সন্তানের জন্মের পর মায়েদের মধ্যে বেশ কিছু মানসিক সমস্যা দেখা যেতে পারে। তিনটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল -পোস্ট পারটাম ব্লু (বেবি ব্লু), পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন, পোস্ট পারটাম সাইকোসিস।
বাচ্চার জন্ম হওয়ার পরবর্তী সাময়কালকে বলা হয় পোস্ট-পারটাম পিরিয়ড। এই সময় মায়েদের মধ্যে উদ্বিগ্নতা, অকারণে কান্না, খিটখিটে মেজাজ, অনিদ্রার, মন খারাপের কিছু লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়। এই ঘটনাকে বলা হয় “পোস্ট পারটাম ব্লু”। “পোস্ট পারটাম ব্লু (বেবি ব্লু)” সমস্যাটি প্রায় শতকরা আশি ভাগ মায়েদের মধ্যে দেখা যায়। বাচ্চা জন্মানোর চার-পাঁচ দিনের মাথায় এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজে থেকে ও পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে উপযুক্ত মানসিক সাহায্য, সমর্থন ও সহমর্মিতা পেলেই এই সমস্যা কেটে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওষুধের প্রয়োজন হয় না।
“পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন” সাধারণত দশ থেকে পনের শতাংশ মায়েদের মধ্যে দেখা যায়। এক্ষেত্রে মন খারাপের সাথে সাথে আরো কিছু সমস্যা দেখা দেয় যেমন -শরীরে শক্তি কমে যাওয়া, আগে যে সমস্ত কাজ করতে ভালো লাগতো সেগুলোতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, মনোযোগের অভাব, ভুলে যাওয়া, অল্পতেই রেগে যাওয়া, নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলা, নিজেকে দোষী মনে হওয়া, আত্মহত্যার চিন্তা বা চেষ্টা করা, ঘুম কমে বা বেড়ে যাওয়া, খিদে কমে বা বেড়ে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি। ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই ওই মায়ের পক্ষে বাচ্চার যত্ন নেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে।
মন খারাপ লাগলে সেটা নিয়ে নিকট আত্মীয়ের সাথে আলোচনা করা, খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো ভাবে করা, প্রতিদিন অন্তত আধ ঘন্টা করে বিভিন্ন ফিজিকাল এক্টিভিটিতে অংশগ্রহণ করা, ঠিক মতো ঘুমোন ও যে কোন ধরনের নেশা থেকে বিরত থাকা এই সময় খুব দরকার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির লোকজন, আত্মীয়স্বজনের ঠিকমতো সহযোগিতা ও সহমর্মিতা পেলে ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত হওয়া যায়।কিন্তু যদি মন খারাপ এতটাই বেশি হয় যে আপনি কোন কাজ করতে পারছেন না, সঠিক ভাবে বাচ্চার যত্ন নিতে পারছেন না, সংসারের কাজকর্মে ঠিকমতো অংশগ্রহণ করতে পারছেন না, আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসছে বা চেষ্টা করে বসেছেন- তখন সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নিন।
এখন মানসিক রোগের চিকিৎসাব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। বর্তমানে ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় এস এস আর আই (SSRI) গোত্রের ওষুধ খুব ব্যবহৃত হয়, যেগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুবই কম।
“পোস্ট পারটাম সাইকোসিস” একটি বিরল সমস্যা।গবেষণায় দেখা গেছে ০.১-০.২ শতাংশ মায়েদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়। এই রোগে রোগীর মনে কিছু বদ্ধমূল কিন্তু ভ্রান্ত ধারণা (ডিলিউশন) জন্মাতে পারে। যেমন- কেউ তাঁর ক্ষতি করার চেষ্টা করছে বা অন্য কোনো ভাবে তাঁকে হেনস্থা করবার চেষ্টা করছে ইত্যাদি। এছাড়া এই রোগে রোগীর বিভিন্ন ধরনের অলীক অনুভূতি (হ্যালুসিনেশান) হয়। যেমন রোগী কানে এমন শব্দ শুনছেন, অথবা নাকে এমন গন্ধ পাচ্ছেন, অথবা চোখে এমন কিছু দেখতে পাচ্ছেন অথবা এমন কোনো স্পর্শ পাচ্ছেন, যেগুলির কোনো বাস্তবিক ভিত্তি নেই। এই জাতীয় রোগী অনেক সময় নিজের বাচ্চাকে নিজের বাচ্চা বলে মনে করেন না এবং অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চার ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। “পোস্ট পারটাম সাইকোসিস”একটি আপদকালীন সমস্যা। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করা দরকার। প্রয়োজনে বাচ্চাকে মায়ের থেকে দূরে রাখতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এন্টিসাইকোটিক ও মুড স্টেবিলাইজার গোত্রের ওষুধ ব্যবহৃত হয়। অনেক ক্ষেত্রে ই সি টি (ইলেক্ট্রো কনভালসিভ থেরাপি) ব্যবহৃত হয়।
আমি মনোরোগ ডাক্তার দেখাতে চাই