লেখাটা ওমিক্রন আসার আগেই লেখা
কোভিডের সংক্রমণ এখন কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে?
আইসিএমআর-এর সেরো-পজিটিভিটি স্টাডি আর ১০০ কোটি মানুষের ভ্যাকসিনের পর এটুকু অন্তত বলা যেতে পারে আমরা একটা হার্ড ইমিউনিটিতে মোটামুটি পৌঁছে গেছি। এখন আমাদের জনসংখ্যার একটা অংশের কিন্তু কনস্ট্যান্ট পার্সেন্টেজ অফ পজিটিভিটি কোভিড কেস দেখা যাচ্ছে, আমরা এখন কোভিড এনডেমিক স্টেটে পৌঁছে গেছি।
এই অবস্থায় কি কোভিডের থার্ড ওয়েভ কি আসতে পারে?
আমার নিজের ব্যক্তিগত মতামত আর হয়তো ওয়েভ আসবে না। ওয়েভ-এর অর্থ সংক্রমণের ঢেউ, ঢেউ যেটা সেকেন্ড ওয়েভে দেখেছিলাম, ফলে থার্ড ওয়েভ আসার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কম, যেখানে পুরো পপুলেশন একটা হার্ড ইমিউনিটি্র জায়গায় পৌঁছে গেছে। কিন্তু অনেক স্পাইক হতে পারে ।
কোভিড স্পাইক কি?
করোনা হচ্ছে এক ধরনের আরএনএ ভাইরাস আর এই আরএনএ ভাইরা্সের মিউটেশন প্রবণতা অনেক বেশি, তাই যতবার কোন সিগনিফিকেন্ট মিউটেশন হবে যাকে আমরা জেনেটিক ড্রিফট বলি (Omicron, এইবার), ততবার একটা করে আমরা স্পাইক পাব। যেমন ইনফুয়েঞ্জাy এক দু বছর ছাড়া ছাড়া আমরা স্পাইক দেখতে পাই ।
এই এনডেমিক স্টেটে কোভিডের কি ভিরুলেন্স কতখানি থাকতে পারে?
এখন আমরা ধরেই নিচ্ছি প্রত্যেকের হয় আর্টিফিশিয়াল ইমিউনিটি মানে ভ্যাকসিনেশন কিংবা ন্যাচারাল ইমিউনিটির মাধ্যমে কোভিডের মেমোরি সেল তৈরি হয়ে আছে। এখন লাখ টাকার প্রশ্ন হচ্ছে এই প্লাজমা বি সেল বা মেমোরি সেল পর্যাপ্ত ইমিউন রেসপন্স তৈরি করতে পারছে কিনা সেটা দেখার। এখন একটা সেকশন অফ পপুলেশন যারা পজিটিভ হয়ে ভর্তি হচ্ছে তাদের মাঝারি থেকে বেশি মাত্রায় ইনফেকশন হচ্ছে তাদের কিন্তু এই পর্যাপ্ত ইমিউন রেসপন্স হচ্ছে না।
এখন যাদেরই পর্যাপ্ত ইমিউন রেসপন্স হচ্ছে না, এই পপুলেশনটা কারা?
এরা, যাদের মধ্যে কোমর্বিড কন্ডিশন রয়েছে, যেমন দীর্ঘস্থায়ী ডায়াবেটিস, মাঝারি থেকে প্রবল স্থূলতা, হাইপারটেনশন, মেটাবলিক সিনড্রোম মূলত সেই সমস্ত রোগ যেইগুলো পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে ডিফেক্ট করে অ্যান্টিবডি নিঃসরণ করতে বাধা দেয়,যাদের কার্যকরী বি সেল-এর থেকে ডিস্ফাংশনাল বি সেল অনেক বেশি।
কি করে ফাংশানাল বি সেলের সংখ্যা আমরা বাড়াবো বা ইমিউনিটিকে আরো স্ট্রং করব?
যাদের অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরল,হাইপার টেনশন ,ওবেসিটি রয়েছে–সেই সমস্ত রোগগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, পরিমিত খাদ্যাভাস (ব্যালেন্স ডায়েট), রিফাইন সুগার বর্জন করা এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করা।
গ্যালন গ্যালন সকালবেলা উঠে কোন আয়ুর্বেদিক পানীয় কিংবা মাল্টিভিটামিন ইমিউন সিস্টেমকে কিন্তু শক্তিশালী করে না।
কোভিড এর থেকে বাঁচার পদ্ধতিগুলো কি?
কিন্তু এখনও কোন ডকুমেনটেড চিকিৎসা বেরোয়নি, আমাদের প্রাইমোরডিয়াল এবং প্রাইমারি প্রিভেনশনের উপরে জোর দিয়ে রাখতে হবে।
প্রাইমোরডিয়াল প্রিভেনশনঃ
আপনার ইমিউন সিস্টেমকে স্ট্রং করা যেটা করবেন আপনার কোমর্বিড কন্ডিশনগুলোকে নিয়ন্ত্রিত করে এবং পরিমিত খাদ্যাভাস (রিফাইন সুগারকে বর্জন করা) এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করে।
প্রাইমারি প্রিভেনশনঃ
মাস্কটাকে পকেটে নিয়ে নিয়ে ঘুরলে চলবে না এটা আপনার মানিব্যাগ নয় কিংবা থুতনির নিচে পড়ে আমরা আড্ডায় যদি ব্যস্ত হয়ে পড়ি, সেই অভ্যাস থেকে বিরত হতে হবে। দূরত্ব বজায় রাখাটা হয়তো আমরা সব সময় পারবো না কিন্তু এই মাক্স পড়া এবং ঘনঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, কাছের মানুষ গুলোর মুখ চেয়ে ,এইটা তো অন্তত করতেই পারি তাই না? কারণ আপনি যখন কোভিড বাইরে থেকে ঘরে বয়ে নিয়ে আসবেন আপনার কাছের মানুষগুলোর কিছু খারাপ হোক তার কারণ আপনিই হন ,সেটা নিশ্চয়ই চাইবেন না।