ইদানিং শিশু এবং কিশোয়ারদের মধ্যে খুব বেশি ওজন বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আধুনিক দ্রুতগতির জীবন ও নগরায়নের যুগে এ বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া ভীষণ জরুরি। একদম ছোটবেলা থেকে এর বিরুদ্ধে ঠিকঠাক পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে তা মোটা অসুস্থ পরিণত বয়স্ক প্রজন্মের সৃষ্টি করবে। সঙ্গে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের মতো ‘আধুনিক মহামারি’র সম্ভাবনা বাড়াবে সুতরাং সাবধান!
অভিভাবকেরা নিচের বিষয়গুলো জেনে রাখুন/মেনে চলুন:
- মোটা হওয়ার সহজ মানে হলো, শরীরে চর্বি জমার কারণে বয়স এবং লিঙ্গের তুলনায় এমন ওজন বেশি যা দৈনিক জীবনযাত্রার পক্ষে অস্বস্তিকর অসুবিধার এবং ঝুঁকির।
- পরিবেশগত এবং জিনগত দুটো কারণণেই এটা হতে পারে। মোটা বাবা মায়ের মোটা সন্তান জিনের কারণে হয়, তা আরও বাড়ে বাবা মায়ের খাদ্য বিষয়ক সচেতনতা না থাকলে।
- প্ৰতি বয়সে লিঙ্গভেদে শিশু এবং কিশোরদের সুষমখাদ্যে ভিন্ন ভিন্ন উপাদান ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় দরকার হয়।আপনার চিকিৎসকের কথা মতো সেই রীতি মেনে বাচ্চার খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করুন। খাবার দরকারের থেকে বেশি দিয়ে আদর অথবা কম দিয়ে শাস্তি দেবেন না বাচ্চাকে।
- প্রথম ছমাস পর্যন্ত বাচ্চার জন্য বুকের দুধের কোনও বিকল্প নেই।এতে সঠিক খাদ্য উপাদান বাচ্চার বয়স অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় থাকার কারণে বাচ্চার মোটা হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা নেই। ছমাস থেকে পারতপক্ষে বাড়ির তৈরি পুষ্টিকর সুষম খাবার বাচ্চাকে দিন। গোটা দিনে চার থেকে ছবার বাড়ির তৈরি অর্ধতরল বা শক্ত খাবারই যথেষ্ট।খাবারের দানা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে।খাবার জোর করে নয়,চাহিদা অনুসারে দেবেন।আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ এ বিষয়ে খুব জরুরি। বেশির ভাগ অভিভাবক বাচ্চাকে দরকারের বেশি খাওয়ান।
- কোনও খাবার স্কিপ করবেন না, তাতে পরের খাবার বেশি দ্রুততার সঙ্গে শরীর শোষণ করবে।
- খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য তাতে অকারণে চিনি মেশালে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
- শিশু কিশোরদের খাবার দেওয়ার সময় প্লেটের অর্ধেকটা যেন ফল এবং সব্জি দিয়ে ভর্তি থাকে,তাতে ভাত রুটি এবং অন্য শক্তিবর্ধক খাবার দরকারের বেশি না দিলেও চলে, যা মোট হওয়ার একটা প্রধান কারণ।
- অভ্যাস করান গোটা দিনে চারটে মিলের। এবং তাদের মধ্যে ব্যবধান চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। যেমন সকাল সাতটা, দুপুর বারোটা, বিকেল পাঁচটা, রাত নটা। সকাল সকালের সময়ে শুরু করুন, দশটায় নয়।
- রাস্তার খাবার,তৈলাক্ত খাবার, ক্রিম জাতীয় খাবার, বার্গার, পেস্ট্রি, মাখন,পাঁঠার মাংস, আইসক্রিম এগুলো ওজন বাড়ায়, সাবধান।
- খেতে খেতে টিভি দেখা খুবই বিপজ্জনক এবং ক্ষতিকারক স্বভাব,এতে বাচ্চা বেশি খেয়ে ফেলে।দুবছর পর্যন্ত টিভি দেখা উচিত না,ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার উচিত না,দুবছরের পরেও সর্বমোট দুই ঘণ্টার বেশি টিভি দেখা ক্ষতিকর।
- বিকেলবেলাটা বাচ্চার খেলার জন্য বরাদ্দ রাখুন পড়া,নাচ গান তবলা এবং আবৃত্তি শেখার জন্য নয়। তাতে ক্যালোরি বার্ন হবে। শরীরের প্রতিটা কোষে রক্ত সঞ্চালিত হয়ে তা তরতাজা থাকবে।
- প্রতি বয়সে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুমের দরকার, রাত জাগা মানে বেশি খাওয়া এবং মোটা হওয়া। ন্যূনতম আট ঘণ্টা ঘুম অবশ্যই দরকার।
- দুটো খাবারের মাঝে খাওয়া কে বলে snacking. এটা মোটা হওয়ার অব্যর্থ সহায়ক।
- অনেক সময় হরমোনের আধিক্য এবং স্বল্পতাতে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগ তাড়াতাড়ি নিরুপন করে তার চিকিৎসা চালু করতে হবে।
খাবার এবং লাইফস্টাইলের ব্যাপারে আপনাকে আপনার বাচ্চার রোল মডেল হতে হবে কারণ সে আপনার দেখেই শেখে।
সংক্ষেপে, সঠিক বয়সে সঠিক খাদ্য নির্বাচন,পরিমিত ঘুম,শরীর চর্চা, পরিমিত অথবা কম ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার,শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন, রোগের চিকিৎসা,বাইরের খাবার পরিহার এবং বাবামায়ের নৈতিক সমর্থন এগুলো সবই হলো শিশু ও কিশোরদের মোটা না হওয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার।
০৮.০৭.২০২৪








