিক রুলস জানতে হয়, direct রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নেমে গেলে কি হতে পারে ভেবেছেন কখনো?