◦ তোর মনে আছে কোথায় কোথায় লুকোতিস ?
◦ খিলখিল হাসির শব্দ।
◦ মনে থাকবে না! ও জিনিস ভোলার নয়। জলের ট্যাঙ্কের পিছনে, মনিকাকিমাদের বাগানে, পার্কে দোলনার সামনে লিলির ঝোপে।
◦ তাও খুঁজে খুঁজে ঠিক বের করে ফেলতাম
◦ সে আবার করবিনা! আচ্ছা শয়তান ছিলি তুই! প্রথম থেকেই কুমতলব
◦ অ্যাই, ফালতু বকিস না। তখন আমি জাস্ট। দশ বছরের নিষ্পাপ ছেলে
◦ হেল ইওর ইনোসেন্স। বদমাইশ ছিলি
◦ তুমিও কতো সরলমতি বালিকা ছিলে জানা আছে। চোখ মারতে শিখিয়েছিলি তুই। লুকিয়ে লিপস্টিক ঠোঁটে লাগিয়ে সানগ্লাস পরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কে ঢঙী পোজ দিতো?
◦ শোন, দশ বছরে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি পাকে। ন্যাচারাল ডাইভার্শন। তাও তো তখন ইন্টারনেট আসেনি। দু হাজার সালে প্রথম মোবাইল এল। আমরা তখন বারো।
◦ দ্যাটস নাইস। পাড়ায় প্রথম মোবাইল কিনছিলেন তোর বাবা। বাই দ্য ওয়ে কেমন আছেন উনি?
◦ মা মারা যাওয়ার পর থেকে শুধুই পার্টির কাজ। পুরোপুরি সমাজসেবা। রিটায়ার করতে আর দু বছর। অবশ্য আমার তাতে এখন কী যায় আসে! সারা জীবন মেয়ের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে গেল। আই জাস্ট ওয়ান্টেড হিজ কমপ্যানি, হিজ টাইম
◦ আবার দু:খ করছিস? বলেছি না, এসব নিয়ে ভাববিনা! সবকিছু তোর কন্ট্রোলে নেই, ছিলনা, থাকবেনা।
◦ আই নো। দূর থেকে সিমপ্যাথি দেখানো অনেক সহজ। বাবার সঙ্গে থাকলে বুঝতিস।
◦ তুই বিয়ে করলিনা বাবার জন্য! প্লিজ ডোন্ট ব্লেম ইয়ার। আমি তোর সব খবর রাখতাম পিকলুর মারফত।
◦ পার্সেনাল ইন্টারফেয়ার করতে একটা মিনিমাম সম্পর্ক লাগে সুমন্ত্র। জানিস যখন জিজ্ঞাসা করছিস কেন?
◦ আমিও ঝড়ের মুখে পড়েছিলাম। আমেরিকা দেশটাকে বাইরে থেকে স্বর্গ মনে হয়। এখানে এসে জীবনযুদ্ধ সাংঘাতিক। তুই হয়তো জানিসনা, আমি একটা সময় ট্যাক্সিও চালিয়েছি। বাড়িতে জানতো সফটওয়ার ইনিজিনিয়ারের চাকরি করি। এশিয়ার প্রচুর সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার এখানে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়ায়
◦ বিয়ে করলিনা কেন ক্যাটরিনাকে?
◦ ও চাইল না। এখানে লোকজন লিভ টুগেদারে অভ্যস্ত!
◦ সে তো খেলা! ইচ্ছে হলে থাকা, নয়তো চলে যাওয়া
◦ লুক, রিনি, আমাদের মহাভারতের সময়েও কিন্তু লিভ টুগেদার ছিল। জীবনটাই তো পেশেন্সের খেলা। বাবা কেমন আছে বললি না?
◦ আজ জ্বরটা নেই। কিন্তু শ্বাসকষ্ট আছে। ভেন্টিলেশনে দিতে হতে পারে। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে সুমন্ত্র। কাকারা আছে, মাসতুতো দাদারাও। কিন্তু …
◦ আর কতো অভিমান করে থাকবি বাবার উপর! এখনও জ্ঞান আছে যখন ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নে। এরপর যদি আরও খারাপ কন্ডিশন হয় এটুকুও চান্স পাবিনা রিনি
◦ একদম ঠিক। সেটাই ভাবছিলাম। তুই বলে দিলি। আসলে…
◦ কী আসলে? রিনি? চুপ কেন? বল
◦ নাহ
◦ একা হয়ে যাওয়ার ভয় পাচ্ছিস? জানিস, ছোটবেলায় হাইড অ্যান্ড সিক খেলার সময় যখন তুই হারিয়ে যেতিস, কিছুতেই খুঁজে পেতাম না, বেদম ভয় হত।
◦ ফালতু গুল দিসনা । মুড ভাল নেই।
◦ বিলিভ মি। বিশ্বাস করবি কিনা তোর মর্জি।
◦ সুমন্ত্র এতো বছর বাদে ইনস্টাগ্রামে তোকে খুঁজে বার করলাম আমি। বেকার ঢপ দিচ্ছিস কেন? ফ্লার্টিং একটা চমৎকার খেলা আমি জানি। আমার বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই।
◦ তুই এখন কোথায় রিনি?
◦ কোয়ারেন্টাইনে। বাবা করোনা পজিটিভ জানার পর থেকে পাড়ার সবাই আমাক বয়কট করেছে। কাকারা রেগুলার বাবার খোঁজখবর নিচ্ছে হসপিটালে। ভিডিও কনফারেন্স মারফত
◦ তুই একবার ভিডিও কলে কথা বলিস ওঁর সঙ্গে। আমাকে যেভাবে অ্যাভয়েড করেছিস, ফর গডস সেক ডোন্ট ডু দ্যাট
◦ আমি? তোকে?
◦ ছুঁতে দিয়েছিলি কখনও? ছোটবেলার ছোঁয়াছুয়ি খেলা বড় হয়ে একবারও খেলেছিলি? কতোদিন একসঙ্গে কাটিয়েছি, কফি হাউজ, ভিক্টোরিয়া, ময়দান। মনে করে দ্যাখ রিনি, একবার শুধু একটা চুমু ভিক্ষে করেছিলাম। তুই এতো পিউরিটান !
◦ চোদ্দ বছর ধরে কথাটা তোকে লুকিয়ে গেছিলাম। ইয়েস, ফোরটিন ইয়ার্স ব্যাক, হোয়েন আই ওয়াজ ইন এইট্টিন
◦ থামলি কেন? বল
◦ আমি এইচ আই ভি পজিটিভ। ব্লাড নিতে গিয়ে হয়েছিল। তোর মনে আছে নিশ্চয়ই আমি যেবার বাথরুমে পিছলে পড়ে মাথা ফাটিয়েছিলাম প্রচুর ব্লিডিং হয়েছিল। 
◦ আলবাত! সব মনে আছে। সেই স্মৃতিগুলোই তো সম্বল রিনি। আমাদের বন্ধুত্বের এপিটাফ।
◦ বিরাট নার্সিংহোম ছিল। ঝাঁ চকচকে। তোরা নিয়ে যাওয়ার পর ব্লাড দিয়েছিল আমাকে। বেশ কয়েক বোতল। প্রাণে বেঁচে গেলেও বুঝিনি যে ওই রক্ত থেকে ঢুকে পড়েছিল মারণ ভাইরাস।
◦ সে কী ?
◦ হ্যাঁ, কাউকেই কিছু জানাতে পারিনি। নার্সিংহোম প্রথমে খবরটা চেপে যাওয়ার জন্য ভয় দেখিয়েছিল । পরে বাবার পার্টি ফান্ডে কিছু টাকা খেসারত দিয়েছিল।
◦ বিয়েটা কেন করিনি নিশ্চয়ই বুঝলি এতক্ষণে। সুমন্ত্র?
◦ রিনি!
◦ বাবার সঙ্গে বিরোধ আরও বেড়েছিল এই কারনে। খবরটা লুকিয়ে বিয়ে দিতে চাইছিল। বাবার অসহায়তাও বুঝি। নিজের মেয়েকে কোন বাবা চায় একা রেখে যেতে?
◦ এইজন্য তুই ছুঁসনি আমায়? এতবড় খবরটা চেপে গিয়েছিস?
◦ আমি ভাল আছি সুমন্ত্র। ট্রিটমেন্ট চলছে। সহজে মরবনা। তবে এখন আমি সত্যিই অস্পৃশ্য।
◦ জানলা দিয়ে তাকিয়ে দ্যাখ একবার! মনিকাকিমাদের বাগানের পিছনে
◦ হোয়াট আ সারপ্রাইজ! অ্যাম আই ম্যাড! নাকি চোখে ভুল দেখছি! সুমন্ত্র তুই কীভাবে
◦ মার্চে এসেছিলাম দেশে। তিন সপ্তাহের জন্য। আর ফিরতে পারিনি। ইনফ্যাক্ট, ভাবছি আদৌ ফিরব কিনা।
◦ সুমন্ত্র, এখনই চলে যাসনা। একবার আমার জানলার সামনে আসবি? কতো বছর তোকে দেখিনি। আমি মাস্ক পরে আছি, ভয় নেই।
◦ তুই বেরিয়ে আয় রিনি। এই যে আমাদের ছোটবেলার মাঠ, গোলপোস্ট।
◦ তোর মাথা খারাপ? এখনই লোকজন চেঁচামেচি করবে! তাছাড়া, ভাইরাস আমার সর্বাঙ্গে। যে কোনো সময় আমাকেও কাবু করে ফেলতে পারে
◦ তুই বেরোবি রিনি?
◦ না।
◦ তাহলে আমি কিন্তু চেঁচাব। মাঠের মাঝখানে এসে একবার দাঁড়া আগের মতো। আকাশে শ্রাবণের জলভরা মেঘ। কতো ছোঁয়াছুঁয়ি খেলেছি দুজনে। আজ একবার, আবার।
◦ সুমন্ত্র প্লিজ, বোঝার চেষ্টা কর
◦ বন্ধুত্বের এপিটাফ হয়না রিনি। ভাইরাস মরে যাবে। ভালবাসা নয়।