একটা সময় ছিল যখন মানুষ ক্যান্সার মানেই ভাবত মৃত্যুর পরোয়ানা। কিন্তু অত্যাধুনিক চিকিৎসার সাহায্যে ক্যান্সার এখন সম্পুর্ন সারিয়ে তোলা সম্ভব। আমরা যারা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ তারা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পত্র পত্রিকায় ক্যান্সার চিকিৎসায় অত্যন্ত আশানুরূপ ফলাফল প্রকাশিত হতে দেখি। নিজেদের প্র্যাক্টিসেও দেখি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আপনারা কেন এত ক্যান্সারে মৃত্যু বা অসফল চিকিৎসার খবর শোনেন। এর কিছু কারণ আছে।
ক্যান্সার চিকিৎসায় সম্পুর্ণ সারে যদি সেটি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আগেই চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা যায়। মানে আর্লি ক্যান্সার ডিটেকশন। দেরি না করে তাড়াতাড়ি সমস্যা হলেই ক্যান্সার চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা করানো এবং সুস্থ হওয়া।
এছাড়া আরো একটা অত্যন্ত জরুরি শর্ত আছে তা হল প্রথমবার, মানে ধরা পড়ার পরই সঠিক চিকিৎসা করানো। সোজা কথায় কারও ক্যান্সার ধরা পড়লে তার ঠিক ঠিক যে চিকিৎসা যে ক্রমে দরকার সেভাবে করানো। একবার অসম্পুর্ণ বা সঠিক ক্রমে চিকিৎসা না হলে ক্যান্সার ফিরে আসে এবং একবার ফিরে এলে তা ঠিক করা খুব কঠিন। ঠিক করা যায় না তা নয় কিন্তু ব্যার্থতার সম্ভাবনা প্রবল।
সঠিক চিকিৎসা এবং সঠিক ক্রম মানে কি?
ক্যান্সারের চিকিৎসায় মূলত রেডিয়েশন, অপারেশন, কেমোথেরাপি, ইমুনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি এ সব গুলি বিভিন্ন ক্রমে প্রয়োগ করা হয়। মুলত রেডিয়েশন ও অপারেশন করে সলিড অরগ্যানের ক্যান্সার (ব্রেস্ট, ফুসফুস, প্রস্টেট, গলা, ইত্যাদি ) সারিয়ে তোলা যায়। কেমোথেরাপি তাতে সাহায্য করে।
এবার এই চিকিৎসাগুলো যখন যে ক্যান্সারে যে স্টেজে যা যা লাগবে সেই সেই চিকিৎসা সঠিক ক্রমে (কোনটা আগে কোনটা পরে) দিতে পারাই হল সঠিক চিকিৎসা। মানে ধরুন রেক্টাম বা মলদ্বারের ক্যান্সার আগে রেডিয়েশন দিতে হবে সাথে কেমোথেরাপি তারপর অপারেশন করতে হবে। যদি তা না করে আগেই অপারেশন করা হয় তাহলে সুস্থতা অনিশ্চিত। এবার ক্যান্সার ফিরে এলে আর প্রথমবার চিকিৎসায় যে সাফল্য ছিল সেই হারে এবার সাফল্য পাওয়া যাবে না।
ঠিক তেমনি যে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আগে কেমোথেরাপি দিয়ে তারপর অপারেশন করতে হবে তার আগেই অপারেশন করলে সুস্থতার হার কমে যাবে।
এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, চিকিৎসা সম্পুর্ণ না করলেও কিন্তু একই ব্যাপার। যেমন ব্রেস্ট ক্যান্সারে অপারেশন হল, কেমোথেরাপি হল কিন্তু রেডিয়েশন দরকার ছিল অথচ কেউ তা নিলেন না। এবার অসুখ ফেরত এলো, এখন কিন্তু আর রেডিয়েশন নিলে বা আবার অন্যান্য চিকিৎসা করলে সুস্থ করা সম্ভব নাও হতে পারে।
আপনি একজন সাধারণ মানুষ হয়ে বুঝবেন কেমন করে চিকিৎসা সঠিক বা সম্পুর্ন হলো কিনা?
সেটা ক্যান্সারের ডাক্তার ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়। তাই ক্যান্সার ধরা পড়লে এমন একটা হাসপাতালে যেতে হবে যেখানে ক্যান্সা্ররে সব বিভাগ যেমন রেডিয়েশন, ক্যান্সার সার্জারী, কেমোথেরাপি এই সব বিভাগের ডাক্তার বাবুরা আছেন। ওনারা নিজেদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, প্রকাশিত তথ্য বা এভিডেন্সের ওপর ভিত্তি করে যে যে চিকিৎসা যে যে ক্রমে করা উচিত তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা বা টিউমার বোর্ড করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এই সিদ্ধান্ত হবে বৈজ্ঞানিক পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য বা এভিডেন্স ভিত্তিক, নৈতিক বা এথিক্যাল ও একজন রোগী র প্রেক্ষিতে যথোপযুক্ত (ইন্ডিভিজুয়ালাইজড)।
যদি প্রথম বার সঠিক চিকিৎসা হয় ক্যান্সার সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু মনে রাখবেন একবার ক্যান্সার ফিরে এলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার সেই সুস্থতার হার কমে যায়,চিকিৎসা আরো জটিল হয় ও তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়রও বেশী হয়। তাই প্রথমবার সঠিক চিকিৎসা ক্যান্সার মুক্তির চাবিকাঠি।