৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের শুনানির সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরে আসার জন্য কোর্টের নির্দেশ জারি করার জন্য প্রার্থনা করা হতে থাকে। কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই দাবি করা হল গত একমাসে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৩জন চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন চিকিৎসক দের কর্মবিরতির জন্য।
অন্যান্য পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এই কর্মবিরতিতে শুধুমাত্র সরকারি মেডিকেল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকরা। সিনিয়র চিকিৎসকরা কোন কর্মবিরতি করেছেন না। রাজ্যের অন্যান্য সব সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পূর্ণ বিঘ্নিত হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। তবু সরকারি পক্ষের আইনজীবী চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আদালতের নির্দেশ জারির আবেদন করতে থাকেন। এই আন্দোলনের সময় পুলিশকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছে, তাদের রক্ত ঝরছে এসব কথা এমন ভাবে উপস্থাপিত করা হয় যাতে মনে হয় চিকিৎসকদের আন্দোলনের সময় পুলিশকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে বিভ্রান্ত করার ও তথ্য প্রমাণ ছাড়াই বক্তব্য পেশ করা হয়। সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কোন সময়সীমা বিষয়ে বক্তব্য রাজ্য সরকার বক্তব্য রাখেন নি।
সুপ্রিম কোর্ট কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে চিকিৎসকদের কাজে ফিরতে বললেন। কেবলমাত্র এযাবৎ কর্মবিরতি করা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না এইটুকু সরকারকে বলা হয়েছে আদালতের নির্দেশে। এরপর কর্মবিরতি প্রত্যাহার না করা হলে রাজ্য সরকার তাদের বিবেচনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।
আমরা বিস্মিত হলাম।
অন্যদিকে সি বি আই তদন্তের যতটুকু আদালতের সামনে আনা হল তার বিরোধিতা করার মত তথ্য প্রমাণ সরকারি আইনজীবী তো হাজির করা দূরে থাক তাকে দৃশ্যতই অপ্রস্তুত হতে দেখা গেছে।
সব মিলিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন করে যে ভাবেই হোক জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ জারি করার জন্য অতিরিক্ত আগ্ৰহ ও ধর্ষণ খুন-এর তদন্তের বিষয়ে সরকারি গাফিলতি তথ্যপ্রমাণ বিকৃতি ও লোপাট করার বিষয়ে সরকারি প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের কোনও বক্তব্য, ব্যাখ্যা তাঁরা দিতে পারলেন না ও তার জন্য সরকারের আদৌ কোন রকম আগ্ৰহ আছে সেই বিষয়টি অনুপস্থিত ছিল। আমাদের অপেক্ষায় থাকতেই হবে সি বি আই তদন্তের রিপোর্ট ও সেই প্রসঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের পদক্ষেপ ও নির্দেশনার উপর। অপেক্ষায় থাকতে হবে সব স্তরের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারের কাজ নিয়ে কি পদক্ষেপ নেয় তার দিকে। শুধুমাত্র সরকারি প্রতিশ্রুতি পেলেই যে সেই প্রতিশ্রুতি পালন করা হয় না তার অজস্র উদাহরণ আছে।
শুনানি চলাকালে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয় যখন তখন যেখানে সেখানে মানুষজন মিছিল করছে তার জন্য সরকারের আপত্তির কথা ও সেই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেতে সরকারকে ক্ষমতা দেওয়ার জন্য। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করে নি। সংবিধানে ১৯ ধারা অনুযায়ী মত প্রকাশের স্বাধীনতা মিটিং মিছিল সমাবেশ করে কোনকিছুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মৌলিক অধিকারকে হরণ করার জন্য যে সরকার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আবেদন করতে পারে সেটা থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার বিষয়ে বর্তমান রাজ্য সরকারের মনোভাব ও নীতি।
প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে চিরতরে স্তব্ধ করার কোন প্রক্রিয়া কোন দেশের কোন শাসক আবিষ্কার করতে পারে নি, পারবেও না।