বাজারে চলতে থাকা কালোবাজারির বিরুদ্ধে ১৬ মার্চ, ২০২০ ঘরোয়াভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানানোর একটি ফর্মুলা দিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম। অনেকেই শেয়ার করেন। তারপর ডক্টরস ডায়লগ সেটিকে একটি প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশ করে। বেশ কিছু ওয়েব পোর্টাল ও সংবাদ মাধ্যম যেমন নিউজ রিল, বেঙ্গল মিরর সেটিকে প্রতিবেদন হিসেবে রাখে।
ভালো লাগছে এটা দেখে যে চারিদিকে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদ্যোগ নিচ্ছেন এই কালো বাজারির বিরুদ্ধে ঘরোয়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানিয়ে। ধন্যবাদ সকলকে, বিশেষত সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, এডুকেশন ফর অল – যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের। ধন্যবাদ আরও ছোট বড় সমস্ত সংগঠন কে যারা এই উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন।
এই কদিন প্রচুর ফোন কল ও মেসেজ পেয়েছি যার উত্তর এখানে প্রশ্ন উত্তর হিসেবে রাখতে চাই। সাথে কিছু বক্তব্য…
প্রশ্ন ১. আপনি যে সেনিটাইজার বানাতে বলছেন সেটি ক্ষতিকর হয়ে উঠবে না তো? তার কোন সার্টিফিকেট আপনি দিতে পারবেন?
উ: কতটা ক্ষতি? যাই হয়ে যাক সেটা করোনা আক্রমণের থেকে অনেক অনেক কম ক্ষতিকর। এটি আর বাকি পাঁচটা ওষুধের মতো শরীরে প্রবেশ করছে না, তবে হ্যাঁ, অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে হাতের চামড়া খসখসে হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেটিও করোনার করালগ্রাসের থেকে অনেক কম ক্ষতিকর।
প্রশ্ন ২. দাদা সেফ তো?
উ: হ্যাঁ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO নির্ধারিত ফর্মুলেশন মোতাবেক বানানো হচ্ছে।
প্রশ্ন ৩. লেমন অয়েলটা কতটা দেবো?
উ: আগের প্রতিবেদনে লিখেছি, এসেনশিয়াল অয়েল-এর জীবাণুনাশে কোনো ভূমিকা নেই। এই চরম সময়ে এগুলির ব্যবহার অপ্রয়োজনীয়। এছাড়াও WHO নির্দেশিকা অনুযায়ী এই ধরনের অন্যান্য জিনিসের ব্যবহার মিশ্রণটির জীবাণুনাশক ক্ষমতাকে কিছুটা হলেও প্রভাবিত করবে।
প্রশ্ন ৪. এর থেকে সহজ কোন উপায় নেই?
উ: না নেই, থাকলেও সেটা করোনা এবং তার সাথে সাথে আরও অনেক ভাইরাস প্রতিরোধে অক্ষম।
প্রশ্ন ৫. লেমন অয়েল নেই… নারকেল তেল দিলে হবে না?
উ: তিন নম্বর প্রশ্নের উত্তর আবার পড়ুন।
প্রশ্ন ৬. বাজারে দেখলাম নীল বা লাল রঙের স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে… ওগুলো কি বেশি সক্রিয়?
উ: একেবারেই না, বরং ওগুলো কিছু ক্ষেত্রে কম সক্রিয়। আর এই চরম সময়ে প্রচুর নকল স্যানিটাইজারও বাজারে এসেছে।
প্রশ্ন ৭. মিথিলিন ব্লু মেশাবো? বেশ একটু নীলচে রং আসবে…
উ: একেবারেই না।
প্রশ্ন ৮. হলুদ গুঁড়ো বা কাঁচা হলুদ মেশানো যাবে?
উ: না, এটি তরকারি না। স্যানিটাইজার। শুধু হলুদ না, পিয়াজ রসুন আদা কিছুই মেশাবেন না।
যে ফর্মুলাটি আপনাদের জানানো হয়েছে, সেটি WHO দ্বারা স্বীকৃত। সেটা মানার অনুরোধ রইলো।
আপাতত যতগুলি প্রশ্ন মাথায় আছে সেগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
মনে রাখবেন, সুস্থ এবং সুন্দর মন, সাথে সুষ্ঠু জীবনযাপন সকল রোগ প্রতিরোধের প্রথম উপায়। অনাক্রম্যতা প্রতিটি রোগের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট ব্যারিকেড যা মানুষ অর্জন করে প্রকৃতিগতভাবে। তাই ভয় পাবেন না, অযথা আতঙ্কিত হবেন না এবং আতঙ্ক ও সাথে সাথে গুজব ছড়াবেন না। নিজের চারপাশটা পরিষ্কার রাখুন। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে মানুষের সাথে মিশুন। মাথায় রাখবেন, করোনা আক্রমণের থেকেও আমাদের দেশ অনেক ভয়ংকর ভয়ংকর রোগের আক্রমণের শিকার, আমরা সেদিকে অনেক কম নজর দিই। তাই আতঙ্কিত না হয়ে নিজের ও আশেপাশের মানুষজনের যত্ন নিন। মনের যত্ন নিন।