রাতদখল ঐক্যমঞ্চ
প্রেস বিবৃতি
২০/১/২০২৫
রাত দখল (নারী-ট্রান্স-ক্যুইয়ার) ঐক্যমঞ্চ আর.জি.কর ধর্ষণ ও খুন মামলার ১৮/১/২০২৫ ও ২০/১/২০২৫ তারিখে শিয়ালদা কোর্টের রায়কে আদৌ সন্তোষজনক মনে করছে না।
আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে, আমাদের লিঙ্গরাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তির প্রাবল্যের চেয়ে শাস্তির নিশ্চয়তাকে অধিক কার্যকরী মনে করি। তথ্য বলছে, ভারতে নথিভুক্ত ধর্ষণের ক্ষেত্রে বড়জোর ২৬-২৮% ক্ষেত্রে সাজা হয়। এ ছাড়া, অ-নথিভুক্ত যৌন নির্যাতন সীমাহীন। নথিভুক্ত ধর্ষণের মধ্যে সাজার হার এত কম, অথচ, দেশের ধর্ষণ আইন অনুযায়ী সাজা হওয়ার কথা প্রতিজন ধর্ষকের, প্রতিজন যৌন নির্যাতক তথা প্রতিজন প্রমাণ লোপাটকারীর।
আর.জি.করের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তদন্ত ও বিচার পদ্ধতির ধারাবাহিক পদ্ধতি অনুপুঙ্খ বিচার করনে আমরা বুঝতে পারি, শুধুমাত্র সঞ্জয় রায়ের কোনো শাস্তি এই মামলার প্রতি আদৌ সুবিচার করে না।
আমরা জানি না, আরও কেউ কেউ ধর্ষক কিনা, খুনী কিনা। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ বলে, রাষ্ট্রীয় মদতে প্রমাণ লোপাটের ঘটনা এক্ষেত্রে ঘটেছে। অথচ, আর.জি.করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে জনরোষের চাপে সি বি আই ধরতে বাধ্য হলেও, এখন তারা জামিনে মুক্ত, কারণ সি বি আই কোনো চার্জশিট জমা করেনি। ঘটনার পরদিন ভোরবেলায় যাদের অপ্রত্যাশিতভাবে অকুস্থনে দেখা গিয়েছিল, সেই বিরূপাক্ষ বিশ্বাস, অভীক দে-র মতো প্রভাবশালী ডাক্তাররাও স্বমহিমায় বিরাজ করছিলেন। অথচ, অনেকে মনে করছেন, তাঁরাও প্রমাণ লোপাটে ভূমিকা নিয়েছিলেন। আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা, পোস্ট মর্টেমের আগে বডি বের করে নিতে যাওয়ার চেষ্টা, দেহ তড়িঘড়ি দাহ করা, বাবা-মাকে ডেকে পাঠিয়েও সঠিক তথ্য না দেওয়া- কোনো কিছুরই ব্যাখ্যা আমরা পাইনি। এই সমস্ত প্রক্রিয়া ও পরিকল্পনার পিছনে যাদের মদত ছিল, তাদের বিচারপদ্ধতির আওতায় আনা হয়নি।
আমরা, সাধারণ মেয়ে ও প্রান্তিক লিঙ্গযৌনতার মানুষরা মনে করছি, এই রায় আমাদের ক্ষেত্রে ভয়ানক সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করবে। ধর্ষণ ও প্রমাণ লোপাটকারী এর ফলে ভাববে, যৌননির্যাতনমূলক অপরাধ করে, বা প্রমাণ লোপাট করেও ছাড়া পাওয়াই স্বাভাবিক। মেয়েদের, প্রান্তিক নিঙ্গযৌনতার মানুষের সম্মান, মর্যাদা ও জীবন যেন মূল্যহীন! তাদের সঙ্গে চরমতম অপরাধ করলেও নির্যাতিত সুবিচার পাবে না, এটা যেন কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার, উভয়ের পক্ষেই স্বাভাবিক। এই ঘটনাপ্রবাহ সার্বিক ভাবে ধর্ষণ সংস্কৃতিকেই দৃঢ় করবে।
রাষ্ট্রব্যবস্থা যখন ধর্ষককে আড়াল করে, তখন লিঙ্গরাজনৈতিক আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করাই আমাদের পণ। আমরা এই লক্ষ্য অটল থাকব।