অতিরিক্ত বুদ্ধিবৃত্তি আর তাত্ত্বিক জ্ঞান কি আমাদের মানুষ হিসেবে ভোঁতা করে দেয় আসলে? নিজস্ব রাজনৈতিক লাইনের বাইরে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে অনুভব করার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়? নাকি আমাদের চতুরতাকে এতটাই তীক্ষ্ণ করে তোলে যে সবকিছুকেই রাজনৈতিক অভিসন্ধির সোপান মনে হয়? পহেলগাঁওয়ের হত্যাকাণ্ডের পর গতকাল থেকে রাজনৈতিকভাবে অ্যাক্টিভ, সচেতন, বিরাট পড়াশোনা জানা বা বিভিন্ন দলের সমর্থক গোত্রের ব্যক্তিদের একটা বড় অংশের বক্তব্য পড়ে/ শুনে হতবাক হয়ে গেছি।
একদল এই দুর্যোগকে ‘সুযোগ’ হিসেবে লুফে নিয়ে নেমে পড়েছেন প্রাণপণে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানোর কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। “সেকুলার = ইসলামিক” সমীকরণকে প্রতিষ্ঠিত করার ‘খেলা’ও চলছে৷ আরেকদল এঁদের কাউন্টার করার অছিলায় বিভিন্নভাবে এই হত্যাকাণ্ডকে লঘু করার, এমনকি জাস্টিফাই করার চেষ্টায় মত্ত। তাঁদের কেউ কেউ এটাকে অপছন্দের রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ব্যবহার্য সুযোগ হিসেবে দেখছেন, কেউ বা এর বিরুদ্ধে যেকোনো প্রতিবাদকে হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডা বলে দাগিয়ে দেবার চেষ্টা করছেন।
আপাতদৃষ্টিতে এই দুই গোষ্ঠীকে পরস্পরের বিরোধী, প্রতিদ্বন্দ্বী, এমনকি শত্রুও মনে হতে পারে, কিন্তু বিগত বহু বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমার মনে হয়, এঁরা স্যাঙাত। মেরুকরণ কোম্পানির দুটো ডিপার্টমেন্টের চাকুরে। ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা একেবারে নষ্ট করে দেবার প্রোজেক্টে যৌথ উদ্যোগে কাজ করে চলেছেন।
সৌভাগ্যের কথা এই যে এর বাইরেও এখনো বহু মানুষকে দেখছি, যাঁরা ঘটনার অভিঘাতে বিপর্যস্ত, দুঃখিত। কেউ কেউ লজ্জিত (যদিও তাঁরা নিজেরা কোনো লজ্জাজনক কাজ করেননি)। অনেকে এখনো সুস্থ প্রতিরোধের এবং ভালো থাকার উপায় খুঁজছেন। এঁদের ভরসাতেই বেঁচে থাকা।