ডিসেম্বরের ঠান্ডায় করোনা ভাইরাস লেপ মুড়ি দিয়ে বিছানার এক কোনে গুটিশুঁটি মেরে শুয়েছিল। টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত ঘরে ঢুকে করোনা ভাইরাসকে ডেকে তুলেছে।
‘দিলে তো কাঁচা ঘুমটা ভাঙিয়ে!’
‘সারা পৃথিবীতে ঢি ঢি পড়ে গেছে তোমার মাসতুতো ভাই, থুড়ি, নতুন মিউটেটেড স্ট্রেন নিয়ে, সব দেশ ভয়ে বিলেতের ফ্লাইট ক্যানসেল করে দিচ্ছে- আর তুমি লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছো?’
‘এখানে আমার দিন এবার শেষ। তাই হতাশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’
‘সে কি কথা?’
‘চারদিকে যে হারে মিটিং, মিছিল, উৎসব, খেলা, পিকনিক, দলবদল, মানুষ বেচাকেনা চলছে- তাতে বুঝলাম যে আমার আর কোনো ভবিষ্যত নেই।’
‘মানে? তুমি তাহলে আর বেরোচ্ছ না?’
‘আমাকে কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না! ক্রমশঃ হতাশ হয়ে পড়ছি।’
‘আরে এত হতাশ হয়ে পড়লে চলবে? চলো আমাদের ষ্টুডিওতে। এই বিষয়টা নিয়ে একটা পৌনে-ঘন্টা খানেক হয়ে যাক!’
‘না না, ওসব গট-আপ কলতলার ঝগড়ায় আমি নেই।’
‘তাহলে একবার পার্ক ষ্ট্রীটে একটা চক্কর মেরে আসি চল। ইচ্ছে হলে একটু অমৃতসুধাও চেখে দেখতে পারো।’
একথা শুনে করোনা ভাইরাস রীতিমতো শিউরে উঠল।
‘বলো কি! পার্ক ষ্ট্রীটের ওই হুজুগে ভীড়ের মধ্যে কি চিঁড়ে চ্যাপ্টা হতে যাব? তাছাড়া চারদিকে যেভাবে চুরি-চামারি শুরু হয়েছে, তাতে আমার ছাল-চামড়া, জিনোম- সব চুরি যেতে পারে ওখানে।’
‘চুরি? সে কি? কোথায়?’
‘কোন জগতে আছো? টাকা চুরি, বাইক চুরি, এমেলে চুরির পর এবার বৌ চুরি শুরু হয়েছে। দেখছ না?’
‘আরে ছাড়ো ওসব। ভাগ্যবানের বৌ পালায় জানো না?
আচ্ছা ঠিক আছে, এক কাজ করো…..সাদা চুল-দাড়ি-গোঁফ লাগিয়ে নাও। সঙ্গে হাল্কা একটু মেকাপ। তারপর লাল জোব্বা পরলে সান্তা, আর কালো জোব্বা পরলে…..কেল্লা ফতে। কেউ আর তোমাকে ভাইরাস বলে চিনতেই পারবে না। এমন কি পায়ে লুটিয়ে পড়তেও পারে!’
করোনা ভাইরাসের চোখদুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
‘সান্তাক্লজ সেজে অভিনয় করতে বলছ?’
‘আবার কি? সবই তো অভিনয়!’
‘আচ্ছা, তাহলে একটা ভাল মেকাপ আর্টিষ্ট, আর একটা ফোটোগ্রাফার জোগাড় করো।’
সাংবাদিক এবার ফটোগ্রাফার আর মেক আপ আর্টিষ্ট জোগাড় করতে চলল।