পূর্ব প্রকাশিতের পর
NMC-র প্রস্তাবিত গঠন পদ্ধতি
NMC Bill সংসদের দুই কক্ষে পাশ হয়ে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর সম্পুর্ণ। তাই একে আর প্রস্তাবিত বলার মানে হয় না। বরং NMC- তে কী থাকবে সেটাই আলোচনা করা যাক—
মূল কমিশনে থাকবে ৩৩ জন।
১. চেয়ারম্যান
২. ১০ জন Ex-Officio সদস্য
৩. ২২জন আংশিক সময়ের বা পার্ট টাইম সদস্য
চেয়ারম্যান অবশ্যই হবেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী সমেত চিকিৎসক। তিনি অন্ততঃ ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হবেন, যার মধ্যে অন্ততঃ ১০ বছর কোনও প্রতিষ্ঠানের সামনের সারিতে (Leadership)-এ থাকা প্রয়োজন।
১০জন এক্স-অফিসিও সদস্যের মধ্যে—
১. চারজন NMC-র অধীনে চারটি বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যান।
২. কেন্দ্রীয় হেলথ সার্ভিসেস-এর ডিরেক্টর জেনারেল।
৩. ICMR (Indian council of Medical Research)-এর ডিরেক্টর।
৪. বিভিন্ন AIIMS –এর ডিরেক্টরদের মধ্যে একজন।
৫. পি.জি.আই., চন্ডিগড়, JIPMER, পন্ডিচেরী, অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন, কোল্কাতা, শিলং-এর ইন্দিরা গান্ধী রিজিওনাল ইনস্টিটিউট, টাটা মেমোরিয়াল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠাঙ্গুলি থেকে ২ জন (শীর্ষস্থানে থাকা ব্যক্তিদের থেকে)।
৬. কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিনিধি।
২২জন পার্ট টাইম সদস্যরা হলেন—
১. তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, যারা আসবেন আইন, ম্যানেজমেন্ট, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতি, ক্রেতাসুরক্ষা বা রোগীদের অধিকার নিয়ে কাজের মধ্যে থাকা পরিসর থেকে—অর্থাৎ, এরা ডাক্তার নন।
২. ১০ জন, প্রদেশ ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে নিযুক্ত বা মনোনীত প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে – প্রতিটি প্রদেশ ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হেলথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য্য বা সমতুল্য ব্যাক্তিকে পাঠাবে।
৩. ৯জন প্রদেশ ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের State Medical Council থেকে মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে।
আংশিক বা পার্ট টাইম সদস্যদের কার্যক্রমের মেয়াদ ২ বছর। অন্যদের চার বছরের। প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল একজন করে এবং প্রতিটি State Medical Council একজন করে প্রতিনিধি পাঠাতে পারে। কমিটিতে বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করতে পারবে Rotational পদ্ধতিতে এবং এই পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সুতরাং, কমিশনের মূল কমিটিতে সব সময়েই বহু রাজ্য প্রতিনিধিহীনই থাকবে, কমিশন প্রতি ৩ মাস অন্ততঃ ১বার বসবে।
এবার আসি, আগেই উল্লেখ করাআ চারটি বোর্ডের বিষয়ে। এই বোর্ডগুলি হল,
১. Undergraduate Medical Education Board
২. Post-Graduate Medical Education Board
৩. Medical Assessment and Rating Board
৪. Ethics and Medical Registration Board
প্রতিটি বোর্ডে একজন চেয়ারম্যান, ২জন Ex-Officio সদস্য, ২জন পার্ট টাইম সদস্য থাকবে। চেয়ারম্যান অবশ্যই চিকিৎসক হবেন অন্ততঃ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন যার মধ্যে অন্ততঃ ৫ বছর সাম্নের সারিতে কাজের দাআয়িত্ব থাকা। Part Time সদস্যদের মধ্যে প্রতি বোর্ডেই একজন State Medical Council –এর প্রতিনিধি থাকবেন। প্রথম ও দ্বিতীয় বোর্ডে একজন সদস্য আসবেন আইন, ম্যানেজমেন্ট, অর্থনীতি ইত্যাদি থেকে আসা সদস্যদের মধ্য থেকে। প্রতিটি বোর্ডে মাসে অন্ততঃ একবার বসবে। এছাড়া সহায়তা করার জন্য থাকছে বৃহত্তর পরিসর Medical Advisory Council. এতে অংশগ্রহণ করবেন –
১. চেয়ারপার্সন, NMC
২. সমস্ত Ex-Officio
৩. প্রতিটি প্রদেশ ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে মনোনীত সদস্য।
৪. প্রতিটি State Medical Council থেকে মনোনীত সদস্য।
৫. চেয়ারপার্সন, UGC
৬. ডিরেক্টর, National Assessment and Accrediation
৭. IIT, IIMS, Indian Institute of Science –এর ডিরেক্টরদের মধ্য থেকে চারজন।
এই কাউন্সিল বছরে অন্ততঃ ২বার বসবে।
রাজ্য সরকারে প্রতিনিধি এবং State Medical Council –এর প্রতিনিধি ছাড়া
সমস্ত সদস্যকে মনোনীত করবে একটা Search committee. এই Search committee তে থাকবে—
১. চেয়ারপার্সন হিসাবে ক্যাবিনেট সচিব।
২. ৩জন মেডিকেল বিশেষজ্ঞ যাদের প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা অবশ্যি ২৫ বছরের বেশি। বলাবাহুল্য, এরা সকলেই সরকার মনোনীত সদস্য।
৩. কমিশনের (NMC) Part time সদস্যদের মধ্য থেকে একজন বিশেষজ্ঞ ।
৪. চিকিৎসা ছাড়া অন্যন্য বিষয়ে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন বিশিষ্ট ব্যাক্তি।
৫. কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব, তিনি এই কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে কাজ করবেন। –অর্থাৎ সমস্তটাই কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত। বোঝা যাচ্ছে না, এর পরেও কিভাবে NMC ও তার বোর্ডগুলি স্বয়ংশাসিত সংস্থা ‘বা ‘Autonomous Board’ হিসাবে গণ্য হবে।
কমিশনে একটি Secretariat থাকবে যার Secretary হবে সরকার মনোনীত আমলা। কমিশনের যে কোন নির্দেশ তার স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ, তার সই ছাড়া কোনও নির্দেশ বৈধ বলে গণ্য হবে না। কমিশন ইচ্ছা করলে, প্রশাসনিক আর্থিক দায়িত্বের একটা অংশ Secretary-র উপর ন্যস্ত করতে পরে (ধারা ১০.৩)।
সব মিলিয়ে তাহলে রাজ্যের ভাগে কি থাকছে? বছরের দু’বার করে সমস্ত রাজ্যও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল তাদের বক্তব্য রাখতে পারবে Advisory Council-এর সভায়—এটা কিন্তু কোনও সিদ্ধান্ত নেবার জায়গা নয়। আর, কয়েক বছর অন্তর প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ২ বছরের জন্য তাদের প্রতিনিধি পাঠাতে পারবে কমিশনে। অবশ্যই একবার পাঠানো হলে, অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী Rotation-এর জন্য।
NMC-তে বাড়তি কী আছে যা MCI –তে নেই?
১. সমস্ত স্তরে কেন্দ্রীয় সরকারের অতি কড়া নিয়ন্ত্রণ, যা কখনই Autonomous সংস্থার সাধারণ ধারণার সঙ্গে খাপ খায় না। ৪৫ নং ধারায় পরিষ্কার বলা আছে, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও নির্দেশ মানতে কমিশন বাধ্য। ৪৬ নং ধারায় তো রাজ্য সরকারকেও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দরকার মতো কেন্দ্রীয় সরকার দিতে পারে, তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখিত, যদিও স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কোনওটাই কেন্দ্রীয় সরকারের পুরোপুরি আওতার মধ্যে পড়ে না।
২. MCI –তে প্রতিনিধিরা বিভিন্ন রাজ্য থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে আসতে পারতো। সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক হতো চেয়ারপার্সন ও ভাইস চেয়ারপার্সন। বর্তমানে কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধির জায়গাই নেই—আপাদমস্তক মনোনীত। একমাত্র অল্প ব্যতিক্রম State Medical Council-এর প্রতিনিধি। তিনিও মনোনীত Council-এর দ্বারা তবে সাধারণভাবে State Medical Council-এর সদস্যরা নির্বাচিত হন (ব্যতক্রমও আছে)।
৩. State Medical Councii-এর অন্ততঃ কিছু ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র অস্তত্ব ছিলো ১০.১ (f) ধারা অনুসারে। কমিশন প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে পারে যাতে কমিশন ও State Medical Council একই সুত্রে কাজ করতে পারে। ২৭ ও ৩০.০ ধারা অনুযায়ী কমিশনের Ethics & Registration Board State Council এর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে Appellate Body হিসাবে কার্য্যকরী হতে সক্ষম। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান অবস্থায় এই ব্যবস্থা কিছু সদর্থক ভূমিকা পালন করতে পারে।
৪. ৩২ নং ধারায় Medical Community Health Worker-র তৈরী করার কথা বলা হয়েছে। চিকিৎসাকর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষনের মাধ্যমেই নাকি এই মধ্যবর্তী স্বাস্থ্য সহায়ক কর্মীবৃন্দ তৈরী করা হবে। তাদের সংখ্যা কখনই সমগ্র চিকিৎসক সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশী হবে না অর্থাৎ মোটামুটি ৩ লক্ষের কাছাকাছি থাকবে। যাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাদের শিক্ষাগত মান এবং প্রশিক্ষনের সময়সীমা কোনওটাই পরিষ্কারভাবে বলা হয়নি। প্রাথমিক ও প্রতিরোধ্মূলক (preventative) স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে এবং নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ prescribe করতে পারবে। এর উপরের সস্তরে, কোনও চিকিৎসকের তদারকিতে (Supervision ) কাজ করতে পারবে। কিন্তু এই চিকিৎসাকর্মী কারা হবে? নার্সিং স্টাফ? এটা ঘটনা নার্সিং স্টাফেদের প্রশিক্ষিত করে চিকিৎসকের সহকারী পর্যায়ে অবশ্যই নিয়ে আসা সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হলো। দেশে ডাক্তারের যা অভাব তার থেকে অনেক অনেক বেশী দরকার নার্সিং স্টাফের। একটি মার্কিন সংস্থার (CDDEPUS)-তথ্য অনুযায়ী, এই মুহুর্তে ভারতবর্ষে বাড়তি চিকিৎসকের দরকার প্রায় ৬ লক্ষ আর সেখানে নার্সিং স্টাফের অভাব খুব কম করে ২০ লক্ষ। …তাহলে নার্সিং স্টাফকে ডাক্তার করলে তার জায়গায় কে কাআজ করবে? নাকি Two-in-One পরিষেবা চালু করা হবে। যে ডাক্তার। সেই নার্স। অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মী, প্যারামেডিকেল স্টাফ—সকলের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। WHO বলছে, Health Work Force থাকা উচিৎ প্রতি হাজার জনসংখ্যায় ৩৮ জন।
ভারতবর্ষে অনেক জায়গায়; বিসশেষত পুর্ব ভারতে তার সুংখ্যা প্রায় অর্দ্ধেক। সারা পৃথিবীর রোগের পরিমানের ৯Global burden of diseases) ২০ সশতাংশই ভারতের অথচ Community Health Worker-এর সংখ্যা সারা পৃথিবীতে ৯ শতাংশ মাত্র। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিসসংখ্যান হলো ল্যাবরেটরী টেকনিসিয়ানদের (Business Standard’17)। তাহলে রইলো কারা? এমনকি চতুর্থ সশ্রেনীর কর্মচারীতেও ব্যাপক ঘাটতি। পশ্চিমবঙ্গ সহ অনেক রাজ্যেই নিয়মিত নিয়োগ বন্ধ। চুক্তির ভিত্তিতে লোক দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। তাহলে কি আয়ুষ ও অন্যান্য শাখার সদস্যদের পিছনের দরজা দিয়ে ঢোকানোর রাস্তাই পরিষ্কার করা হচ্ছে। নাকি Quack বা হাতুড়েদের স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে চালিয়ে দেওয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবসশ্য এ ব্যাপারে আগেই এগিয়ে।
আর একটি কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের উপরে এরা চিকিৎসকের অধীনে কাজ করতে পারবে। তাহলে তো মফঃস্বল শহর এমনকি মূল শহরগুলিতে বিভিন্ন নার্সিং হোম ও প্রাইভেট হাসপাতালে এদেরই ব্যাপকভাবে RMO হিসাবে ব্যাবহার করা হবে (বস্তুতঃ, এমনই কোল্কাতার বহু বেসরক্স্রী হাসপাতাল হোমিওপ্যাথ – আয়ুর্বেদ ইত্যাদির ডিগ্রী প্রাপকদের RMO হিসাবে কাজে লাগায় কম টাকায় কিন্তু রোগীর প্রাণের ঝুকির বিনিময়ে। এটা কিন্তু রাজ্যের Clinical establishment act ’17 –এর অনুমতিক্রমেই।
সরকারী ছাপমারা ‘প্রশিক্ষিত’ Quack তৈরীর ফল হবে সুদূরপ্রসারীভাবে মারাত্মক।
৫. NEXT (ধারা নং 15)–এটা এক অতি বিতর্কিত সংযোজন। আগামী ৩ বচ্ছরের মধ্যে সারা ভাআরত প্রবেশিকা পরীক্ষার (NEET) মতো। সারা ভারতে মেডিকেলের শেষ বর্ষের বা ফাইনাল পরীক্ষা একই সঙ্গে National Exit Test (NEXT) সংগঠিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কমিশনকে। এই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েটে ভর্তি নির্ধারিত হবে। সুতরাং, এটাতে ডাক্তারির ছাড়পত্র এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েটে সম্ভাব্য ভর্তির সুযোগ এক সঙ্গে পাওয়া যাবে—নতুন করে আর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট Entrance পরীক্ষা দিতে হবে না। একই সঙ্গে বিদেশে MBBS বা সমতুল্যা পাশ করা ছাত্রদের এদেশে ডাক্তারী ছাড়পত্র পাবার জন্যও এ পরীক্ষা আবশ্যক। সবই তো ভালো, তাহলে সমস্যা কোথায়?—সমস্যা প্রচুরঃ
ক) ডাক্তারী পরীক্ষায় শতকরা ৫০ ভাগ থাকে মৌখিক ও প্র্যাকটিক্যাল। তার অস্তিত্ব কী থাকবে? যদি থাকে, তাহলে প্রতি বছর ৭০ হাজারের বেশী ছাত্রছাত্রীর কেন্দ্রীয়ভাবে Oral – Practical তো সম্ভব নয়। বর্তমান ব্যবস্থায় (স্থানীয়ভাবে সংগঠিত) সঙ্গে তার পার্থক্য কোথায় থাকবে?
খ) ডিগ্রী দেয় ইউনিভার্সিটি, কমিশন কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নিলে ইউনিভার্সিটি ডিগ্রী দিতে কী বাধ্য? এটা ইউনিভার্সিটির স্বাতন্ত্রতায় আঘাত করবে না তো?
গ)MBBS –এর শেষ বছরে কিন্তু সব বিষয়ের পরীক্ষা হয় না। অনেকগুলিবিষয়ের শেষ পরীক্ষা আগের বছরগুলিতেই হয়ে যায়। বিদেশী ডাক্তারি ডিগ্রীপ্রাপ্তদের কিন্তু এখানকার নিয়ম অনুযায়ী সব বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। আবার, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রবেশিকাতে তো সমস্ত বিষয় লাগবেই। তাহলে, MBBS –এর ফাইনাল বর্ষের পরীক্ষা, পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের প্রবেশিকা ও বিদেশী ডিগ্রীপ্রাপ্তদের ছাড়পত্র একই সঙ্গে কী করে হওয়া সম্ভব? নাকি, MBBS পাশ করার পরে আবার সর্বভারতীয় পরীক্ষা দিয়ে ডাক্তারি করার ছাড়পত্র পেতে হবে? সে তো আরও ভয়ংকর ব্যাপার হবে।
ঘ) রাজ্য সভায় DMK MP শ্রী টিরুপি শিবা প্রশ্ন করেন, কেউ প্রথমবার NEXT দিয়ে পাশ করলো। কিন্তু Post Graduate –এ র্যাঙ্কিং খারাপ থাকায়্য পরের বছর আবার পরীক্ষায় বস্লো র্যাঙ্কিং ভালো করার জন্য। দ্বিতীয়বার সে ফেল করলো, তাহলে MBBS ডিগ্রী থাকবে না থাকবে না? স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোনও সরাসরি উত্তর দেননি।
ঙ) MBBS পাশ করার পর এক বছর Internship বাধ্যতামূলক। বিভিন্ন বিভাগের কাজের সঙ্গে সরাসরি পরিচিত হওয়ার এই সুযোগটা ভবিষ্যতের Standard ও Basic Doctor তৈরী হওয়ার ক্ষেত্রে মেডিকেল ছাত্রদের প্রভূতভাবে সাহায্য করে। বস্তুতঃ মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় Internship -এর গুরুত্ব অপরিসীম। ফাইনাল বর্ষের পরীক্ষার সঙ্গেই পোস্ট গ্র্যাজুয়েটে প্রবেশের ছাড়পত্র পাওয়া গেলে ইন্টার্নশিপের ভবিষ্যৎ কী হবে? উঠেই যাবে? সেক্ষেত্রে সামগ্রিক (TOTAL) ডাক্তার তৈরীর কাজে পিছনের দিকেই হাঁটা হবে।
চ) বিভিন্ন রাজ্যের সরকারী চিকিৎসকদের জন্য পোস্ট গ্র্যাজুয়েটে আলাদা সংরক্ষণ আছে—যার জন্য অনেকেই সরকারী চাকুরিতে ঢোকে। NEXT –এর ফলে এই সংরক্ষণ তো সম্ভব নয়। ফলে, সরকারী সার্ভিসে চিকিৎসক প্রবেশ আরও কমতে বাধ্য।
ছ) ডাক্তারি ছাত্ররা ফেল করলে সাধারণতঃ ৩ মাস পরে Supplementary পরীক্ষা দেবার সুযোগ পায়। এক্ষেত্রে তার সুযোগ থাকছে না। ফলে, বেশ কিছু নবীন ডাক্তারের চিকিৎসা থেকে প্রবেশও বেশ কয়েক মাস পেছিয়ে যাচ্ছে—এটা সকলেরই ক্ষতি।
৬) ধারা নং 10. (i)–যেখানে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে Capitation Fee নিষিদ্ধ এবং ম্যানেজমেন্ট কোটা শতকরা ১৫ ভাগে সীমাবদ্ধ, সেখানে 10(i) ধারায়, বেসরকারী মেডিকেল কলেজের শতকরা ৫০ ভাগ সীটের ফী নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হয়েছে। তাহলে কী বাকী ৫০ ভাগ সীট নিলাম করে বিক্রী করা যাবে? রাজ্য সভায় এই প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, যেহেতু স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও রাজ্য – উভয়েরই অধীন, তাই বাকী ৫০ শতাংশ সীটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য। কমিশনের বাকী সমস্ত ক্ষেত্রেই রাজ্য প্রায় কেন্দ্রশাসিতই রইলো আর বেসরকারী মেডিকেল কলেজের ফী নির্ধারণেই রাজ্যের এক্তিয়ারের কথা মনে পড়লো – এটা সত্যিই অদ্ভুত নয় কী? দেখা যাক্ অবশেষে কী হয় –
৭) ধারা নং 50.1–প্রতি বছর কমিশন, হোমিওপ্যাথিক কাউন্সিল ও ভারতীয় চিকিৎসা বিদ্যার (আয়ুর্বেদ) কাউন্সিলের সঙ্গে বসবে পারস্পারিক আদান-প্রদানকে উৎসাহ দিতে। মনে রাখতে হবে, মিশ্র পাঠক্রম কিন্তু বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরী করতে পারে। পিছনের দরজা দিয়ে বিজ্ঞানের প্রাঙ্গণে যথেষ্ট প্রমাণিত নয় বা অপবিজ্ঞানের অনুপ্রবেশ করানোর ফল হতে পারে মারাত্মক।
8) ধারা নং 55.1 (a) & (b)–কেন্দ্রীয় সরকার কমিশনের কাজে সন্তুষ্ট না হলে, যে কোন সময়ে কমিশন ভেঙ্গে দিতে পারে। অর্থাৎ কমিশনের কাজের অগ্রাধিকার হলো কেন্দ্রীয় সরকারকে খুশী রাখা।
(চলবে)